Advertisement
১১ মে ২০২৪
Health

পুষ্টি কি যথাযথ হচ্ছে?

সন্তানের খাওয়া নিয়ে অল্পবিস্তর চিন্তিত সব মা-বাবাই। কী ভাবে খাওয়াদাওয়া করলে সন্তানের পুষ্টি ঠিক মাত্রায় হবে, রইল তার পরামর্শ সন্তানের খাওয়া নিয়ে অল্পবিস্তর চিন্তিত সব মা-বাবাই।

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ০১:৪৫
Share: Save:

প্রায় সব মায়ের মনের কোণেই একটা ছোট্ট ইচ্ছে দানা বেঁধে থাকে— তাঁর সন্তান হবে গোলগাল। রোগা, ছিপছিপে বাচ্চা যতই ছটফটে হোক না কেন, মায়েদের যেন মোটেই পছন্দ নয়। বাচ্চার ‘স্বাস্থ্য’ ভাল না হলে, তাঁরা ভাবতে থাকেন বোধহয় তাঁদের যত্নআত্তিতে কোথাও খামতি থেকে যাচ্ছে। ও ঠিকমতো পুষ্টি পাচ্ছে না। সুতরাং পুষ্টির সন্ধানে তাঁরা হামেশাই জোর করে বাচ্চাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।

বিপত্তির শুরু এইখান থেকে। কারণ বাচ্চার গড়ন কেমন, তাই দিয়ে তার পুষ্টির বিচার একেবারেই করা যায় না। রোগা বাচ্চা মানেই সে অপুষ্টির শিকার, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই বলে থাকেন, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ওজন বেশি-কমের ব্যাপারটা আপেক্ষিক। তাই ওজন মাপার সময় তাঁরা সাধারণত বাচ্চার গ্রোথ চার্ট দেখে নেন। সেখানে যদি কিছু অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে, যেমন হঠাৎ ওজন কমে গিয়েছে বা আচমকা বেড়ে গিয়েছে, তখন তার কারণ খোঁজার প্রয়োজন পড়ে, অন্যথায় নয়। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষের মতে, বাচ্চার ওজন বেশি হবে নাকি কম, সেটা অনেকটাই নির্ভর করে তার জিনের উপর। সুতরাং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি বাচ্চার সঙ্গে অন্য বাচ্চাদের তুলনা করা একদমই উচিত নয়। বরং দেখা গিয়েছে, জন্মের সময় যে বাচ্চার ওজন কমের দিকে ছিল, পরবর্তী কালে তাকে হৃষ্টপুষ্ট করার প্রবল তাগিদে যদি অতিরিক্ত খাওয়ানো হয়, তা হলে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে। বাচ্চা যদি ছটফটে হয়, খেলাধুলো করে, শরীরে অন্য কোনও রোগ না থাকে, তা হলে তার ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগার কোনও প্রয়োজন নেই।

বুঝব কী করে, বাচ্চার পুষ্টি ঠিকমতো হচ্ছে কি না?

যথাযথ পুষ্টি পাওয়ার জন্য বাচ্চার খাবারে যাতে প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট-এর মতো উপাদানগুলি থাকে, সেটা দেখে নেওয়া প্রয়োজন। এখন এই উপাদানগুলো কোনটা কতটা পরিমাণে শরীরে যাচ্ছে, সেটা তো আর দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখা যায় না। তবে আমাদের রোজকার খাবার, অর্থাৎ ভাত, রুটি, ডাল, মরসুমি সবজি, মাছ, মাংস বা ডিমের মধ্যে থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি বাচ্চার শরীরে যায় বলে ডা. ঘোষ মনে করেন। এবং তাঁর পরামর্শ, যতটা সম্ভব বাচ্চাকে টাটকা খাবার খাওয়াতে হবে। মাছ কেনার সময় বাচ্চার জন্য জ্যান্ত মাছ কেনাই ভাল। কারণ বরফে রাখা মাছ অনেক সময় ভাল ভাবে সংরক্ষণ করা হয় না।

এ ক্ষেত্রে আর একটা বিষয়ও মনে রাখা প্রয়োজন। বেশির ভাগ বাড়িতেই সাধারণত একসঙ্গে অনেকটা মাছ, মাংস কিনে ডিপ ফ্রিজে রেখে দেওয়ার রেওয়াজ আছে। প্রয়োজনমতো তা বার করে রান্না করা হয়। এতে সমস্যা নেই। কিন্তু এক বার ডিপ ফ্রিজ থেকে বার করে বরফ গলিয়ে সেটা ফের ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে সংক্রমণের ভয় থাকে। এ ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্যাকেটে বা বাক্সে প্রতি দিনের মাছ-মাংস আলাদা করে ভরে তা ফ্রিজে রাখা যেতে পারে। দরকার মতো এক-একটা বাক্স বা প্যাকেট বার করে নেওয়া যায়।

ফাস্ট ফুড থেকে দূরে

বিশেষজ্ঞরা বারবারই সাবধান করেন, বাচ্চাদের বাইরের খাবার, বিশেষত ফাস্ট ফুড থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে। অতিরিক্ত চিপস, আইসক্রিম খেলে ওজন বাড়ে। এই ওজন বৃদ্ধি আদৌ সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়। বরং উল্টোটাই। একটা সময় এই বাড়তি ওজন ওবেসিটি-তে পরিণত হতে পারে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। দুধে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের সবটাই থাকে। অথচ এই দুধের সঙ্গে চিনি ও আরও উপাদান মিশিয়ে যখন আইসক্রিম বানানো হয়, তখন অন্যান্য গুণ চলে গিয়ে পড়ে থাকে শুধুই কার্বোহাইড্রেট আর ফ্যাট। অথচ সাধারণ দুধের চেয়ে আইসক্রিমের স্বাদ বেশি ভাল বলে বাচ্চারা ওটাই খেতে চায়। তাই বলে বাচ্চা কখনও আইসক্রিম, চকলেট খাবে না, তেমনটাও সম্ভব নয়। দেখতে হবে, এই জাতীয় খাবার কম রেখে অন্য পুষ্টিকর খাবারগুলো যাতে ঠিকঠাক শরীরে যায়।

তবে ডা. ঘোষ বললেন, ‘‘এ দেশে যে ভাবে রান্না করা হয়, তাতে খাবারের সত্যিকারের পুষ্টি বজায় থাকে না। আমরা সাধারণত তেলে ভেজে বা মশলায় কষিয়ে খাবার খাই। অথচ বিদেশে, বিশেষ করে এশিয়ার মধ্যে জাপান এবং ইউরোপের দেশগুলোতে শাকসবজি থেকে মাছ-মাংস সবই সিদ্ধ, গ্রিল বা বেক করে খাওয়ার অভ্যেস। এগুলোতে পুষ্টি থাকে তুলনায় অনেক বেশি।’’ বাচ্চাদের রান্নাতেও এই বিকল্প পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। কারণ ডিপ ফ্রাই করা খাবারে স্বাদ বাড়লেও অপ্রয়োজনীয় তেল বাচ্চার শরীরে অনেক বেশি পরিমাণে ঢোকে। ওজন বাড়ার এটাও একটা কারণ বইকি!

স্বাদ গুরুত্বপূর্ণ

বাচ্চাদের খাবার তৈরির সময় স্বাদের কথাটা মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু বাচ্চা এমনি খাবার খেতে চায় না বলে তাকে সুস্বাদু খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে অতিরিক্ত খাওয়ানোর চেষ্টা মোটেই কাজের কথা নয়। ওর পেট ভরে গেলে আর খেতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সময় ওর খুব প্রিয় খাবার সামনে রাখলে হয়তো আরও কিছুটা বাড়তি খেয়ে ফেলতে পারে। এতে মায়েরা খুশি হন ঠিকই, কিন্তু এই প্রবণতাই শেষে অতিরিক্ত ওজনবৃদ্ধি ঘটায়।

বাবা-মায়েরা এখন সন্তানের পুষ্টির বিষয়ে অতি-সচেতন। অথচ অনেকেই জানেন না, অতিরিক্ত ওজন বা ওবেসিটি-ও আসলে এক অর্থে পুষ্টির ঘাটতিকেই বোঝায়। জোর করে খাইয়ে সন্তানকে সে দিকে ঠেলে দেবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Fitness Nutrition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE