(বাঁ দিক থেকে) সুদীপা চট্টোপাধ্যায়, সৌমীতৃষা কুন্ডু, মীর আফসার আলি, সন্দীপ্তা সেন এবং কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
হাতেখড়ি পর্ব বাদ দিলে ছোটদের কাছে সরস্বতী পুজো মানে ‘বড়’ সাজার দিন। আর বড়দের কাছে? ‘খুল্লমখুল্লা’ প্রেমে পড়ার। মায়ের নতুন শাড়ির কুঁচি ধরে স্কুল থেকে বাড়ির পথে ছোটার স্মৃতি আজও অমলিন অনেকের কাছে। কারও কাছে আবার সরস্বতী পুজো মানে পাড়ার মণ্ডপে অঞ্জলি দিতে গিয়ে কোনও এক ‘বাসন্তিকা’র দিকে অপলক তাকিয়ে থাকার সুখ।
সময় বদলেছে। বদল এসেছে উদ্যাপনেও। লুকিয়ে নারকেল কুল খাওয়া কিংবা স্কুলে যাওয়ার নাম করে বেপাড়ার মণ্ডপে ভিড় জমানোর জমানা এখন নেই। পাঞ্জাবির তলা থেকে উঁকি দেওয়া পাজামার দড়ির শেষ প্রান্ত আর কাঁধ থেকে খুলে পড়া মায়ের ঢিলে ব্লাউজ় এখন সে ভাবে চোখে পড়ে না। উল্টো দিকে থাকা পছন্দের মানুষটার কাছে ‘প্রেস্টিজ’ ঝুলে যাওয়ার আগেই ‘ক্যাচ’ লুফে নেওয়ায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্ম। সরস্বতী পুজোর প্রসঙ্গে এসে পড়া প্রেমও বদলে নিয়েছে তার সংজ্ঞা। তবে এত বদলের মাঝেও একই ভাবে রয়ে গিয়েছেন বীণাপাণি। রয়েছে গিয়েছে হলুদ-ছোঁয়া শাড়ি, পাঞ্জাবির ভিড়।
আশি-নব্বই-বিংশ দশকের যে তরুণ-তরুণীরা সরস্বতী পুজোর দিন ভিড় করতেন প্রিন্সেপ ঘাট কিংবা বাগবাজারে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখন ‘জেনজ়ি’র অভিভাবক, আবার টেলিভিশন জগতের জনপ্রিয় মুখও। কারও কাজ আবার কণ্ঠ নিয়ে। সরস্বতী পুজোর সকালে ‘টাইম মেশিনে’ চড়ে সকলেই ফিরে গেলেন তাঁদের ছোটবেলায়।
‘আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি’
বাড়ির প্রতিমার সঙ্গে সঞ্চালিকা সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সরস্বতী পুজোর মেয়েবেলার স্মৃতি খুঁজতে গিয়ে ছোটবেলায় ফিরে গেলেন সঞ্চালিকা সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। যে স্কুলকে সারা বছর সুদীপার ‘জেলখানা’ মনে হত, সরস্বতী পুজোর দিন কোন এক জাদুবলে তা-ই যেন স্বর্গ হয়ে উঠত সুদীপার কাছে! তাঁর কথায়, “মা কিছুতেই শাড়ি দিতে চাইতেন না। কারণ মায়ের ধারণা ছিল, মেয়ে শাড়ি পরলেই তা ছিঁড়ে ফেলবে। হিল জুতো তো নৈব নৈব চ। কিন্তু সরস্বতী পুজোর দিনে সে সব নিয়ম কি আর মানা যেত! তাই ভাল শাড়ির খোঁজ পড়ত কাকিমা, জেঠিমা বা দিদিদের কাছে।’’ সুদীপা জানালেন তাঁকে প্রথম বার শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী। সুদীপার বিদীপ্তাদি সঞ্চালিকা বলেন, “সে দিনটা আজও ভুলিনি। আসলে প্রতিটি বাঙালি মেয়ের কাছে সরস্বতী পুজো মানে প্রথম শাড়ি পরা, প্রথম প্রেম, ভাললাগার উদ্যাপন। আমার কাছেও তাই।’’
যদি ‘লভ’ দিলে না প্রাণে!
অভিনেত্রী সৌমিতৃষা কুন্ডু। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
ছোটপর্দা থেকে অভিনয়ে হাতেখড়ি। পাশের বাড়ির মেয়ে ‘মিঠাই’ হয়ে সকলের মন জয়। কাট টু বড়পর্দা। একেবারে দেবের নায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ। এ হেন সৌমিতৃষা বরাবরই সাজতে ভালবাসেন। সাজগোজ নিয়ে কোনও রকম খামতি রাখার পাত্রী নন তিনি। স্কুলবেলায় সরস্বতী পুজোর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সৌমিতৃষার মনে পড়ল প্রথম শাড়ি পরার কথা। তবে আক্ষেপ একটাই, সেই সময় কারও কাছে প্রেমের প্রস্তাব পাননি। অভিনেত্রীর কথায়, “ছোটবেলায় বন্ধুদের দেখতাম সরস্বতী পুজোর দিন মায়ের শাড়ি পরতে। তবে আমি কখনও মায়ের শাড়ি পরিনি। অঞ্জলি দেওয়ার জন্য প্রতি বছর আমার জন্য নতুন শাড়ি কিনে দিতেন মা। তার সঙ্গে মানিয়ে সব কিছু কিনে দিতে হত।” তবে যৌথ পরিবারে বড় হওয়ায় সরস্বতী পুজোয় কাউকে প্রেম নিবেদন করা কিংবা কারও কাছে প্রেমের প্রস্তাব পাওয়া— কোনও অভিজ্ঞতাই হয়নি, জানালেন অভিনেত্রী।
‘বলো তো আরশি তুমি মুখটি দেখে’
কন্যা মুস্কানের সঙ্গে সঞ্চালক মীর আফসার আলি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
নিজে কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তাই কৈশোরে সরস্বতী পুজো সে ভাবে উপভোগ করতে না পারেননি মীর আফসার আলি। কিন্তু তিনি মীর, তিনি খেদ জমিয়ে রাখেন না। কিশোরবেলার আক্ষেপ মিটে যায় কন্যা মুস্কানের আনন্দ দেখে। মীরের কথায়, “ওর প্রথম শাড়ি পরা, সাজুগুজু করার দিনটা ভুলতে পারি না। শাড়ি পরার পর আয়নার সামনে থেকে সে নড়বেই না! ঘুরেফিরে শুধু নিজের সাজ দেখে যাচ্ছে। দেখেই যাচ্ছে। ওর মুখে যে আলো দেখেছিলাম সে দিন, তা আজও আমার মনে গেঁথে রয়েছে। পুজোর আসল মানে তো এটাই।”
‘প্রেম এক বারই এসেছিল নীরবে’
অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন। ছোটবেলায় স্কুলের সরস্বতী পুজো, ভোগ খাওয়ার আনন্দ থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন বটে। তবে বাড়িতে পুজো হত। সন্দীপ্তার কথায়, ‘‘কোনও বার হলুদ, কোনও বার সাদা-লাল পাড় শাড়ি পরতাম। একটু বড় হওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে আশপাশের স্কুলগুলোয় ঠাকুরও দেখতে যেতাম। সেখান থেকেই প্রথম প্রেমপ্রস্তাব পেয়েছিলাম। তবে ব্যাপারটা বেশি দূর গড়ায়নি।” কারণ জানালেন নিজেই, “আসলে তখন মন জুড়ে তো শুধুই শাহিদ কপূর। ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-তে আমি শাহিদ কপূরের ছবি দেখতাম। ওঁর কথা ডায়েরিতে লিখতাম। ওঁর আর আমার ছবি পাশাপাশি রাখতাম। শাহিদকে নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে, বহু প্রেম প্রস্তাব এলেও কাউকে বিশেষ পাত্তা দিইনি।” বয়স বেড়েছে, সংসার জীবনেও পা রেখেছেন সন্দীপ্তা। কিন্তু শাহিদের প্রতি ভাললাগাটা যে এখনও রঙিন, তা এই বসন্তেও ধরা পড়ল।
‘এই পুজো জানে আমার প্রথম সব কিছু’
কন্যা কিয়ার সঙ্গে অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্য়োপাধ্যায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
রিল এবং রিয়্যাল, দুই ‘বাড়ি’র হেঁশেলেই তাঁর অবাধ যাতায়াত। আবার কাজের ফাঁকে একরত্তি মেয়ের খোঁজ নেওয়া, এটা কী, সেটা কেন-গোত্রের যাবতীয় প্রশ্নোত্তর পর্ব সেরে আবার শুটিংয়ে ফিরে যাওয়া। অভিনয় জগতের পরিচিত মুখ এবং সঞ্চালিকা কনীনিকার কাছে সরস্বতী পুজো উস্কে দেয় প্রথম হিল জুতো পরার স্মৃতি। কী রকম? অভিনেত্রী বলেন, “দুই বোন বাবার হাত ধরে মায়ের শাড়ি পরে সকাল সকাল স্কুলে যেতাম। এই সরস্বতী পুজোতেই আমার প্রথম হিল জুতো হয়েছিল। কিন্তু আক্ষেপ একটাই। আমার মেয়ের স্কুলে পুজো হয় না। স্কুলের পুজোর যে কী অনাবিল আনন্দ, ও সেটা বুঝল না!” তবে কনীনিকার বাড়িতে সরস্বতী পুজো হয়, পুজোর আয়োজন তিনি নিজেই করেন। সঙ্গ দেয় কন্যা কিয়া। অভিনেত্রীর কথায়, “এ সব নিয়ে ওর ভীষণ উৎসাহ। যেমন সাজগোজ, তেমন পুজোর আচার-অনুষ্ঠান— সবেতেই ওর অংশগ্রহণ করা চাই। আর সরস্বতী পুজোয় শাড়ি তো পরবেই। সঙ্গে আর কী গয়না লাগবে, কেমন সাজবে, সে সব আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy