সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর্ব এবং তার পরে স্বাভাবিক নিয়মেই মায়েদের শরীরে পরিবর্তন আসে। যা কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো আবার আগের অবস্থায় না-ও ফিরতে পারে। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ওই পরিবর্তন স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গীতেই দেখে সমাজ। মায়ের শরীরে বাড়তি মেদকে বরং ‘সুখী চেহারা’ হিসাবেই দেখা হয়। কিন্তু অভিনেত্রীরা মা হওয়ার পরে ওই একই সমাজ তাঁদের শরীরে জমা বাড়তি মেদকে সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে যখন অভিনেত্রীরা প্রকাশ্যে আসেন, তখন তাঁদের শরীরের মেদ বাহুল্যকে দেখা হয় তাঁর কাজের প্রতি, তাঁদের দর্শকের প্রতি অবহেলা হিসাবে। কারণ অভিনেত্রীরা তন্বী হবেন, তাঁদের বালু ঘড়ির মতো চেহারা হবে, এমন একটি ধারণাকে মনে মনে লালন করে সমাজ। বলিউডের অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর বলছেন, ‘‘সেটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। একেবারেই করা উচিত নয়। কারণ, সমাজের এই মনোভাবের প্রভাব পড়ে মা হওয়া অভিনেত্রীর শরীর এবং মনের উপরে। তাঁরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হন। ফলে দ্রুত সুস্থও হতে পারেন না।’’

স্বরার মতে, সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে প্রত্যেক মায়ের একটা নতুন জীবন শুরু হয়। ছবি: সংগৃহীত।
স্বরা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। তার পর থেকে এক বছর পরেও আগের চেহারায় ফেরেননি। তা নিয়ে তাঁকে যে কথা শুনতে হয়, তা জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে। স্বরা বলেছেন, ‘‘আমাকে নিয়ে বহুবার বহু সমালোচনা হয়েছে। মাতৃত্বের পর আমার চেহারা নিয়েও হয়েছে। কিন্তু আমি শুধু আমার কথা আলাদা করে কী বলব! সমাজ তো ঐশ্বর্য রাই বচ্চনকেও ছাড়েনি!’’ আরাধ্যার জন্মের পরে ঐশ্বর্যের চেহারায় স্থূলত্ব নিয়ে সমালোচকেরা বহু নিন্দা করেছেন। সেই সূত্র ধরে কান চলচ্চিত্রোৎসবে পরা ঐশ্বর্যের পোশাক এবং সাজগোজ নিয়েও হয়েছে সমালোচনা। তারই জের টেনে স্বরা বলেছেন, ‘‘ঐশ্বর্য তো বলিউডের অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম সুন্দরী। তাঁকে কি কম কথা শুনতে হয়েছে! তাঁর অদ্ভুত সব ছবি দিয়ে কী ভাবে সমালোচনা করা হয়েছে সর্বত্র! ও ভাবে সমালোচনা হলে সুস্থ মানুষেরও রেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঐশ্বর্য অত্যন্ত ক্ষমাসুন্দর মনোভাব নিয়ে সব সামলেছেন। সবাই কিন্তু সেটা পারেন না। অনেকেই ওই সমালোচনা শুনে খারাপ থাকেন। ’’
আরও পড়ুন:
স্বরার মতে, সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে প্রত্যেক মায়ের একটা নতুন জীবন শুরু হয়। তা তিনি সাধারণ মানুষ হোন বা তারকা বা অভিনেত্রী— সবাইকেই সেই শারীরিক, মানসিক এবং পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তার পাশাপাশিই, সুস্থ হওয়ার, সেরে ওঠার একটা প্রক্রিয়াও চলতে থাকে। ওই কঠিন সময় যদি বাইরের দুনিয়াও বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ায়, তবে মায়েদের সেরে ওঠার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। স্বরা ওই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘আমার মনে আছে, ঐশ্বর্য বলেছিলেন, ‘আমি আমার সন্তানের সঙ্গে খুব সুন্দর সময় কাটাচ্ছিলাম। অন্য কিছু নিয়ে ভাবিনি।’ খুব সুন্দর ভাবে সমস্ত সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন তিনি। তবে সবাই তো সেটা পারে না।’’
স্বরার সঙ্গে সহমত মনোবিদ অঞ্জলি গুরসাহানেও। তিনি বলছেন, ‘‘সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে মায়েদের অনেকের শরীরে স্ট্রেচ মার্ক তৈরি হয়। কারও ওজন বাড়ে। কারও চামড়া ঝুলে পড়ে। তা নিয়ে তাঁরা নিজেরাই মানসিক চাপে থাকেন। তার উপরে তাঁদের শরীর নিয়েও যদি মন্তব্য করা হয়, তবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাতে তাঁদের ভাল হয়ে ওঠা ব্যাহত হয়।’’