দুর্গাপুজো বললেই এক নিমেষে দু’টি ভাবনা মাথায় আসে। এক, কী খাবেন আর দুই, কেমন সাজবেন? এর মধ্যে দ্বিতীয় ভাবনাটি একটু হলেও বেশি। কারণ, তার জন্য কিছু বাড়তি পরিশ্রম লাগে। কী কিনবেন, কী পরবেন, পরে ভাল লাগবে কি না ইত্যাদি। কারণ, পুজোর চারটে দিন শুধু কয়েকটা ভাল পোশাক পরে নিলেই তো হল না, সেই পোশাকে যাতে দেখতে ভাল লাগে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। আর কে না জানে যে, ঝরঝরে মেদবর্জিত চেহারা যে কোনও সময়েই অধিক আকর্ষণীয়।
পুজোর আগে ‘ভুঁড়ি কমাতে’ বাঙালি জিম যাতায়াত শুরু করে। কেউ বা অর্ধভোজনে থাকেন। কিন্তু এই পদ্ধতির কোনওটিই বিজ্ঞানসম্মত নয়। এক মাসের মধ্যে ১০ কেজি ওজন কমানো বাস্তবসম্মতও নয়। তা হলে এক মাসে কতটা ওজন কমানো যায়? কী ভাবেই বা তা সম্ভব, সেই প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার ডট কম দ্বারস্থ হয়েছিল পুষ্টিবিদ শ্রেয়া চক্রবর্তীর। তিনি জানালেন, চাইলে বিশেষ ডায়েট চার্ট এবং কিছু নিয়ম মেনে শরীরের কোনও ক্ষতি না করেই এক মাসে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যেতে পারে। তবে কয়েকটি শর্ত মাথায় রাখতে হবে।
ওজন ঝরানোর জন্য যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা দরকারি
১। এটা-সেটা খাবার ইচ্ছেকে দমন করা: খাবারে রাশ টেনে কড়া ডায়েট অনেকেই শুরু করেন। কিন্তু বজায় রাখতে পারেন না। পুষ্টিবিদ শ্রেয়া বলছেন, ‘‘ডায়েট শুরু করলে খাবারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হয়, অনেকেই সেটা পরিকল্পনামাফিক করেন না বলে শরীরে সঠিক পুষ্টির অভাব হয়। আর তা হলেই নানা ধরনের খাবার খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে। তাই ডায়েট করলে সবার আগে নজর দিন, সব রকম পুষ্টি শরীরে যাচ্ছে কি না। তা হলেই খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হবে না।’’
২। শরীর বুঝে খাওয়া : সবার জন্য সব খাবার নয়। একজন সুস্থ মানুষ যা খেতে পারেন, একজন ডায়াবেটিক বা কিডনির রোগ কিংবা হার্টের অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তি তা পারেন না। তাই ওজন কমাতে চাইলে আগে দেখুন, আপনার কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে কি না। সেই বুঝে পেশাদার পুষ্টিবিদ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তৈরি করুন ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট।
৩। বয়স, ওজন এবং লিঙ্গভেদে বদলে যায় খাবার: সমাজমাধ্যমের দৌলতে এখন ওজন কমানোর নানা ধরনের পরামর্শ জানতে পারছেন মানুষ। কিন্তু সেই সব পরামর্শই বদলে যাবে আপনার ওজন, বয়স এবং লিঙ্গভেদে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এক জন পুরুষের যে পুষ্টি প্রয়োজন, এক জন মহিলার তা প্রয়োজন না-ও হতে পারে। তাই সেই সব দিক বুঝে খাদ্যতালিকা তৈরি করুন।
৪। জরুরি শরীরচর্চাও: সবার জীবনযাত্রার ধরন সমান নয়। কারও দিনের বেশির ভাগ সময় শুয়ে-বসে কাটে। কারও অফিসেই কেটে যায় ৯ -১০ ঘণ্টা। টানা চেয়ারে বসে থাকতে হয় অনেক ক্ষণ। আবার কারও দৌড়দৌড়ি করেই কাজ। এমনও অনেকে আছেন, যাঁদের সারা দিন বসে কাটলেও দিনের একটা সময় হাঁটাহাঁটি হয় বা মনে করে দিনে এক বার শরীরচর্চা করেন। এঁদের প্রত্যেকের জীবনযাত্রার প্রভাব পড়ে ওজনে। পুষ্টিবিদ বলছেন, ‘‘যদি দিনের বেশির ভাগ সময়েই শুয়ে বা বসে কাটান, তা অবিলম্বে বদলানো দরকার। দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটুন। বা অন্তত ১৫-২০ মিনিট শরীরচর্চা করুন। তার পাশাপাশি ডায়েট করলে তবেই কাজ হবে।’’
ওজন ঝরানোর ডায়েট চার্ট কেমন হবে?
ওজন ঝরানোর ডায়েট চার্ট উপরের ওই সমস্ত শর্ত মাথায় রেখে তবেই অনুসরণ করা উচিত। সেই হিসাবে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ডায়েট চার্ট। এখানে যে ডায়েট চার্ট দেওয়া হল— সেটা কোনও বড় অসুখ বা কোনও ক্রনিক অসুখ থাকলে পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই মানুন।
সকালে—
১। দিন শুরু করুন ২০০ মিলিলিটার ঈষদুষ্ণ জল খেয়ে।
২। আধ ঘণ্টা পরে খান ৬টি ভেজানো কাঠবাদাম। এর সঙ্গেই চিনি, দুধ ছাড়া চা খেতে পারেন। (চাইলে চা আরও আধ ঘণ্টা পরে খেতে পারেন। কিন্তু চায়ের সঙ্গে বিস্কুট খাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে চা আর আমন্ড একসঙ্গেই খেলে ভাল।)
৩। সকাল ১০টার মধ্যে প্রাতরাশ করে নিন। এই সময় হাই প্রোটিন খাবার খেয়ে নিন। ২টি ডিমের সাদা অংশ এবং সঙ্গে ভেজানো অঙ্কুরিত মুগের স্যালাড।
বেলায়—
দুপুর ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে খান যে কোনও একটি ফল। মরসুমি ফল, ভিটামিন সি বেশি আছে এমন ফল খেতে পারেন এই সময়।
দুপুরে—
দুপুরে ভাত খেতে চাইলে ব্রাউন রাইস অথবা মিলেট্স অথবা শ্যামা চালের ভাত খান। এই সময়ে বেশি প্রাণিজ প্রোটিন রাখুন পাতে। বাড়িতে সাধারণ তেলমশলায় তৈরি মাছ অথবা মুরগির মাংস অথবা পনির খেতে পারেন। সঙ্গে রাখতে পারেন সবুজ শাকসব্জি দিয়ে তৈরি একটি তরকারি এবং শসার স্যালাড।
বিকেলে—
দুপুরের ভাত খাওয়ার পরে বিকেলের দিকেই এটা-সেটা খেতে মন চায়। সেই ইচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করতে বিকেল ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে খান দই, অন্তত এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা চিয়াবীজ, কিছুটা কুমড়োর বীজ, তিসির বীজ একসঙ্গে মিশিয়ে। স্বাদের জন্য এতে অল্প কালো কিশমিশ ছড়িয়ে নিতে পারেন। অথবা মিষ্টি স্বাদ পছন্দ না হলে দিতে পারেন ভাজা জিরের গুঁড়ো বা চাট মশলা।
রাতে—
রাতের খাবার একটু আগে খেতে পারলেই ভাল। শোয়ার অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে ডিনার করুন। তবে ডিনারে প্রাণিজ প্রোটিন না রাখাই ভাল। কারণ তা থেকে শরীরে প্রদাহ হতে পারে। যেহেতু রাতে হাঁটাচলার মাত্রা কমে যায়, তাই ওই ধরনের খাবার এড়িয়ে চললেই ভাল। একই কারণে দুধও এড়িয়ে যাওয়া উচিত। রাতের পাতে রাখুন ১-২টি মাঝারি মাপের আটার রুটি। বাড়িতে হালকা তেল-মশলায় বানানো যে কোনও তরকারি। সয়াবিনের তরকারি হতে পারে, ডাল হতে পারে, মটর বা কাবলি ছোলার ঘুগনিও হতে পারে। রাতে এর সঙ্গে অবশ্যই খান শসা, টম্যাটোর স্যালাড।
তবে এর পাশাপাশি আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে বলছেন পুষ্টিবিদ। তিনি জানাচ্ছেন, দিনে খেয়াল করে ২-৩ লিটার জল খেতেই হবে। পাশাপাশি করতে হবে হালকা শরীরচর্চাও। তবেই মিলবে সুফল।