Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
parents

শিশুকে স্কুলে ভর্তি করেছেন? কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতেই হবে?

স্কুলে ভর্তি হওয়া যে কোনও শিশুর কাছেই একটা অধ্যায়ের সূচনা। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগে প্রস্তুতির পাঠ দিতে হবে অভিভাবককেই

শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়ে।

শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়ে।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ২২:১৫
Share: Save:

স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিন, বাবা-মায়ের হাত ছাড়িয়ে দুরুদুরু বুকে অন্য জগতে প্রবেশ... অধিকাংশ শিশুরই স্কুলে যেতে প্রথম দিকে প্রবল অনীহা থাকে। বাবা-মায়ের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার গণ্ডি থেকে বেরোতেই অসহায় বোধ করে তারা। সন্তানের সেই সমস্যা কাটানোর প্রাথমিক দায়িত্ব কিন্তু অভিভাবকেরই। স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়িতেই শিশুকে কিছু জিনিস শিখিয়ে দিতে হবে। তবেই সে স্কুলে যাওয়া উপভোগ করতে পারবে।

নিরাপত্তাহীনতা

বাবা-মা দু’জনেই কর্মরত হওয়ায় বছর দেড়েক থেকেই প্লে স্কুলে যেতে শুরু করে অনেক খুদে। তখনও মুখে বুলি ফোটেনি। টলোমলো পায়েই হাজির হয় স্কুলের চৌকাঠে। নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছে, প্রয়োজন বোঝানোর ক্ষমতাও তখন তার তৈরি হয়নি। তাই অপছন্দে কেঁদে ওঠাই একমাত্র পথ তার। এ সময়ে শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। ভাবতে থাকে যে, বাবা-মাকে আর দেখতে পাবে না। তখম ছোট্ট সোনাকে বোঝান, অফিস থেকে আপনারা যেমন নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসেন, স্কুল থেকেও সে বাড়ি ফিরে আসবে।

পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ পরামর্শ দিচ্ছেন, সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার আগে কিছু দিন একটু আলাদা ছেড়ে রাখার। ‘‘কোনও আত্মীয় বা প্রতিবেশীর বাড়িতে খানিকক্ষণ রেখে দিন। প্রথমে শিশুটি আপত্তি করতে পারে, তার পরে দেখবে মা-বাবা অথবা দাদু-দিদা কিছুক্ষণ পরে তাকে ফেরত নিয়েও যাচ্ছে। এতে ওদের ভরসা তৈরি হবে,’’ বক্তব্য তাঁর।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রথম কয়েক দিন স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করুতে পারেন। অনেক স্কুলেই ওয়েটিং এরিয়া থাকে। শিশু ভয় পেলে এসে দেখে যেতে পারে তার বাড়ির কেউ আছে। কয়েক দিন পরে বাকিদের সঙ্গে একটু মিলেমিশে গেলে সে আর ভয় পাবে না। তখন বাড়ির লোকের খোঁজও করবে না।

নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা কিন্তু তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত চলে। স্কুলের বাইরে অভিভাবকের হাত ধরে বাচ্চার চিৎকার করে কাঁদার ঘটনা সকলের চেনা। প্লে স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে বড় স্কুলে যাওয়ার সময়েও অনেক শিশুর এই সমস্যা হয়। একটা জায়গায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া শিশুটির মধ্যে নতুন জায়গায় যাওয়ার আতঙ্ক কাজ করে। এ ক্ষেত্রেও বাবা-মাকে বোঝাতে হবে।

এক নজরে

বাড়িতে শিশুটিকে এক জায়গায় কোনও খেলা দিয়ে বসিয়ে দিন। বিল্ডিং ব্লক বা কালারিং... চেষ্টা করবেন অন্তত এক ঘণ্টা যেন সে জিনিসটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে স্কুলে শিশুকে নির্দেশ মেনে চলতে হবে। তাই বাাড়িতে তাকে বিভিন্ন কাজ দিেয় নির্দেশ ও শৃঙ্খলার অভ্যেস আগাম তৈরি করে দিন

টয়লেট সংক্রান্ত

যত তাড়াতাড়ি বাচ্চারা টয়লেট পাওয়ার কথা বলতে বা বোঝাতে পারবে, সমস্যা ততই কম হবে। একদম খুদেরা স্কুলে ডায়পার পরেই যায়। তবে অনেক প্লে স্কুল আবার তার অনুমতি দেয় না। তাই এক বছরের পর থেকেই তাকে নির্দিষ্ট সময়ে পটি করানোর ও নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ইউরিন পাস করতে শেখান। এই অভ্যেস হয়ে গেলে যে শিশু কথা বলতে পারে না, সে-ও আকারে ইঙ্গিতে প্রয়োজন বুঝিয়ে দিতে পারে।

ইউরিনাল ট্র্যাক ইনফেকশনের সমস্যাও দেখা যায় বাচ্চাদের মধ্যে। স্কুলে অনেক শিশু টয়লেট চেপে থাকে। তাই বাড়ি থেকেই শুরু হোক টয়লেট ট্রেনিং। যে স্কুলে তাকে দিচ্ছেন, সেখানে দেখাশোনার ব্যবস্থা কেমন, জেনে নিন। বাচ্চাদের ডায়পার বদলানোর সময়ে যেন হাইজিন মানা হয়, অভিভাবককে বলে নিতে হবে।

স্বনির্ভরতা

স্কুলে যাওয়ার পরে কিছু জিনিস বাচ্চাকে নিজেকেই করতে হবে। প্লে স্কুলে দু’ ঘণ্টার জন্য টিফিনের প্রয়োজন পড়ে না। তবে অনেক স্কুলই বলে দেয়, বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে দিতে। যাতে নিজে খাওয়ার অভ্যেস তৈরি হয়। এই অভ্যেস বাড়ি থেকেই তৈরি করতে পারেন। বছর আড়াইয়ের শিশুটিকে নিজের ব্যাগ গোছানোর দায়িত্ব দিতে পারেন। নিজে থেকে জামা-কাপড়, জুতো পরার কাজও শেখানোর চেষ্টা করুন। সে স্বনির্ভর তো হবেই, বাড়বে দায়িত্ববোধও।

খেয়াল রাখুন

সব ট্রেনিং দেওয়ার পরেও শিশু স্কুলে যেতে অনিচ্ছুক হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে নানা প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে। কেউ স্কুলে তাকে বকেছে, মেরেছে বা তার প্রাইভেট পার্ট স্পর্শ করেছে কি না। সন্তোষজনক জবাব না পেলে স্কুলে কথা বলুন।

যে স্কুলে ভর্তি করছেন, সেখানে ক’জন কেয়ারিং স্টাফ জেনে নিন। আলো, হাওয়া, রোদ খেলে কি না, দেখে রাখুন। সব বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য।

মডেল: অন্বেষা রায়, আমন মেহেরা, মেকআপ: পরিণীতা সরকার
ছবি: শুভদীপ ধর, লোকেশন: ভার্দে
ভিস্তা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parenting Tips Child Care Tips Life Hacks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE