যে কোনও কাজ ভাল ভাবে করার জন্য মনঃসংযোগ জরুরি। কিন্তু যত সমস্যা ওই মনঃসংযোগেই। হাজার চেষ্টা করেও বিক্ষিপ্ত মনকে একাগ্র করতে পারেন না অনেকেই। সেই সমস্যার সমাধান হতে পারে ডিপ ওয়ার্ক পদ্ধতিতে।
ডিপ ওয়ার্ক আসলে কী?
‘ডিপ ওয়ার্ক’ শব্দবন্ধটির সঙ্গে সাধারণের পরিচয় করান যিনি, তিনি আমেরিকান লেখক। তাঁর নাম ক্যাল নিউপোর্ট। তিনি তাঁর বই ‘ডিপ ওয়ার্ক: রুলস ফর ফোকাসড সাকসেস ইন আ ডিসট্র্যাক্টেড ওয়ার্ল্ড’-এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। ক্যাল লিখেছিলেন, “অনেক সময় ভাল এবং সৃষ্টিশীল কাজে গভীর মনঃসংযোগের প্রয়োজন হয়। কারণ, ওই ধরনের কাজের মান উন্নত হওয়া জরুরি। ডিপ ওয়ার্ক পদ্ধতিতে তা করা সম্ভব।”
ডিপ ওয়ার্ক-এর নিয়ম
১। বিচ্ছিন্নতা দূর করা: ডিপ ওয়ার্ক করতে হলে প্রথমেই যা করতে হবে, তা হল মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে, এমন যাবতীয় কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখা। ইমেল, সমাজমাধ্যম বা অন্য যে কোনও ধরনের ‘ডিজিটাল ডিস্ট্র্যাকশন’ তো বটেই, সেই সঙ্গে আশপাশের গোলযোগ থেকেও সম্ভব হলে দূরে থাকুন।
২। নির্দিষ্ট সময় মেপে নেওয়া: কাজে বসার আগে একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন। হয়তো ভাবলেন, ২ ঘন্টা টানা কাজ করবেন। তা হলে ২ ঘণ্টা সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করে কাজ করুন। ঠিক করে নিন, খুব জরুরি না হলে অন্য কোনও দিকে মন দেবেন না।
৩। পরিকল্পনা জরুরি: শুধু সময় নির্ধারণ করে নিলেই হবে না। ওই দু’ঘণ্টা কী ভাবে কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তা-ও ঠিক করে নিতে হবে। দরকার হলে খাতায়-কলমে লিখে পরিকল্পনা করে নিন। ধরা যাক, দু’ঘণ্টায় যে কাজ করবেন বলে ভেবেছেন, সেটিকে চার ভাগে ভাগ করে নিন। প্রতিটি ভাগের জন্য আধঘণ্টা সময় ধার্য করুন। সেই সময় মেপে কাজের গতি ঠিক করুন এবং কাজটি সম্পন্ন করুন।
আরও পড়ুন:
কীভাবে এটি মনঃসংযোগে উপকার করে?
১। ক্যালের মতে, মন অনেকটা পেশির মতো। নিয়মিত ব্যায়াম করলে যেমন পেশি শক্তিশালী হয়, তেমনই নিয়মিত ডিপ ওয়ার্ক অনুশীলন করলে মনঃসংযোগের ক্ষমতাও বাড়ে। রোজ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে দীর্ঘক্ষণ মন দিয়ে কোনও কাজ করে চলেন, তবে আপনার কাছে সেটি একটি নিয়মিত অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। এতে প্রতি দিন ওই নির্দিষ্ট সময় কাজে মন দিতে খুব বেশি চেষ্টাচরিত্র করতে হয় না।
২। ডিজিটাল দুনিয়ায় জীবন নানা রকমের নোটিফিকেশনে ঘেরা। এই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা আসছে, তো পরমুহূর্তে ফেসবুকে আসছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। কিংবা কোনও খবরের নোটিফিকেশন অথবা কোনও ভাল কেনাকাটার অফারের নোটিফিকেশন বা ইমেল। এ সবের ভিড়ে সহজেই মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ডিপ ওয়ার্কের সময় যেহেতু এই সমস্ত নোটিফিকেশনের দৌরাত্ম্য বন্ধ থাকে, তাই মনকে একাগ্র রাখতে সুবিধা হয়।
৩। ডিপ ওয়ার্কের বিশেষত্ব হল, আপনাকে একটিই কাজে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করা। অন্য সমস্ত কাজ থেকে আপনাকে দূরে রাখা। মস্তিষ্ক স্বাভাবিক নিয়মেই একাধিক বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে। সেই সম্ভাবনা কমিয়ে আপনার মনঃসংযোগের ক্ষমতাকে একটি কাজেই নিবদ্ধ করতে দেয় এই পদ্ধতি। এতে কাজের দক্ষতাও বাড়ে।