Advertisement
E-Paper

দু’দিনে মৃত ৯ শিশু, বিক্ষোভ মেডিক্যালে

দু’দিনে মৃত্যু হয়েছে ন’টি শিশুর। বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান মৃত শিশুদের আত্মীয়েরা। তবে হাসপাতালের দাবি, মৃত শিশুদের বেশিরভাগই ভিন্ন জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে এখানে এসেছিল। একেবারে শেষ মূহুর্তে তারা এখানে আসায় চিকিৎসার সময় মেলেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০১:৩৪
সন্তান হারিয়ে শোকস্তব্ধ পরিজনেরা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

সন্তান হারিয়ে শোকস্তব্ধ পরিজনেরা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

দু’দিনে মৃত্যু হয়েছে ন’টি শিশুর। বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান মৃত শিশুদের আত্মীয়েরা। তবে হাসপাতালের দাবি, মৃত শিশুদের বেশিরভাগই ভিন্ন জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে এখানে এসেছিল। একেবারে শেষ মূহুর্তে তারা এখানে আসায় চিকিৎসার সময় মেলেনি।

এ দিন সকালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, নবনির্মিত শিশু বিভাগের সামনে ভিড় করেছেন ওই শিশুদের পরিবারের লোকজন। কান্নার মাঝেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, শিশুদের অবস্থা সম্পর্কে আত্মীয়দের ঠিকমতো খবরাখবর দেওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসাও শুরু হয়নি। পরে পুলিশ ডেকে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনেন হাসপাতালের সুপার উৎপলকুমার দা।ঁ সুপার বলেন, “বেশিরভাগ শিশুই সময়ের আগে জন্মেছে, তার উপরে ওজনও কম ছিল। আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিনই এ রকম তিন-চারটি শিশুর মৃত্যু হয়। তবে এই ঘটনায় বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।”

হাসপাতালের শিশু বিভাগে এ দিন সকালে মৃত্যু হয়েছে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানার মাঠবহরা গ্রামের বাসিন্দা নয়ন বাগ্দীর (১২)। তার বাবা সঞ্জয় বাগ্দী বলেন, “সোমবার বিকেলে আমার ছেলেকে সিউড়ি হাসপাতালে থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। ছেলের জ্বর হয়েছিল সঙ্গে মাথাব্যথা। কিন্তু রেফার করার কাগজপত্রে পরীক্ষা করে ভর্তি করাতেই প্রচুর সময় চলে যায়। তার উপর চিকিৎসা করেছে জুনিয়র ডাক্তারেরা। কেন আমার ছেলে মারা গিয়েছে, সে কারণও হাসপাতাল থেকে জানায়নি।” কলকাতার সোনারপুর থেকে কালনা থানার ফুজারি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন শেখ সেলিম। রবিবার মেয়ে রেশমা খাতুনকে পেটের যন্ত্রনা নিয়ে ভর্তি করেন হাসপাতালে। মঙ্গলবার ওই শিশু ওয়ার্ডে একই নামের আরেক শিশুও ভর্তি হয়েছিল। তাকে যে ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা, সেটি তাঁর মেয়েকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন। শেখ সেলিম বলেন, “আমি তখন ওয়ার্ডে ছিলাম বলে ইঞ্জেকশন কেন দেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে ধরা পড়ে এই ইঞ্জেকশন আমার মেয়েকে দেওয়ার কথাই ছিল না। ভুল ইঞ্জেকশনে দেওয়ায় আমার মেয়ে মারাও যেতে পারত।”

কেতুগ্রামের কণ্ঠীনাগ গ্রামের বাসিন্দা সমীর পাঁজা সাত সকালে এতগুলি শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়ে নিজের এক আত্মীয় সায়ক পাঁজাকে শিশুবিভাগের বাইরে নিয়ে আসেন। তাঁর দাবি, “খাট থেকে পড়ে গিয়ে ওর মাথায় আঘাত লেগেছিল। কিন্তু এত শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে ভাবছি হাসপাতালে রাখব কি না।”

এ দিন বর্ধমান মেডিক্যালে প্রথমে হাসপাতালে পরপর ১১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে শোনা গিয়েছিল। শিশুবিভাগে যেহেতু কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না তাই হাসপাতালে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। সুপার উৎপলকুমার দাঁ বলেন, “একটি মৃত শিশুর বাড়ির লোকেরা লোকজন জড়ো করে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছিল। তবে আমরা সময়ে পুলিশকে খবর দেওয়ায় গোলমাল বাড়তে পারেনি। তবে এই তিন থেকে চারটি শিশু মৃত্যুর ঘটনা এখানে তেমন অস্বাভাবিক নয়।”

তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার চারটি ও বুধবার পাঁচটি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে এই হাসপাতালে। বেশিরভাগ শিশুই মারা গিয়েছে হাসপাতালের সিক নিওনেটাল কেয়ার ও এক্সটেন্ডেড সিক নিও নেটাল ইউনিটে। ওই শিশুরা প্রত্যেকেই সময়ের আগে জন্মানো কম ওজনের শিশু। এছাড়া একটি তিন মাসের শিশুর মৃত্যু ঘটেছে পেড্রিয়াটিক কেয়ার ইউনিটে। সে ম্যানেনজাইটিসে আক্রান্ত ছিল। তিনি জানান, সব মিলিয়ে হাসপাতালে প্রতিদিনই এসএনসিইউ, পিকু ও নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট বা নিকুতে ২৫০-র উপর শিশু ভর্তি থাকে। এই চারটি ইউনিট মিলিয়ে বেডের সংখ্যা ২১০। এসএনসিইউতে ২৬, এক্সটেন্ডেড এসএনসিইউতে ৬৪, পিকুতে ১০ ও নিকুতে ১২০টি শয্যা রয়েছে।

২০১১ সালের পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে ওই চারটি ইউনিট খোলা হয়। তার আগে এই হাসপাতালে শিশু বিভাগে প্রায়ই চিকিৎসা গাফিলতিতে শিশুদের মৃত্যুর অভিযোগ উঠত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, শয্যা সংখ্যা কম। তবুও প্রতিদিন প্রচুর শিশু ভর্তি হয়। বেশিরভাগ রেফার করা শিশুদের শেষ মূহুর্তে আনা হয়। ফলে বিশেষ কিছু করার থাকে না।

তখনও দিনে চার-পাঁচটি শিশুর গড়ে মৃত্যু হত এই হাসপাতালে। এখন এসএনসিইউ, নিকু বা পিকু ইউনিট খোলার পরেও সেই শিশুমৃত্যুর গড় চার-পাঁচে দাঁড়িয়ে। কেন? সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর অবশ্য মেলেনি। সুপার শুধু বলেন, “আমাদের এখানে দৈনিক শিশু মৃত্যুর হার শূন্য থেকে পাঁচের মধ্যে ঘোরাফেরা করে।”

bardhaman medical college child death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy