Advertisement
E-Paper

কম ঘুমোচ্ছেন? বিপদ ডাকছেন শরীর-মনের

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ১৮:২১
পর্যাপ্ত ঘুমই রাখতে পারে সুস্থ। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

পর্যাপ্ত ঘুমই রাখতে পারে সুস্থ। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা দিনের পর দিন ৩–৪ ঘণ্টা ঘুমিয়েও সব কিছু খুব ভাল ভাবে সামলাতে পারেন৷ সেই হিসেব মাথায় রেখে যদি ভাবেন, ঘুমিয়ে সময় নষ্ট না করে আপনিও তাই করবেন, প্রথম দিকে কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে বা বেশি কষ্ট হলে সপ্তাহান্তে তা পুষিয়ে নেবেন, ভুল করবেন৷

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘কম ঘুমিয়ে সব দিক বজায় রাখতে পারেন তাঁরাই যাঁদের কম ঘুমোনোর ধাত৷ এটা যাঁর আছে, তাঁর আছে৷ না থাকলে চেষ্টা করে খুব একটা কিছু করা যায় না৷ কাজেই তাঁদের শরীর–মন–মেজাজ— সব ঠিক রাখতে দিনে ৬–৮ ঘণ্টা নিশ্ছিদ্র ঘুম দরকার৷ না হলে কম ঘুমের প্রভাব পড়ে শরীর জুড়ে৷ শরীর–স্বাস্থ্য–মন, সব ছন্নছাড়া হয়ে যায়৷ শরীরে বসে যায় স্ট্রেস হরমোনের মেলা৷ তার হাত ধরে কিছু অসুখ–বিসুখ ডালপালা মেলে, যার মধ্যে কয়েকটি যথেষ্ট জটিল৷ কাজেই শরীর যতটুকু চায় ততটুকু ঘুমোন, কার্পণ্য করবেন না৷’’

কম ঘুম ও অসুখ–বিসুখ

হৃদরোগের আশঙ্কা বা রোগ থাকলে তার প্রকোপ বাড়ে৷ বাড়তে পারে রক্তচাপ৷ পরিবারে থাকলে তো বিশেষ করে৷

আরও পড়ুন: অনিদ্রায় ভুগছেন? ওষুধ ছাড়াই সেরে উঠুন এই উপায়ে

সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, ভাল করে না ঘুমোলে শরীরে রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি অনেক কম তৈরি হয় এবং তার ফলে ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ে৷

কম ঘুমের মূলে যদি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া সিনড্রোম নামে ঘুমের মধ্যে থেকে থেকে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো জটিল অসুখের হাত থাকে, যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে তা থেকে ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার, হৃদরোগ, মেদবাহুল্য ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা খুব প্রবল৷ যাঁরা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম ঘুমোন তাঁদের সাধারণ জ্বর–সর্দি–কাশি বেশি হয়৷ যার অন্যতম কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া৷ দিনের পর দিন কম ঘুমোলে বিপাক ক্রিয়ার হার কমে শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর ক্ষমতা কমে যায়৷ স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোলের পরিমাণ বেড়ে শুধু যে মনমেজাজ খারাপ হয় এমন নয়, বিঘ্নিত হয় লেপটিন ও ঘ্রেলিন হরমোনের মধ্যেকার তালমিল৷ সবের যোগসাজসে খিদে বাড়ে৷ বাড়ে খাওয়ার তাগিদ৷ টুকটাক এটা সেটা খেতে থাকেন মানুষ৷ চা–কফি–মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে বাড়ে৷ খাবারের পরিমাণও বাড়ে কখনও৷ আর কম ঘুমের প্রভাবে ক্লান্ত শরীর–মন বিপদ বুঝেও সে সব সামলাতে পারে না সব সময়৷ ওজন বাড়তে থাকে৷

কম ঘুম কেড়ে নেয় জীবনীশক্তিও। ছবি: শাটারস্টক।

খারাপ হয় জীবনযাপনের মান

সারা দিন ধরে যে যে তথ্য পায় ব্রেন, ঘুমের সময় হয় তার ঝাড়াই–বাছাই৷ কোন তথ্য মনে রাখতে হবে, কোনটা ভুলতে হবে, কোন তথ্যের সুদূরপ্রসারী ফল কী, কোন কোনটা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, কোন তথ্যকে কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে ইত্যাদি৷ কম ঘুমোলে এ কাজে গোলমাল হয়ে স্মৃতিশক্তি, বিচার ক্ষমতা আচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে৷ কমতে পারে সৃজনশীলতা৷ ফলে কাজের মান খারাপ হতে থাকে৷ মানসিক চাপ বাড়লে যেমন ঘুম কমে যায়, উল্টোটাও একই ভাবে সত্যি৷ কম ঘুমের হাত ধরে শারীরিক–মানসিক চাপ বাড়ে৷ ক্লান্তিতে, বিরক্তিতে জেরবার হন মানুষ৷ স্বচ্ছ ভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারেন না৷ কম ঘুমের ক্লান্তি থেকে আগ্রহ কমে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনযাপনে৷ তার হাত ধরে শুরু হয় পারিবারিক ও সামাজিক আরও একগুচ্ছ উপসর্গ। লাবণ্য কমাতে, অকালে বলিরেখা ফেলতে, চুলের জৌলুস কমাতে, অর্থাৎ শরীর জুড়ে বয়সের ছাপ ফেলতে কম ঘুমের কোনও জুড়ি নেই৷ কাজেই ঘুমের সঙ্গে অসহযোগিতা নয়৷

আরও পড়ুন: সুস্থ বার্ধক্যের জন্য প্রস্তুতি শুরু শৈশবেই

অতএব

ভাল করে ঘুমোন৷ মন খারাপ, শরীর খারাপ, কাজের চাপ, বদভ্যাস ইত্যাদি যা যা কারণে ঘুম নষ্ট হয় বলে মনে হয়, সে সবের সমাধান খুঁজে বার করুন৷ করে সেই পথে চলুন৷ তাতে কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷

কোনও সমস্যা নেই, শুধু বেশি ঘুমোতে চান না বলে যদি কম ঘুমোনোর অভ্যাস তৈরি হয়, যত তাড়াতাড়ি পারেন সেই অভ্যাস ঝেড়ে ফেলুন৷ কারণ শরীর ও মনকে ভাল রাখার জন্য ঘুমের মতো ওষুধ খুব কমই আছে৷

Dr Chiranjit Sengupta Healthy Tips Health Research Sleeping Tip
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy