Advertisement
E-Paper

সচেতন হন গরম খাবারে

অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়া-সহ নানাবিধ কারণে হতে পারে গ্লসাইটিস। রইল পরামর্শ।

ঊর্মি নাথ 

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:০২
গ্লসাইটিস হলে গরম, নোনতা ও ঝাল খাবার খেতে গেলে মুখের মধ্যে জ্বলে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা অনুভূত হয়।

গ্লসাইটিস হলে গরম, নোনতা ও ঝাল খাবার খেতে গেলে মুখের মধ্যে জ্বলে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা অনুভূত হয়। প্রতীকী ছবি।

খাবার দেখলেই যেন আতঙ্ক! চিবিয়ে খেতে বা খাবার গিলতে যেন প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। গ্লসাইটিস হলে এমন যন্ত্রণাদায়ক সমস্যায় পড়তে হয় বইকি! যদিও মুখের ভিতর চট করে সমস্যা হয় না, কারণ স্যালাইভা বা লালার মধ্যে লাইসোজাইম নামক এনজাইম আছে যা ব্যাকটিরিয়ানাশক। তাই অধিকাংশ পশুকে ক্ষতস্থান চেটে পরিষ্কার করতে দেখা যায়। এটি এক প্রকার প্রাকৃতিক সুরক্ষা। তবু বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থের জন্য, ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাক আক্রমণের কারণে বা কিছু ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের অভাবে গ্লসাইটিস হতে পারে।

কী করে বুঝবেন গ্লসাইটিসবাসা বেঁধেছে

গ্লসাইটিস হলে গরম, নোনতা ও ঝাল খাবার খেতে গেলে মুখের মধ্যে জ্বলে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা অনুভূত হয়। অনেক সময়ে গিলতেও কষ্ট হয়, স্বাদ চলে যায়। কথা বলতেও অসুবিধে হয়। এই রোগে জিভের রং টকটকে লাল হয়ে যায়। কখনও জিভ ফুলে গিয়ে ব্যথা হতে পারে। জিভের উপরে দানা দানা মতো র‌্যাশ বেরোতে পারে।

কেন হয় এই সমস্যা

একাধিক কারণ আছে গ্লসাইটিসের পিছনে, জানালেন জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল।

 অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়ার অভ্যেস থাকলে। ‘‘অনেকের অভ্যেস আছে কাপে গরম চা দেওয়া মাত্রই এক চুমুকে পেয়ালা শেষ। সদ্য কড়াই থেকে ভেজে নামানো গরম শিঙাড়া, কচুরি বা চপ অনেকেই দিব্যি খেয়ে ফেলেন। খেতে বসে দশ-বারোটা কাঁচা লঙ্কা চিবিয়ে খান। এই ধরনের অভ্যেস মারাত্মক ক্ষতিকারক। এতে জিভের স্নায়ুগুলো একেবারেই অকেজো হয়ে যায়। তখন তাঁদের খুব গরম বা খুব ঝালের অনুভব থাকে না। বারবার অতিরিক্ত গরম ও ঝালের দাপটেও গ্লসাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়,’’ বললেন ডা. সুবীর মণ্ডল।

 অতিরিক্ত মানসিক চাপ।

 ডায়াবিটিস।

 ভিটামিন বি-র অভাব।

 দীর্ঘ দিন কোনও রোগী হাসপাতালে থাকলে বা দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে।

 কোনও কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে।

 সুপারি-জর্দা দিয়ে পান, গুটখা, সিগারেট ইত্যাদির নেশা থাকলে।

 দাঁতের সমস্যায়, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের দাঁত ভেঙে বা ক্ষয়ে গিয়ে ধারালো হয়ে যায়, দাঁত পড়ে যায়। তখন খেতে বা কথা বলতে গিয়ে ধারালো দাঁতে বারবার জিভের আঘাত লাগে, যা জিভে ক্ষত তৈরি করে। এ ছাড়া বাঁধানো দাঁত ঠিক মতো সেট না হলে খোলা-পরার সময়ে বারবার ঘষা লেগে ক্ষত তৈরি হতে পারে। নিয়মিত ব্রেস ব্যবহার করলেও এই সমস্যা হতে পারে।

 মুখ খুলে ঘুমোনোর অভ্যেস থাকলে মুখের লালা শুকিয়ে যায়।

 নিয়মিত মুখের ভিতর পরিষ্কার না করলেও এই সমস্যা হতে পারে। ‘‘আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে বা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সাধারণত ব্রাশ করি। অনেকেই বারবার চা পান করেন কিন্তু মুখ ধোয়ার কথা মাথায় থাকে না। যতবার চা খাবেন, ততবার মুখ ধোয়া উচিত। এতে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দাঁত পরিষ্কারের জন্য বহু দিনের পুরনো ব্রাশ ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ ব্রাশের ব্রিসলগুলো শক্ত হয়ে গেলে তার খোঁচায় স্টোমাটাইটিস (মুখের ভিতর ঘা) হয়, যা থেকে পরবর্তীতে জিভ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাড়াহুড়ো করে নয়, সতর্ক হয়ে ব্রাশ করুন,’’ পরামর্শ দিলেন ডা. মণ্ডল।

চিকিৎসা

কিছু খেতে গিয়ে জ্বালা হলে বা জিভের রং পরিবর্তন হলে সজাগ হতে হবে। সমস্যা ফেলে না রেখে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাধারণত লক্ষণ দেখেই বুঝে যান চিকিৎসকেরা। কিছু ক্ষেত্রে ক্রনিক সমস্যা হলে ক’টি টেস্ট দিয়ে থাকেন। ‘‘গ্লসাইটিসের মতো স্টোমাটাইটিস-এর কারণ মোটামুটি এক। দুটো সমস্যা একসঙ্গেও হতে পারে। স্টোমাটাইটিসে ঠোঁটের ভিতর বা উল্টো দিকে ক্ষত তৈরি হয়। এই দুটো ক্ষেত্রেই মুখের ভিতরে যাতে লালা ঠিক মতো তৈরি হয় এবং মুখের ভিতর পরিষ্কার থাকার উপরে নজর দিতে হয়। কৃত্রিম ভাবে স্যালাইভা তৈরি করার ওষুধ দেওয়া হয়। এবড়োখেবড়ো ধারালো দাঁত থাকলে তুলে ফেলা বা ঘষে মসৃণ করে দেওয়া হয়। দুটো দাঁতের মাঝে দাঁত না থাকলে, সেই স্থানে বারবার জিভে ঘষা লেগে ঘা হলে দাঁত বাঁধিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্লোরেক্সিডাইন সলিউশনে মুখ ধুয়ে ঘুমোতে যাবেন। যন্ত্রণা নিরসনের জন্য অ্যানাস্থেটিক জেল ব্যবহারে হয়তো সাময়িক ভাবে ব্যথা অনুভূত হয় না, কিন্তু ব্যথা না থাকায় অসাবধানে খাওয়ার সময়ে বেশি ঘষা লাগে। এতে রোগ সারতেও সময় লাগে। তাই কেবল অ্যানেস্থেটিক জেল নয়, সমাধানই এক্ষেত্রে কাম্য,’’ বললেন ডা. মণ্ডল।

গ্লসাইটিস বা স্টোমাটাইটিস ইত্যাদি মুখের ভিতরে যে কোনও অসুখই কষ্টদায়ক। তাই সচেতন হওয়া জরুরি। যেমন, কিছু খাওয়ার পরে মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। খুব গরম বা ঠান্ডা খাবার খাবেন না। দাঁত ধারালো হয়ে গেলে, বাঁধানো দাঁত পরতে অসুবিধে হলে দ্রুত ডেনটিস্টের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিক হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা বাঞ্ছনীয়। ধ্যান, যোগাসন করে মানসিক চাপ কমাতে হবে। রক্তে হিমোগ্লোবিন বা শরীরে ভিটামিন বি-এর অভাব হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডায়েটের মধ্য দিয়ে তা পূরণ করতে হবে।

গ্লসাইটিস কষ্টদায়ক কিন্তু চিকিৎসা শুরুর পরে দ্রুত আরোগ্য মেলে। কিন্তু বয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Glossitis medicines precautions Diet
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy