Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
MENTAL HEALTH

মনের অসুখের দাওয়াই কী কী জানেন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

ডেঙ্গি জ্বর হলে অথবা দুর্ঘটনায় চোট পেলে আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই। কিন্তু যদি কোনও কারণে মন-মেজাজ খারাপ হয়, তা হলে মনের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ভাবি ক’জন! আজ ‘ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ ডে’-তে মন ভাল রাখার শপথ নিতে অনুরোধ করলেন মনস্তত্ত্ববিদ মঞ্জুশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ও মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়সন্ধিতে পৌঁছনো ২০ শতাংশ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা যায়। ১৪ বছর বয়সের মধ্যে ৫০ শতাংশের এবং ২৪ বছর বয়সে ৭৫ শতাংশের মনের অসুখ ধরা পড়ে। এ থেকে নিষ্কৃতির উপায় জানেন?

মানসিক সুস্থতা নীরোগ শরীরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ছবি: শাটারস্টক।

মানসিক সুস্থতা নীরোগ শরীরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। ছবি: শাটারস্টক।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:১৯
Share: Save:

আমাদের জীবনযাপন দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কাজে-অকাজে নানা কারণে সকলেই দৌড়াচ্ছি। আর এর ফলে বাড়ছে শরীর ও মনের চাপ। বিশেষ করে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য নানা ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। মনের অসুখ হলে লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসা করানো দরকার।

এই বিষয় নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেল্‌থ’ ১৯৯২ সালে ১০ অক্টোবর দিনটিকে ‘ওয়ার্ল্ড মেন্টাল হেলথ ডে’ হিসাবে ঘোষণা করেছেন। সেই থেকে প্রত্যেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দেশেও এই দিনটি পালন করা হচ্ছে। এবারের মেন্টাল হেলথ ডে-র থিম হল ‘ইয়ং পিপল অ্যান্ড মেন্টাল হেল্‌থ ইন আ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’।

ছোটদের মনের সমস্যা বাড়ছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( হু)-র এক পরিসংখ্যানে জানা গিয়েছে বয়ঃসন্ধির কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মনের অসুখ বাড়ছে। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনো ২০ শতাংশ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা যায়। ১৪ বছর বয়সের মধ্যে ৫০ শতাংশের এবং ২৪ বছর বয়সে ৭৫ শতাংশের মনের অসুখ ধরা পড়ে।

আরও পড়ুন: তিন রেস্তঁরায় চুটিয়ে খান, দাম দিন মোটে একটায়!

বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনো ২০ শতাংশ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা যায়। ছবি: শাটারস্টক।

দেখা গিয়েছে, সত্তর শতাংশ ক্ষেত্রে ছোটরা ১৮ বছরের মধ্যে কোনও না কোনও সময় মানসিক সমস্যার শিকার হয়। বড়রা তা বুঝতে না পেরে বকাবকি আর মারধর করলে সমস্যা বেড়ে গিয়ে আত্মহনন পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। বিভিন্ন মনের অসুখের মধ্যে আছে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, ইটিং ডিসর্ডার, পারসোনালিটি ডিসর্ডার, বাইপোলার ডিসর্ডার, স্ক্রিজোফেনিয়া ইত্যাদি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনের অসুখের উপসর্গ হিসেবে চুপচাপ বসে থাকা, চিৎকার চেঁচামেচি, জিনিসপত্র ভাঙচুর, মারধর আত্মহত্যার কথা বলা ও চেষ্টা করা ইত্যাদি দেখা যায়। এ রকম হলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

মনের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেট

বাবা-মা দু’জনেই ব্যস্ত, অন্য দিকে ছোট পরিবার বাড়িয়ে দিচ্ছে শিশুদের একাকিত্ব। তাই বাচ্চাদের সময় কাটে ইন্টারনেট দুনিয়ায়।বাচ্চা থেকে বড় সকলের মনের অসুখের এটি এক অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে বাস্তবকে মেলাতে না পারায় সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এর থেকে বার করার দায়িত্ব অবশ্যই বাবা-মা-সহ কাছের মানুষদের। একই সঙ্গে স্কুলেরও একটা দায়িত্ব আছে। তবে সবার আগে সচেতন হতে হবে বাড়ির মানুষদের। বাবা-মা নিজেরাই যদি ইন্টারনেটে আসক্ত হন, বাচ্চাকে সময় দেবেন কী ভাবে! কাছের মানুষদের সঙ্গ না পেলে বাচ্চাদের সমস্যা হবেই। শিশু থেকে বয়স্ক সকলেরই মনের অসুখের পেছনে একাকীত্ব একটা বড় কারণ।

আরও পড়ুন: কম ক্যালোরি খেয়ে মেদ ঝরাতে চান? তা হলে এগুলোই সেরা সমাধান

আপনি আচরি ধর্ম

ছোটদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ক্রমশ বাড়ছে। তাই প্রতি দিনই বাবা-মা-বন্ধুদের সঙ্গে ঝামেলা, এমনকী সহপাঠীদের মেরে ফেলার মতো ঘটনাও ক্রমশ বাড়ছে। এর জন্য কিন্তু বড়দের ভুমিকা নেহাত কম নয়। বিশেষ করে ছোট থেকে বাবা-মাকে যেমন আচরন করতে দেখে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের আচরণে তার ছাপ পড়ে। বেশির ভাগ মা তাঁদের বাচ্চাকে টিফিনের ভাগ দিতে বারণ করেন। অথচ বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার মধ্যে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে চলার সূত্রপাত। এমনকী, কোনও সহপাঠী যদি তাঁর থেকে এক-দু’নম্বর বেশি পায় তাই নিয়েও অনেক মা-বাবা তুলনা করে বাচ্চাটিকে হেয় করেন। এর থেকে বাচ্চাদের মনে হিংসার সৃষ্টি হয়। মনে রাখতে হবে ক্লাসে কিন্তু সবাই ফার্স্ট হয় না। আর পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ দিলে পড়ার প্রতি বাচ্চার অনীহা তৈরি হবে, এ কথাও বোঝা উচিত। বাচ্চাকে ভাল ব্যবহার শেখাতে হলে নিজেদেরও সকলের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা দরকার। ছোটদের সামনে কখনও সহকর্মী বা বসের নিন্দে অথবা আত্মীয়দের নিন্দা ও সমালোচনা করবেন না। সব থেকে বড় কথা ছোটদের সব সময় একটা নিয়মের মধ্যে বড় করে তোলা উচিত। যা চাইবে তাই করতে দিলে মনের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।

মানসিক সমস্যায় সহযোগিতা করুক কর্মপ্রতিষ্টানও

মনের অসুখ নিয়ে আগের থেকে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। এমনকী, হেলথ ইন্সিওরেন্সের তালিকাভুক্ত হয়েছে মানসিক অসুস্থতাও। কিন্তু কাজের জায়গায় এই সাহায্য পাওয়া যায় না। আজকের যুগেও মানসিক সমস্যার কথা শুনলে চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। বিশেষ করে কর্পোরেট সংস্থার অনেক কর্মীকে বলতে শুন, জ্বর হলে বা পা ভেঙে গেলে ছুটি নিতে পারি, কিন্তু কাউন্সেলিংয়ের জন্যে ছুটি পাওয়ার আবেদন বলাই যায় না। এই ধারণা বদলাতে না পারলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। একই ভুমিকা নিতে হবে স্কুলগুলিকেও। বাচ্চাদের কোনও মনের সমস্যা হলে বকাবকি বা শাস্তি না দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।

আরও পড়ুন: অজান্তেই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন না তো?

পাশে আছি। রোগ সরাতে ভরসা হয়ে উঠুন। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

মন ভাল রাখার কিছু উপায়

মনের ভাব সব সময় প্রকাশ করা উচিত। কাছের মানুষদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিলে যেমন আনন্দ বহু গুণ বেড়ে যায়, তেমনই দুঃখ ভাগ করে নিলে দুঃখ অনেক কমে যায়। কম ঘুম হলে মনের উপর চাপ বাড়ে, ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমনো উচিত। সঠিক ডায়েট মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। তাই সুষম খাবার খেতে হবে। মা, বাবা, ঠাকুমা, ঠাকুর্দা, ভাই, বোন আর ভাল বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে মন ভাল থাকবে। মোবাইলে চ্যাট না করে সামনাসামনি কথা বললে মনের অসুখ পালিয়ে যায়। সপ্তাহে এক দিন কিছু ক্ষণ সময় ছুটি উপভোগ করা দরকার। ভাল লাগার জিনিস তা গান শোনাই হোক বা বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়া— যা ভাল লাগে তা-ই করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করে ওজন ঠিক রাখা দরকার। ওজন বাড়লে ডিপ্রেশন বাড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

World Mental Health Day Fitness Tips Health Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE