এখনকার শিশুরা মোবাইল ছাড়া ভাবতেই পারে না। অতি অল্প বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের মোবাইল আসক্তি নিয়ে উদ্বেগের ছবিটা বড় স্পষ্ট। এই প্রবণতা আরও গতি পায় অতিমারি-উত্তর পর্বে। আর এখন মোবাইল জীবনের সঙ্গে এতটাই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে, তার আসক্তি থেকে শিশুদের সরিয়ে আনার কাজটা বড়ই কঠিন। অত্যধিক মোবাইল ব্যবহারের কারণে শরীর-মন-জীবন পাল্টে যাচ্ছে বিবিধ স্তরে, এবং স্বভাবতই শিশু-কিশোরদের উপরে তার প্রভাব আরও বেশি। তাদের লেখাপড়ায় প্রভাব ফেলছে মোবাইল-আসক্তি, একই ভঙ্গিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে মজে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শরীর। বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে চারপাশের জগতের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গেও। অন্য দিকে, সাইবার অপরাধের জগৎও প্রভাব ফেলছে তাদের অপরিণতমনস্ক জীবনে। সব মিলিয়েই চিন্তার কারণ বাড়ছে।
মোবাইলের প্রতি ছোটদের সীমাহীন আকর্ষণ এক দিনে যাওয়ার নয়। বকাবকি করে বা বুঝিয়েও তেমন লাভ হবে না। এতে শিশুর জেদ আরও বেড়ে যাবে। তাই শাসনে নয়, বরং কৌশল করেই এই আসক্তি কাটানোর চেষ্টা করতে হবে অভিভাবকদের। তার জন্য কিছু মজার খেলা ও সৃজনশীল কাজ শিখিয়ে দিন। এমন ভাবে শিশুকে অভ্যাস করানোর চেষ্টা করতে হবে, যাতে বেশি সময়টা সেই কাজেই মগ্ন হয়ে থাকে।
রং নিয়ে খেলা
রঙের জগতের সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দিন। খুব ছোটরা আঙুলে রং মেখে কাগজে নানা রকম ছাপ দিতে পারে। তা দিয়েই শুরু করুন। রংপেনসিল, জলরং কিনে রাখুন। নিজের মনের মতো করে কাগজে আঁকিবুকি কাটতে দিন। ছবি এঁকে ওদের রং দিয়ে ভরাট করতে বলুন। কোনটিতে কী রং হবে, কোন রঙের কী নাম, তা শেখান। শিখতে শুরু করলে ক্যানভাস কিনে দিন। শিশুর আঁকা ছবি বাঁধিয়ে রাখুন। এতে তার উৎসাহ বাড়বে। নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দ পাবে।
আরও পড়ুন:
কাউন্টিং গেম
পুঁতি লাগানো বা মালা গাঁথার মতো কিছু হাতে ধরিয়ে গুনে গুনে গেঁথে ফেলতে বলুন। এতে গুনতেও শিখবে। আবার হাতের জোরও বাড়বে। তবে খুব ছোট পুঁতি না দিয়ে একটু বড় পুঁতি দিন। নিজের সামনে বসে মালা গাঁথান। কারণ অনেক শিশুরই ছোট জিনিস মুখে পুরে দেওয়ার প্রবণতা থাকে।
পেপার আর্ট
কাগজ মুড়ে তাতে রং করে নানা রকম জিনিস বানাতে বলুন। কাগজ কেটে ফুল, লতাপাতা, পাখি, গাছ, প্লেন যা খুশি বানাক। রঙিন কাগজ, পিচবোর্ডও দিতে পারেন। ভাল কিছু তৈরি করলে তা ঘরে সাজিয়ে রাখুন। ছোটদের নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন, কে কত ভাল পেপার আর্ট করতে পারে। এতে ছোটদের উৎসাহ বাড়বে। ওই সময়টাতে মোবাইল ভুলে থাকবে।
ম্যাপ পয়েন্টিং
ছুটির দিন সকালে একটা গ্লোব বা ম্যাপ নিয়ে বসে পড়তে পারেন সন্তানের সঙ্গে। এক একটি দেশের নাম তাকে খুঁজে বার করতে বলুন। আর সেটা কোন মহাদেশে, সেটাও দেখাতে বলুন। এর থেকে সহজেই ভূগোলে তার দক্ষতা বাড়বে। পর্যবেক্ষণ শক্তিও বাড়বে। ম্যাপ এঁকে তাতে নানা জায়গা চিহ্নিত করতে বলুন, ম্যাপে রং করাও শেখান।
অঙ্কের ধাঁধা
অঙ্কের ধাঁধা তৈরি করে সন্তানকে বলুন সেই ধাঁধার উত্তর দিতে। এতে ওর যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ সহজ ও অনেক পোক্ত হবে। মেন্টাল ম্যাথের বই কিনে দিতে পারেন। দোকান-বাজারের বিলে টাকা মেটানোর সময়ে সন্তানের হাতে টাকা দিন। ওকেই বলুন, হিসেব করে টাকা ফেরত আনতে। এতে কিন্তু ওর দায়িত্ব বাড়বে, আবার হিসেব করতেও শিখবে।