Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coconut

তেলে-জলে নারকেল

নারকেলের শাঁস থেকে জল... সবটাই খুব উপকারী। কেন খাবেন নারকেল, জেনে নিন বিশ্বে দারিদ্র দূর করতে নারকেল যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে, সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতেই এমন আয়োজন।

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৩৫
Share: Save:

বিদেশি লেখকদের অ্যাডভেঞ্চারের গল্পগুলোয় হামেশাই থাকে জাহাজডুবির কথা। ডুবন্ত জাহাজের মানুষরা কখনও সাঁতার কেটে, কখনও টুকরোটাকরা কাঠে চেপে ভাসতে ভাসতে গিয়ে ওঠে কোনও এক নারকেল গাছে ছাওয়া, সাদা বালির ‘মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড’-এ। আর সেই আধমরা মানুষগুলোকে শাঁসে-জলে বাঁচিয়ে রাখে দ্বীপের অফুরন্ত ডাব, নারকেল। এই ফলের এমনই অসামান্য গুণ। এই বছর ২ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব নারকেল দিবস। বিশ্বে দারিদ্র দূর করতে নারকেল যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে, সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতেই এমন আয়োজন। নারকেলের জল থেকে শুরু করে শাঁস, এর গুণ অনেক। একে একে তা জানার পালা এ বার...

ভিটামিনস ও মিনারেলস

নারকেল এমনই এক ফল, যার কোনও অংশই ফেলে দেওয়ার নয়। জল আর শাঁস তো বটেই নারকেল তেলও রান্নায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়। ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘নারকেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আর মিনারেল রয়েছে। মানবশরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে ভিটামিন বি-র প্রয়োজন। নারকেল থেকে ভিটামিন বি-৫ আর বি-৬ পাওয়া যায়।’’ খাদ্যতালিকায় অল্পবিস্তর নারকেল রাখতে পারেন। স্যালাডের উপরে ড্রেসিং করে বা এমনিই এক টুকরো খেতে পারেন ব্রেকফাস্টের ফাঁকে। নারকেলে থাকে ম্যাঙ্গানিজ়, যেটা হাড়ের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও সহায়ক।

নারকেলে থাকা অন্য একটি উপাদান হল, সেলেনিয়াম। এটি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। মানবশরীরের কোষে থাকা দূষিত পদার্থকে জমতে না দিয়ে শরীর থেকে বার করে দিতে সাহায্য করে। কোভিড পিরিয়ডে চিকিৎসক এবং ডায়াটিশিয়ানরা সাধারণত তিনটি মিনারেল সকলকে নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন— জ়িঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ় এবং সেলেনিয়াম। সে দিক থেকেও নারকেল কিন্তু উপকারী।

এ ছাড়াও নারকেলে প্রচুর পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার থাকে। অনেক সময়ে লো পটাশিয়াম ডায়েটের কারণে আমাদের শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স দেখা দেয়। পটাশিয়ামের মাত্রা তখন কমে গিয়ে হাত-পা ঝিমঝিম করতে থাকে, হাঁটাচলার ক্ষমতা কমে যায়। সেই সময়েও চিকিৎসকেরা ডাবের জল খাওয়ার পরামর্শ দেন। ডাবের জলে হরেক মিনারেলের উপস্থিতি শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স হলে, তাকে সমতায় ফেরাতে সাহায্য করে। নারকেলে থাকা আয়রন আবার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বাড়ায়।

বিস্মৃতি রুখতে

ডাবের জলে থাকে এমসিটি অর্থাৎ মিডিয়াম চেন ট্রাইগ্লিসারাইডস (মধ্য-শৃঙ্খল)। মস্তিষ্কের কাজ ক্ষুরধার করতে আর স্মৃতিশক্তি জোরদার করতে এমসিটি-র জুড়ি নেই। বাড়তি এনার্জিরও জোগান দেয় এই উপাদান। হয়তো সেই কারণেই সন্তানের পরীক্ষা চলাকালীন বা শরীরের দুর্বলতা কাটাতে অনেকেই ডাবের জল খাওয়ান। একই কারণে যাঁরা অ্যালজ়াইমার্সের রোগী, তাঁদেরও ডাবের জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রান্নায় নারকেল তেল

নারকেল তেল ব্যবহারের ফল ভাল, না খারাপ— তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘নারকেল তেলের ব্যবহার নিয়ে এখনও যথেষ্ট গবেষণা হয়নি। তাই সরষের তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল ও অলিভ অয়েলের গুণাগুণ যেমন নির্দ্বিধায় বলা যায়, নারকেল তেলের ক্ষেত্রে অতটা নিশ্চিত হওয়া যায় না। এই তেলে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। নতুন গবেষণা বলছে, স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের পক্ষে ভাল। এটি খারাপ কোলেস্টেরল আর ট্রাইগ্লিসারাইডকে কমিয়ে এইচডিএল বা ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। সে দিক থেকে দেখলে নারকেল তেলের রান্না খেলে শরীরের উপকারই হয়।’’

ভালমন্দ মিশিয়ে

তবে, নারকেলের সমস্ত কিছুই যে খুব ভাল, তা নয়। আর পাঁচটা খাদ্যের মতোই নারকেলও দোষেগুণে ভরা। যেমন, কেউ যদি ওজন কমানোর চেষ্টা করেন, তা হলে তাঁর নারকেল বা নারকেলের তৈরি খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ, নারকেলে ফ্যাটের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি। তাই বেশি খেলে ওজন বাড়বেই।

অন্য দিকে চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও কিন্তু নারকেল খুব উপকারী। চুল মসৃণ, উজ্জ্বল ও মজবুত করতেও নারকেল তেলের জুড়ি নেই। তবুও নারকেল তেল বা নারকেল খাবারে রাখবেন কি না, সে বিষয়ে নিজের স্বাস্থ্য অনুযায়ী ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে নিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coconut Health Durgapur Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE