শরীরে তাঁদের মারণ রোগ। ‘অপরাধ’ এটাই। ‘শাস্তি’ হিসেবে কোথাও মারধর করে ভাঙা হল ঘর-বাড়ি। কোথাও বা বাড়ি থেকে সপুত্র উচ্ছেদ করা হল রোগীকে।
এডস আক্রান্ত, মাঝ বয়সী এক দম্পতি ও সপুত্র মাশনিবার সাক্ষী থাকলেন এই ‘অন্ধ’ বিশ্বাসের। যা দেখে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে সমাজবিজ্ঞানীদের প্রশ্ন, পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতা শিবির থেকে এডস বিষয়ক কর্মশালামানুষের ভ্রান্ত ধারণা মুছতে আর কী পদক্ষেপ করা প্রয়োজন?
এড্স যে ‘ছোঁয়াচে’ নয়, তা বোঝাতে মারণ রোগাক্রান্তের সঙ্গে এক পাতে খেলেও সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই বলে বিশেষজ্ঞরা বহু দিন ধরেই প্রচার করছেন। আক্রান্তের রক্ত ও দেহ রসের সংস্পর্শে না এলে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবু, বাড়ির অন্যদের সংক্রমণের আশঙ্কায় ব্যরাকপুরের ঘোলায় দাদা-বউদির বাড়ি, চায়ের দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভাই।
এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারাই মাঝবয়সী এডস আক্রান্ত দম্পতিকে ভর্তি করায় কলকাতার হাসপাতালে। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, রক্ত পরীক্ষায় এডসের জীবাণু মেলায় তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির কাছে ভাড়া থাকতেন তিনি। চা-দোকানই ছিল রুজির উপায়। অভিযোগ, শনিবার দোকানেই চড়াও হন ভাই। মারধর করে ভাঙা হয় দোকানও। তিনি স্বেচ্ছোসেবী সংগঠনে যান। নিউ ব্যারাকপুর ফাঁড়িতে অভিযোগও করা হয়।
অন্য ঘটনা বসিরহাটে হাজরাতলায়। ঘন ঘন জ্বর আসত এক মহিলার। ছোট ছেলেরও একই অবস্থা। রক্ত পরীক্ষায় দু’জনেরই ধরা পড়ে এইচআইভি-র উপস্থিতি। জানাজানি হতেই মহিলার স্বামী মারধর করে সপুত্র তাঁকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। এগিয়ে আসে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের সমীর বিশ্বাস বলেন, “প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও সাড়া মেলেনি।” সংগঠনের পক্ষ থেকেও ওই পরিবারকে বুঝিয়ে ফল মেলেনি বলে জানান তিনি। বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “স্থানীয় বিডিও-কে বলেছি ব্যাপারটা দেখে ব্যবস্থা নিতে।”
একই ঘটনা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের ধামাইতলায়। সেখানেও এড্স আক্রান্ত বৃদ্ধাকে তাড়িয়ে দেন পুত্রেরা। স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠনের চেষ্টায় তাঁর ঠাঁই হয়েছে গ্রামের অদূরে সংগঠনের গড়া এক বাড়িতে। সংগঠনের অজয় নস্কর জানান, বৃদ্ধার ছেলেদের বুঝিয়েও এডস বিষয়ে তাঁদের ‘ভ্রান্ত ধারণা’ মোছা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy