Advertisement
E-Paper

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ: রোগ জীবাণুর সঙ্গেই বাস করেন রোগীরা

দেড় বছরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। রক্তমাখা তুলো, গজ, সুতো মাড়িয়ে উঠতে হয় উত্তরঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের করিডরে। ওয়ার্ডের গা ঘেঁষে থাকা নর্দমার পাশে জঞ্জালের সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফাঁকা স্যালাইন বা রক্তের পাউচ, সিরিঞ্জ সহ অন্য চিকিৎসা বর্জ্য। জঞ্জালের উপরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৩:৪৩
জঞ্জাল ছড়িয়ে রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক

জঞ্জাল ছড়িয়ে রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক

দেড় বছরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। রক্তমাখা তুলো, গজ, সুতো মাড়িয়ে উঠতে হয় উত্তরঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের করিডরে। ওয়ার্ডের গা ঘেঁষে থাকা নর্দমার পাশে জঞ্জালের সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফাঁকা স্যালাইন বা রক্তের পাউচ, সিরিঞ্জ সহ অন্য চিকিৎসা বর্জ্য। জঞ্জালের উপরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর। জঞ্জালের স্তূপে মিশছে পশুদের মল-মূত্রও। উপরে ভনভন করছে মাছি। এর কয়েক হাত উপরেই ওয়ার্ডের জানলা। জানালা দিয়ে দূষিত হাওয়ার সঙ্গে ঢুকছে মশা-মাছিও। হাসপাতালের বিভিন্ন করিডরের পাশে আগাছার ঝোপ। ঝোপের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ব্যবহৃত ব্যান্ডেজ, সিরিঞ্জ।

গত বছরে এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল উত্তরবঙ্গে এসেছিলেন। আক্রান্তদের সিংহভাগই ভর্তি ছিলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কেন্দ্রীয় পরিদর্শনকারী দলটি মেডিক্যাল কলেজে এসে হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া সুপারিশে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় দলটি। তারপরেই নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। পরিচ্ছন্নতা আনতে হাসপাতাল চত্বরেই বড় বড় গর্ত করে জঞ্জাল ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। প্রশাসনের থেকে জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য শ্রমিক পাঠায় মেডিক্যাল কলেজে। গত বছরের জুলাই মাসে সেই পদক্ষেপের পরে পরিস্থিতি যে বদলায়নি, তা মেডিক্যাল কলেজে পা রাখলেই মালুম হয় বলে রোগীর পরিজন থেকে চিকিৎসকদের একাংশ—সকলেই অভিযোগ করেছেন। তাঁদের কথায়, রোগের জীবাণুর সঙ্গেই বাস করতে বাধ্য হন রোগীরা।

কেমন এমন পরিস্থিতি মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে?

মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের পাশের রাস্তা দিয়ে ঢুকতে হয় মেডিসিন ওয়ার্ডে। করিডরের পাশে মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রক্তমাখা তুলো, গজ। রোগীর পরিজনদের পায়ে পায়ে রক্তমাখা তুলো কখনও উঠে যাচ্ছে করিডরে, আবার পায়ের আঘাতেই করিডর থেকে তুলো ছিটকে পড়ছে মাঠে। একই ছবি সার্জিকাল ওয়ার্ডের পাশের করিডরেও। শুধু করিডরের পাশেই নয়, প্রতিটি ওয়ার্ডের পাশেই জঞ্জালের ছোট বড় স্তূপ। সেই স্তূপে স্যালাইন থেকে রক্তের পাউচ, সিরিঞ্জ থেকে ওষুধের স্ট্র্যাপ, খাবারের প্যাকেট, ফলের খোসা, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ পশুদের মলমূত্র কী নেই?

জঞ্জালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে নর্দমাগুলি। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পাইপের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা জল আটকে উপচে পড়ে। জমা জলে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বর্জ্য থেকে। মশা-মাছি ভনভন করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই একাধিক বড় বড় জানালা রয়েছে। বেশিরভাগ জানালার কাচই ভাঙা। সামনে শীত আসছে। হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকবে। রোগীরা বেশ ভয়েই আছেন ওই ভাঙা জানলা নিয়ে।

মেডিক্যাল কলেজের সুপার নির্মল বেরার কথায়, ‘‘জঞ্জালের সমস্যা নিয়েই আমরা সর্বাধিক চিন্তিত। অতীতে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছিল, পুরোটা সমাধান করা যায়নি। ফের বৈঠক শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জঞ্জাল সমস্যা সমাধানে সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকেও কাজে লাগানো হবে।’’

মেডিক্যাল কলেজের এমন পরিবেশে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা যে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘জঞ্জাল, ঝোপ এবং চিকিৎসা বর্জ্য সবই ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাসের আঁতুরঘর। দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিস্থিতি চলছে। এই সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি শুনেই বছর কেটে গিয়েছে বলে চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করেছেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে বছরখানেক আগে থেকে কেন্দ্রীয় সরকারে স্বচ্ছ ভারত বা রাজ্য সরকারের নির্মল বাংলার নানা প্রকল্প চলছে। যদিও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের জঞ্জাল চিত্রের ‘পরিবর্তন’ হয়নি বলেই অভিযোগ। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ওয়ার্ডে ঢুকলে আমাদের নাকে বাইরের জঞ্জালের কটু গন্ধ আসে। রোগীরা সেই গন্ধ সহ্য করেই দিনভর বিছানায় শুয়ে থাকেন।’’

north bengal medical college waste patients trouble
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy