Advertisement
E-Paper

ঝুঁকির অস্ত্রোপচারে জীবন ফিরে পেল দু’দিনের শিশু

মাত্র দু’দিনের শিশু। সময়ের বেশ খানিকটা আগেই জন্ম হয়েছে তার। ওজন দু’কিলোগ্রামেরও কম। তার উপরে বিলিরুবিনও অনেকটাই বেশি। প্রবল শ্বাসকষ্টে ক্রমশ নেতিয়ে পড়ছিল সে। বুকের ভিতরের ঘড়ঘড় শব্দ কপালে ভাঁজ ফেলল চিকিৎসকদের। আসানসোলের এক হাসপাতালে সদ্যোজাত পুত্রের এমন অবস্থা দেখে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তার বাবা-মাও। শিশুটির অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩০
সেই শিশু। দুর্গাপুরের হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

সেই শিশু। দুর্গাপুরের হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

মাত্র দু’দিনের শিশু। সময়ের বেশ খানিকটা আগেই জন্ম হয়েছে তার। ওজন দু’কিলোগ্রামেরও কম। তার উপরে বিলিরুবিনও অনেকটাই বেশি। প্রবল শ্বাসকষ্টে ক্রমশ নেতিয়ে পড়ছিল সে। বুকের ভিতরের ঘড়ঘড় শব্দ কপালে ভাঁজ ফেলল চিকিৎসকদের। আসানসোলের এক হাসপাতালে সদ্যোজাত পুত্রের এমন অবস্থা দেখে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তার বাবা-মাও। শিশুটির অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। আসানসোলের হাসপাতাল থেকে তাকে দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকেরা। সেখানেই ওই শিশুর বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে তাকে নতুন জীবন দিলেন চিকিৎসকেরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সদ্যোজাত একটি শিশুর ক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য এ দিক-ও দিক হলে বড়সড় কোনও বিপদ ঘটে যেতে পারত। চিকিৎসকদের কৃতিত্বে ওই সফল প্রক্রিয়ায় নতুন জীবন পেল দু’দিনের ওই ছেলে। আপাতত এক দিন তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হবে। তার পরেই পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে চিকিৎসকদের।

শিশুটির হৃদ্যন্ত্রে জন্মগত সমস্যা ছিল। তার ফুসফুসে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছচ্ছিল না। ফলে শ্বাসকষ্ট ক্রমশ বাড়ছিল। দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে আনার পরে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক হেমন্ত কুমার নায়ক এবং নুরুল ইসলাম তাকে পরীক্ষা করেন। ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে জানা যায়, পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে অবিলম্বে কোনও ব্যবস্থা না নিলে তাকে বাঁচানো কঠিন হবে। পরিবারের লোকজনকে পরিস্থিতির কথা বুঝিয়ে তাঁদের অনুমতি নেওয়া হয়। রুটিন কিছু রক্তপরীক্ষার পরেই শিশুটিকে বাঁচাতে তড়িঘড়ি নিওনেটাল বেলুন পালমোনারি ভ্যালভালোপ্লাস্টি করেন চিকিৎসকেরা।

কী ভাবে? তাঁরা জানিয়েছেন, প্রথমে শিশুটির পায়ের শিরা দিয়ে একটি বিশেষ ধরনের বেলুন (মিনি থাইস্যাক বেলুন) ঢোকানো হয়। তার পর ডান দিকের অলিন্দ, ডান দিকের নিলয় হয়ে ডান দিকের মহাধমনীর সংযোগস্থলে পৌঁছয় সেই বেলুন। তার পরে সেটিকে ফুলিয়ে ভাল্ভ প্রশস্ত করা হয়। ফলে রক্ত সঞ্চালনে শিশুটির আর কোনও সমস্যা ছিল না। প্রক্রিয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ১০০ শতাংশে পৌঁছয়।

দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান, কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সত্যজিৎ বসু বলেন, “এক বছরের নীচে যে কোনও শিশুর দেহে ওই ধরনের প্রক্রিয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তার উপরে আবার এই শিশুটি সময়ের আগে জন্মানোয় তার ওজনও খুবই কম। পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্টদের কৃতিত্বের পাশাপাশি অ্যানাস্থেটিস্টদের ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসক ইমন, আশিস বঙ্গবাস এবং নিত্যানন্দ কুমার শিশুটিকে নতুন জীবন দিলেন।”

দুর্গাপুরের ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এত কম বয়সী শিশুর হার্টের সফল অস্ত্রোপচারের নজির পূর্বাঞ্চলে খুব কম প্রতিষ্ঠানেরই আছে। তাঁদের ওই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হৃদ্রোগ চিকিৎসকরাও। হৃদরোগ চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার বলেন, “প্রথমত এ জন্য পেডিয়াট্রিক অ্যানাস্থেটিস্ট প্রয়োজন হয়। এ রাজ্যে তার অত্যন্ত অভাব। এই ধরনের প্রক্রিয়ার জন্য চিকিৎসকের দক্ষতার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অপারেশন থিয়েটারে যে কোনও সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই দক্ষ চিকিৎসক এবং অপারেশন থিয়েটারে সব ধরনের সহায়তার ব্যবস্থা থাকাটা জরুরি।”

দু’দিনের ওই শিশুপুত্রটি প্রাথমিক সব ঝুঁকি কাটিয়ে উঠেছে। আপাতত তাকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় বাবা-মা।

valvuloplasty neo natal care
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy