ভালবাসার মানুষটিকে সবচেয়ে ভাল চেনেন আপনিই, এমন মনে হতেই পারে। কিন্তু বিয়ের সম্পর্কে বাঁধা পড়ার আগে পাত্র-পাত্রীর পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বহু মা-বাবাই। পাত্র-পাত্রী স্বনির্ভর, খ্যাতনামী, এমনকি তারকা হলেও যে সেই ভাবনা বদলে যায় না, তা জানা গেল আইপিএল দল লখনউ সুপার জায়ান্টের মেন্টর, প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার জাহির খান ও তাঁর স্ত্রী ‘চাক দে! ইন্ডিয়া’ খ্যাত অভিনেত্রী তথা প্রাক্তন জাতীয় স্তরের ফিল্ড হকি খেলোয়াড় সাগরিকা ঘাটগের গল্পে।
বিয়ের আট বছর পরে সদ্য পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই দম্পতি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সাগরিকা জানিয়েছেন, বিয়ের আগে প্রথম সাক্ষাতেই ‘পাত্র’ জাহিরের ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’ করেছিলেন তাঁর বাবা।

পুত্রসন্তানের জন্মের পরে এই ছবিটি পোস্ট করেছেন জাহির খান এবং সাগরিকা ঘাটগে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
২০১৭ সালের নভেম্বরে বিয়ে হয় জাহির আর সাগরিকার। তত দিনে ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন জাহির। যদিও আইপিএল খেলছেন পুরোদমে। সাগরিকা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটতারকা যুবরাজ সিংহ তাঁর বিয়েতে বন্ধু জাহিরকে আমন্ত্রণ জানান। জাহিরের প্রেমিকা হিসাবে সাগরিকাও আমন্ত্রিত হন সেই বিয়েতে। সেখানে যাওয়ার আগে সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন সাগরিকা। কারণ যুবরাজের বিয়েতে দু’জনকে একসঙ্গে দেখা গেলে এমনিতেই লোক জানাজানি হবে। সাক্ষাৎকারে সাগরিকা বলছেন, ‘‘আমরা ঠিক করি, জনসমক্ষে খবরটা প্রকাশ হওয়ার আগে বাড়িতে জানানো দরকার। তাই জাহিরকে বাবার সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে আসি। ভেবেছিলাম, আলাপচারিতাপর্ব দ্রুত মিটে যাবে। কিন্তু দেখলাম বাবা অল্পে সন্তুষ্ট নন। সেই দিন, সেই সময়েই উনি জাহিরের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছিলেন। আর ব্যাপারটা আমরা ওখানে বসে বুঝতেও পেরেছিলাম।’’

বাবার সঙ্গে সাগরিকা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
ভারতীয় ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন কোচ অংশুমান গায়কোয়াড় দূর সম্পর্কের কাকা হন সাগরিকার। তাঁকেই মেসেজ করে জাহিরের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন সাগরিকার বাবা। অভিনেত্রী বলছেন, ‘‘অংশুমান কাকা আবার পাল্টা জাহিরকে মেসেজ করে লেখেন, ‘তুমি আমার ভাইঝির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাও জানতাম না তো!’ দেখে ও একটু ঘাবড়েই গিয়েছিল। আমার মনে আছে, মেসেজটা দেখিয়ে জাহির আমাকে বলেছিল, ‘আমি এর জবাব দিচ্ছি না।’ আমিও বলেছিলাম, দিতে হবে না।’’ পরে অবশ্য জাহিরের পরিবার এবং জাহিরের সম্পর্কে জেনে সাগরিকার বাবা সন্তুষ্টই হয়েছিলেন। অভিনেত্রী বলেছেন, ‘‘বাবা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব খোঁজখবর করে পরে বলেছিলেন, ‘ওহ, জাহির তো সবচেয়ে শান্ত এবং ভদ্র স্বভাবের ক্রিকেটারদের এক জন’। ব্যাপারটা প্রথমে অদ্ভুত লাগলেও পরে মনে হয়েছিল, বাবা তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ঠিকই করেছেন।’’

সন্তানের, বিশেষ করে কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে তাঁর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্যও পাত্রের পারিবারিক খোঁজখবর নেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত।
পাত্র বা পাত্রীর পরিবারের খোঁজ নেওয়া কি জরুরি?
মনোবিদ গুরলীন বড়ুয়া জানাচ্ছেন, সন্তানের বিয়ের আগে তাঁর হবু সঙ্গীর পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়া শুধু এ দেশেই নয় অন্যান্য দেশেও প্রচলিত। কারণ অধিকাংশ পরিবারই মনে করে, বিয়ে শুধু দু’টি মানুষের নয়, দু’টি পরিবারেরও কাছাকাছি আসা। যাদের একসঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকতে না হোক, তাদের দেওয়া শিক্ষা এবং সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত দু’টি মানুষ একসঙ্গে থাকবেন। সন্তানের, বিশেষ করে কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে তাঁর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্যও পারিবারিক খোঁজখবর নেন অনেকে। যা স্বাভাবিক এবং জরুরি বলেই মনে করছেন গুরলীন। তবে একই সঙ্গে মনোবিদ বলছেন, অনেক সময়েই পারিবারিক সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে একজন পুরুষ বা মহিলা নিজস্ব পরিচয় তৈরি করেন। নিজেকে আরও উন্নত করেন। আবার পরিবার ভাল হওয়া সত্ত্বেও অনেকের গড়ে ওঠায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাঁর পরিপার্শ্ব। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিচার শুধু পরিবার দিয়ে করলে চলবে না। তাঁদের সঙ্গে বর্তমানে যাঁরা থাকছেন, নিয়মিত কাজ করছেন, তাঁরা সে ব্যাপারে বেশি ভাল ভাবে বলতে পারবেন।