সন্তানকে মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত করে তুলতে চান? সন্তান আপনার কথা শুনে চলবে, সংযত আচরণ করবে, দায়িত্ব নিতেও শিখবে— এ সবও নিশ্চয়ই চান। তা হলে নিজেদের আচার-আচরণেও বদল আনা জরুরি। সকালে সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর আগে ঠিক কেমন থাকে আপনার মেজাজ, তা-ও কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে। দিনের শুরুটা যদি সন্তানের সঙ্গে ভাল করে কাটাতে পারেন, তা হলে সারা দিনটা ভাল করে কাটানোর উৎসাহ পাবে শিশু। মনোবিদেরা তেমনই বলেন।
সকালের কোন কোন কাজ সন্তানের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে—
সন্তানকে কতটা শাসন করবেন আর কতটা সোহাগে রাখবেন, তা নির্ভর করে বাবা-মায়ের উপরেই। মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মত, সকাল থেকেই যদি বাড়ির পরিবেশ অশান্ত থাকে, ঝগড়া-ঝামেলা চলতে থাকে বা শিশুর উপর চিৎকার-চেঁচামেচি করেন, তা হলে কিন্তু ওদের ভয় আর উদ্বেগ বাড়বে। স্কুলে পড়াশোনা তো ঠিকমতো হবেই না, আপনাদের উপর থেকে ভরসা আর বিশ্বাসটুকুও চলে যেতে থাকবে।
শিশুকে কি সব সময়েই নির্দেশের ভঙ্গিতে কথা বলেন? জোরে কথা বলা বা চেঁচিয়ে নির্দেশ দিলে শিশুরা অনেক সময়েই বুঝতে পারে না। আতঙ্ক বা ভয়ও চেপে বসে তাদের মনে। তখন কথা শোনার প্রবৃত্তি হারিয়ে ফেলে তারা। শিশুকে কোনও নির্দেশ দিতে হলে খেলার ছলে বলুন, অথবা কিছু বোঝাতে হলে গল্পের মতো বোঝান। চেঁচামেচি করে নয়।
আরও পড়ুন:
সকালে উঠেই সন্তানের কাছে জেনে নিন সে সারা দিন কী করবে, স্কুলে কোন কোন ক্লাস রয়েছে, পড়ার কোন বিষয়টি নিয়ে তার ভয় রয়েছে বা বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন। সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তার কথা শুনতেও হবে। মনোবিদের পরামর্শ, শিশু যদি দোষও করে তা হলেও তার যুক্তিগুলি শুনুন। তা হলেই তাকে সঠিক পথে আনার রাস্তা তৈরি হবে। কোনটি ঠিক আর কোনটি নয়, বুঝিয়ে বলতে পারবেন।
পড়াশোনা হোক বা অন্য কারণ, ক্রমাগত বকাবকি বা মারধরে শিশুর মনে প্রভাব পড়ে। স্কুলে যাওয়ার আগে বকাবকি বা মারধর করলে অথবা কটু কথা বললে তার খুব খারাপ প্রভাব পড়বে খুদের মনে। এতে মনঃসংযোগ নষ্ট হবে, স্কুলে গিয়ে সে অন্যের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করবে।
কখনওই স্কুলে যাওয়ার আগে অন্য কারও সঙ্গে শিশুর তুলনা টেনে কথা বলবেন না। বাবা-মায়ের প্রত্যাশাপূরণের চাপ, বকাবকি, শাস্তির ভয় শিশুমনে গভীর রেখাপাত করতে পারে। এতে শিশুর আপনার প্রতিও বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে। আরও বেশি জেদি হয়ে উঠবে। বকুনির ভয়ে মিথ্যাও বলতে শুরু করবে।
শিশুর মানসিক বিকাশে সবচেয়ে বেশি কার্যকর মা-বাবার সঙ্গ। তাকে সক্রিয় ও চটপটে করে তুলতে ঘন ঘন তার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। তাকে পর্যাপ্ত সঙ্গ দিন। তা হলেই তার বিকাশ সব দিক থেকেই ভাল হবে।