Advertisement
০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

রমজানি স্বাদে জাকারিয়া যেন শহরের ফুড স্ট্রিট

একমাত্র রমজানের কলকাতা তার খুঁটিনাটি জানে। ফিয়ার্স লেন, কলুটোলার দিক থেকে জাকারিয়া স্ট্রিট— নাখোদা মসজিদের পাড়ায় পদে পদে অপেক্ষমান অজস্র বিস্ময়। এমনিতে এ পা়ড়ার বাতাসে বছরভরই মিশে থাকে সুখাদ্যের সুরভি। কিন্তু রমজানে এ তল্লাট দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানেই ‘ফুডওয়াক’!

রসনা: বসেছে লোভনীয় খাবারের পসরা। নিজস্ব চিত্র

রসনা: বসেছে লোভনীয় খাবারের পসরা। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০১:৫৪
Share: Save:

মাহি আকবরি আর মুর্গ চেঙ্গিসি! গুগ্‌ল করলে এমন মাছ-মুরগির রেসিপি পাবেন না, হলফ করে বলা যায়।

একমাত্র রমজানের কলকাতা তার খুঁটিনাটি জানে। ফিয়ার্স লেন, কলুটোলার দিক থেকে জাকারিয়া স্ট্রিট— নাখোদা মসজিদের পাড়ায় পদে পদে অপেক্ষমান অজস্র বিস্ময়। এমনিতে এ পা়ড়ার বাতাসে বছরভরই মিশে থাকে সুখাদ্যের সুরভি। কিন্তু রমজানে এ তল্লাট দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানেই ‘ফুডওয়াক’!

শেষ বিকেলে মাগরিবের নমাজের সামান্য আগে মাহি আকবরি আর মুর্গ চেঙ্গিসি-র ঠেকেই দেখা সেনাবাহিনীর কর্নেল পীযূষ ভরদ্বাজের সঙ্গে। বছর তিনেক আগে কলকাতায় বদলি হওয়া ইস্তক এই হিমাচলী যুবা রমজানে এ পাড়ায় আসছেন। ‘‘শুধু রোজাদারেরা নন, গোটা কলকাতার খাইয়েরাই আসেন।’’— হেসে বললেন স্পেশাল মাছ-মুরগির স্বাদ-স্রষ্টা মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। বছরভর লস্যি, ফালুদা, কফি বিক্রি করেন সাহাবুদ্দিন সাহেব। কিন্তু রমজানে তাঁর মাছ-মুরগির পদ জাকারিয়ার গৌরব।

আরও পড়ুন: ঠান্ডা নয়, গরম কফিই গরমে শরীর ঠান্ডা করে

রমজান বলতেই থকথকে মাংসভরা ডালের মতো হালিমের খিদে পায় আমবাঙালির। পার্ক সার্কাস, জাকারিয়া, খিদিরপুরের বাইরে কলকাতার হালিম-মানচিত্র এখন বিস্তৃত হাতিবাগান, নাগেরবাজার, গড়িয়াহাটেও। তবু জাকারিয়ার মেনুর বৈচিত্র্যই আলাদা। শীতে সুফিয়ানার প্রভাতী মাংসের ঝোল নিহারির মতো রমজানেও স্বাদ-অস্ত্র উপুড় করে সে। কলুটোলার ইসলামিয়া হোটেলের স্পেশাল হালিমে গুল্লি গুল্লি মাটন কোফতার মিশেল অনেককেই এ পাড়ায় টেনে আনে। ফিয়ার্স লেনের দিকের শতাব্দী-প্রাচীন মেঠাইওয়ালা হাজি আলাউদ্দিনের ভাঁড়ারে নানা কিসিমের স্পেশাল খাজলা। এই খাজলা আদতে কম মিষ্টি খাজা, যা দুধে ডুবিয়ে খেতে অমৃত।

কলুটোলা থেকে বলাই দত্ত স্ট্রিট ধরে ডাইনে বেঁকে জাকারিয়ার মুখে এগোতেই আবার স্পেশাল বাখরখানির ‘স্টেশন’। ৮০ টাকার শুকনো, ফুরফুরে, প্রকাণ্ড গোলাকার দুধে ভিজিয়ে প্রাতঃরাশের মাওয়াঠাসা রুটি। ১০ দিন তাজা থাকবে বাখরখানি। মেটিয়াবুরুজ থেকে আসা মহম্মদ হাসিমের স্টকে রয়েছে স্পেশ্যাল খাস্তা বিস্কুট পাকিজা, মাকুটি বা মাংসের ঝোল দিয়ে খাওয়ার মিষ্টি রুটি শিরমল। দিলশাদ কবাবির খিরি কাবাব, সুতি কাবাব বা কলুটোলায় চিকেনের পেয়ারে কবাব তো বছরভর মেলে! রমজানে পদে পদে মাংসের কুচিভরা সামোসা, দইবড়া, পাঁচ টাকার ফলটলের সঙ্গে আমিনিয়া, সুফিয়ানার স্পেশাল বিরিয়ানিও দেদার। দুধেল সরের প্রলেপ জড়ানো রমজানি শাহি টুকরাও বড় মধুর। বেলা বারোটা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত সরগরম গোটা তল্লাট।

এত ভিড়েও স্বাদ, যত্ন, আয়োজন নিয়ে ভয়ানক খুঁতখুঁতে সাহাবুদ্দিন সাহেব। মাছ-চিকেনের গায়ের ৫৫ না ৪৫ রকমের মশলা হামানদিস্তায় গুঁড়ো হবে। মানিকতলা বাজারের আধ কেজি কাতলাপেটি থেকে মাছের জন্য খাঁটি সর্ষের তেল, চিকেনের ঘি-ডালডার মান, রান্নার তামার বাসন— একফোঁটা আপস নেই।

অস্থায়ী দোকানে বাগদা চিংড়িতে মশলা মাখাতে মাখাতে বালেশ্বরের যুবক আব্দুল করিম হাসলেন, ‘‘উপোস করে খাটনির ধকল থাকলেও রোজগারও এখন ডবল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE