Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

নির্যাতনের ফোন বেশি আসছে প্রবীণদের থেকেই

লকডাউনের শুরুতে পুলিশ বয়স্ক মানুষদের প্রায় আগলে রেখেছিল। বিভিন্ন থানায় আমার বন্ধু যে সব অফিসার রয়েছেন তাঁদের মুখ থেকে শুনেছি, বয়স্কদের বাড়িতে খাবার, ওষুধ এমনকি পুজোর ফুলও পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় (আইনজীবী)
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০৮:৪০
Share: Save:

লকডাউন বলতে কী বোঝায়?

সেই সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কোনও ধারণাই ছিল না। বিশ্বব্যাপী এমন লকডাউন কেউ কখনও দেখেননি। এর কোনও স্কেচ, প্ল্যান, পলিসি, ব্লু-প্রিন্টও নেই। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন নিজেদের তৈরি রেকর্ড নিজেরাই ভাঙছে, আবার গড়ছে।

আর এই সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ছবিই যেন মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর করে তুলছে। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সমাজের প্রবীণ নাগরিকদের অসহায় অবস্থার মধ্যে বেঁচে থাকা। এক দিকে দেখা যাচ্ছে বয়স্ক মানুষেরা অশক্ত শরীরে কোনও ভাবে নিজেরা নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকছেন। কোথাও আবার দেখা যাচ্ছে, বাড়িতে তাঁদের ছেলে-বৌমা কিংবা অন্য পরিজনেরা রয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁদের হাতেই অত্যাচারিত পরিবারের বয়স্কেরা।

এই সময়ে অনেকেই আলোচনা করছেন গার্হস্থ্য হিংসার নানা ঘটনা নিয়ে। এই লকডাউন আর করোনা আবহে স্বামীরা স্ত্রীদের হাতে বা স্ত্রীরা স্বামীদের হাতে কতটা নির্যাতিত কিংবা নির্যাতিতা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু বয়স্ক অশক্ত বাবা-মায়েরা সন্তানদের হাতে কতটা সুরক্ষিত কিংবা অসহায় বোধ করছেন, তা নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। আমি কিন্তু মার্চ মাস থেকে আজ অবধি অন্য বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি সব চেয়ে বেশি ফোন পেয়েছি বয়স্ক মানুষদের কাছ থেকেই। যাঁরা ছেলেমেয়েদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

ছোট ফ্ল্যাট কিংবা ঘরে দীর্ঘদিন বন্দি বয়স্ক মানুষেরাও। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। এক রকম মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন। সেই পরিস্থিতিতে আবার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। কোথায় যাবেন, কোথায় অভিযোগ করবেন অনেকেই জানেন না। আগে হলে কোর্টে অভিযোগ দায়ের করতাম। মহামান্য হাইকোর্ট কিন্তু বিভিন্ন মামলায় পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, মা-বাবাদের তাঁদের নিজেদের বাড়ি থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করা যাবে না। কিন্তু আমি যে বয়স্কদের নিয়ে কোর্টে যাব, তা-ও এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। বেশির ভাগ সময়েই কোর্ট পুরোপুরি বন্ধ থাকছে।

এ সব ক্ষেত্রে লকডাউনের শুরুতে পুলিশ বয়স্ক মানুষদের প্রায় আগলে রেখেছিল। বিভিন্ন থানায় আমার বন্ধু যে সব অফিসার রয়েছেন তাঁদের মুখ থেকে শুনেছি, বয়স্কদের বাড়িতে খাবার, ওষুধ এমনকি পুজোর ফুলও পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। একা থাকা বয়স্কদের মোবাইল রিচার্জ পর্যন্ত করে এনে দিয়েছে পুলিশই। কিন্তু গত এক মাস ধরে পুলিশকর্মীরাও অসুস্থ হয়ে পড়ায় থানায় ফোন করেও বয়স্ক মানুষেরা সব সময়ে সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

‘মেনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন্স অ্যাক্ট, ২০০৭’ অনুযায়ী বয়স্কদের সমস্যার সমাধানে সাব ডিভিশনাল অফিসারদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কোভিডের আগে তাঁরা বয়স্কদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের চেষ্টাও করেছিলেন। থানাগুলিও বয়স্ক মানুষেরা অত্যাচারিত হলে ছুটে আসত। কিন্তু মহামারি প্রতিরোধ আইন, ১৮৯৭ কিংবা বিপর্যয় মোকাবিলা আইন, ২০০৫-এর বলে পুলিশের ওই এসডিও, বিডিও কিংবা ডিএমদের আরও অনেক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁরাও এখন আর বয়স্কদের সব সমস্যার সমাধান সব সময়ে করতে পারছেন না।

প্রবীণদের উপরে যে কোনও ধরনের অত্যাচারের ঘটনাই শাস্তিযোগ্য। পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই অভিযুক্তকে ধরতে পারে। কাজেই প্রবীণেরা চাইলেই থানায় অভিযোগ করতে পারেন। তাঁরা কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। এ সব ক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং স্থানীয় ক্লাবকেও এলাকার প্রবীণ-প্রবীণাদের খোঁজখবর রাখতে হবে। প্রয়োজনে বয়স্ক মানুষগুলিকে সাহায্য করতে হবে, নিরাপত্তা দিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE