Advertisement
০২ মে ২০২৪
Cafeteria

অফিসে নয়, বাড়িতেও নয়, ক্যাফে থেকে কাজ করার প্রবণতা বাড়ছে

ক্যাফেটেরিয়ায় যে ধরনের হাল্কা গুনগুন চলে, তা কাজ করার উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়।

কফির গন্ধ বাড়িয়ে দেয় কাজ করার উৎসাহ।

কফির গন্ধ বাড়িয়ে দেয় কাজ করার উৎসাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:০৪
Share: Save:

গত ১২ বছরে বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করছেন কৌশিক সাহা। মূলত ‘ব্র্যান্ডিং’ বিভাগে কর্মরত কৌশিক। তাঁকে যে নিয়মিত অফিস যেতে হয়, এমনটা নয়। তা বলে যে তিনি বাড়ি থেকে কাজ করেন, তাও নয়। তার সবচেয়ে পছন্দের ‘কাজের জায়গা’ হল পাড়ার ক্যাফে। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা কৌশিক সাতসকালেই ল্যাপটপ বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। গিয়ে বসেন মোটামুটি দামি ক্যাফের আরামদায়ক সোফায়। শুরু করে দেন কাজ। তবে তিনি একা নন, হালের গবেষণা বলছে, ক্যাফেতে বসে অফিসের কাজ করার প্রবণতা বাড়ছে। এর পিছনে রয়েছে কয়েকটা কারণও। ৫ ইন্দ্রিয়ের ৫ ধরনের আরাম।

শব্দ: অন্য চাকরির পাশাপাশি চিত্রনাট্য লেখেন উৎপল চৌধুরী। ফাঁকা সময়ে কখনও ছোট দৈর্ঘ্যের ছবি, ওয়েব সিরিজের চিত্রনাট্য বা শ্রুতিনাটক লেখেন তিনি। আর এই উপরি কাজের পুরোটাই তিনি সামলান ক্যাফে থেকেই। ‘‘ক্যাফের নিজস্ব একটা শব্দ আছে। মানুষ চাপা গলায় কথা বলেন। হাল্কা গান বাজে। এতে আমার কাজটা ভাল হয়’’, বলছেন কৌশিক। এমনকি অন্যদের চাপা গলায় বলা কথা কানে এলে, তার থেকে ১টা-২টো শব্দ নিজের লেখায় ঢুকিয়েও দেন তিনি। ২০১২ সালে হওয়া ‘জার্নাল অব কনজিউমার রিসার্চ’-এর রিপোর্ট বলছে, ক্যাফেটেরিয়ায় যে ধরনের হাল্কা গুনগুন চলে, তা কাজ করার উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়।

গন্ধ: ক্যাফের ভিতরে নানা ধরনের সুগন্ধী ছড়ানো হয়। তা ছাড়া যাঁরা আসেন, তাঁদের অনেকে নানা ধরনের সুগন্ধী ব্যবহারও করেন। তার সঙ্গে মেশে কফির সুবাস। সবটা মিলিয়ে ক্যাফের ভিতরে যে সুগন্ধ তৈরি হয়, তাও কাজের উৎসাহ বাড়ায় বলে জানিয়েছে ‘জার্নাল অব কনজিউমার রিসার্চ’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট।

স্পর্শ: ‘‘আমার অফিসে নির্দিষ্ট বসার জায়গায় বসে কাজ করতে হয়। বাড়ি থেকে কাজ করলেও সেই একই চেয়ার আর টেবিল। কিন্তু ক্যাফের এক সোফা থেকে অন্য সোফায় সরে যেতে পারি’’, বলছেন হিসাবরক্ষক উৎসা বর্মন। নিউ ইয়র্কের ‘ইউনিভার্সিটি অব আরকিটেকচার’-এর গবেষক কোরিডন স্মিথের বক্তব্য, সোফার নরম গদির ছোঁয়া, অফিসে যেমন টেবিল থাকে, তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা টেবিল— এগুলো কাজের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ‘‘ইচ্ছে হলেই সোফায় পা তুলে বসে কাজ করতে পারি। অফিসে তো তা পারি না’’, বলছেন উৎসা।

রূপ: ক্যাফের নিস্তেজ আলো, তার সঙ্গে অন্দরসজ্জা কাজ করার উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। এমনটাই দাবি কোরিডন স্মিথের। ‘‘হেডফোন লাগিয়েও যদি কাজ করেন, তাতেও আপনার মনে হবে না, আপনি একা। নানা মানুষের আসা-যাওয়া, দিনের আলো ক্রমশ পাল্টে যাওয়া, কাচের জানলার ও পাশে লোকজনের হাঁটাচলা— এগুলো কাজ করার ক্ষেত্রে সাহায্যই করে’’, মত তাঁর।

স্বাদ: লকডাউনে পর কফি পানের প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে বহু মানুষের মধ্যেই। কফি পান কাজে উৎসাহ দেয়। আমেরিকার কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টেপার স্কুল অব বিজনেস’-এর অধ্যাপক সুনকি লি-র মতে, কফি সব সময় কাজের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। মন চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে এই পানীয় খুবই কাজে লাগে। ‘‘বর্তমানে আমরা একে ‘কফি শপ এফেক্ট’ নামে ডাকছি’’, বলছেন লি। একই কথা বলছেন সুজয় গুহও। পাকা চাকরি নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেটমাধ্যম সামলান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ল্যাপটপের দিকে দীর্ঘ ক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হয়। খুব সজাগ থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে কফি দারুণ কাজে লাগে। তাই ক্যাফেতে বসে কাজ করাই পছন্দের। চাইলেই মুখের সামনে হাজির কাপ।’’

কোভিডের কারণে ক্যাফের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছিল। বহু কফিশপ বন্ধও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাজের প্রয়োজনেই তাদের অনেকগুলো আবার ফিরবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী দিনে তাদের প্রয়োজনীয়তা বাড়ার সম্ভাবনাও বিস্তর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cafeteria Work from home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE