Advertisement
E-Paper

বারবার রেফার, সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা বাবা-মা

‘রেফার ভূত’ পিছু ছাড়ছে না সরকারি হাসপাতালের। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে ৩৩ দিনের এক শিশুকে ‘রেফার’ করা হয়েছিল বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিত্‌সা না করে দু’ঘণ্টার মধ্যে ফের মহকুমা হাসপাতালেই ওই শিশুকে ‘রেফার’ করে দিয়েছে মেডিক্যাল কলেজ।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
জঙ্গিপুর হাসপাতাল চত্বরে অসুস্থ সন্তান নিয়ে বসে আছেন মা কাকলি মাল। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

জঙ্গিপুর হাসপাতাল চত্বরে অসুস্থ সন্তান নিয়ে বসে আছেন মা কাকলি মাল। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

‘রেফার ভূত’ পিছু ছাড়ছে না সরকারি হাসপাতালের।

জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে ৩৩ দিনের এক শিশুকে ‘রেফার’ করা হয়েছিল বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিত্‌সা না করে দু’ঘণ্টার মধ্যে ফের মহকুমা হাসপাতালেই ওই শিশুকে ‘রেফার’ করে দিয়েছে মেডিক্যাল কলেজ। স্তম্ভিত মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বার শিশুটিকে সরাসরি কলকাতায় ‘রেফার’ করে দিয়েছেন। গত ৪ দিন ধরে কোলের ছেলেকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েও চিকিত্‌সা পরিষেবা না পেয়ে আতান্তরে পড়েছেন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার তক্ষক গ্রামের শ্যামল মাল।

বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার কথা শুনে কার্যত হতবাক। তিনি বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার হওয়া ওই শিশুটিকে কেন এবং কী ভাবে পুনরায় রেফার করা হল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। কোন চিকিত্‌সক এমন করেছেন তা তদন্ত করে দেখা হবে।”

আর জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডলের বক্তব্য, “এটিই প্রথম এই ধরনের ঘটনা নয়। এই নিয়ে তিনটি ঘটনা ঘটল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে রেফার হওয়া রোগীকে পুনরায় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রেফার করে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন জঙ্গিপুর হাসপাতালে।” তিনি জানান, সোমবার রনি মাল নামে ৩৩ দিনের ওই শিশুকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রেফারেল কার্ড-সহ জঙ্গিপুর হাসপাতালে ফেরত পাঠিয়েছেন যে চিকিত্‌সক তাঁর স্বাক্ষর অস্পষ্ট। তবে সমস্ত নথিপত্র জঙ্গিপুর হাসপাতালে রাখা রয়েছে বলে জানান তিনি। রেফারেল কার্ডটি ইমেলে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের সুপারের কাছেও পাঠিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসখানেক আগে শ্যামল মালের ছেলে রনি জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে স্বাভাবিক ভাবেই প্রসব হয়। দিন ছয়েক আগে ওই শিশুর পেট ফুলে যায়। শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ তাকে ভর্তি করা হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিত্‌সক মোজাম্মেল হকের অধীনে। ওই চিকিত্‌সক বলেন, “৩০ দিন পর্যন্ত শিশুদের এসএনসিইউতে রাখা যায়। রনির বয়স ছিল ৩৩ দিন। তাই তাকে সাধারণ শিশুদের ওয়ার্ডে রাখা হয়। শিশুটির প্রধান উপসর্গ ছিল পেট ফুলে যাওয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও চিকিত্‌সায় উন্নতি না হওয়ায় শিশুটিকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয় সোমবার সকালে।”

রনির দাদু সজল মাল বলেন, “গাড়ি ভাড়া করে নাতিকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শিশুদের ওয়ার্ডে ঢোকানোর ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই এক চিকিত্‌সক জানিয়ে দেন, ফের জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ জঙ্গিপুর হাসপাতালে যা চিকিত্‌সা ব্যবস্থা রয়েছে এই মেডিক্যাল কলেজেও সেই একই ব্যবস্থা রয়েছে। এরপর ওই চিকিত্‌সক রেফার লিখে আমাদের হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। আমরা ৩৩ দিনের ওই শিশুকে নিয়ে সোমবারই সন্ধে নাগাদ জঙ্গিপুর হাসপাতালে পুনরায় ফিরে এসে ওই রেফারেল কার্ডটি দেখাই। ওরা নাতিকে আবার ভর্তি নেয়।”

এ বার রনি ভর্তি হয় চিকিত্‌সক মোশারফ হোসেনের অধীনে। মোশরফ বলেন, “একটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ফের ওই শিশুকে কী ভাবে কলকাতার কোনও হাসপাতালে না পাঠিয়ে জঙ্গিপুর হাসপাতালে লিখিত ভাবে রেফার করে ফেরত পাঠালো সেটাই মাথায় ঢুকছে না।”

মঙ্গলবারই সকাল ৭টা নাগাদ রনিকে জঙ্গিপুর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার বাবা, মাকে বলা হয়েছে কলকাতার যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্‌সার জন্য নিয়ে যেতে।

৩৩ দিনের শিশুকে নিয়ে কলকাতার কোথায় যাবেন ভেবে-ভেবে কার্যত দিশেহারা তক্ষক গ্রামের ওই দিনমজুর দম্পতি। একটা কিছু সুরাহা মিলবে এই আশায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠায় জঙ্গিপুর হাসপাতালের সামনেই ধর্না দিয়ে বসে থাকেন তাঁরা। মা কাকলি মাল বলেন, “বাড়িতে প্রসব করালে সমস্যা হবে বলে হাসপাতালে এসেছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই প্রসব হয়েছিল। কিন্তু কোলের শিশুকে নিয়ে এভাবে সমস্যায় পড়তে হবে কখনও ভাবিনি।”

এ দিকে, বাইরে রনিকে নিয়ে যখন দিশেহারা তার পরিবার, ঠিক সেই সময়েই আর এক শিশুর মৃত্যু নিয়ে কান্নার রোল ওঠে জঙ্গিপুর হাসপাতালে। সাগরদিঘির বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা রাম রাজমল্ল ও দীপিকা রাজমল্লের অভিযোগ, “জন্মের পর থেকে গত ২৫ দিন ধরে হাসপাতালের এসএনসিইউতে ভর্তি ছিল আমাদের ছেলে। মঙ্গলবার সকালে জানানো হয় ওর মৃত্যু হয়েছে। দেহ নিতে গিয়ে দেখি পায়ের একটা অংশ আগুনে দগ্ধ হয়ে কাঠকয়লার মতো ঝলসে রয়েছে। সিস্টাররা জানান রুম হিটারে পুড়ে এই বিপত্তি ঘটেছে। কী করব ভেবে না পেয়ে ওই মৃতদেহ নিয়েই বেরিয়ে এসেছি।” এই ঘটনার কথা জানতে পেরে হাসপাতালে হাজির লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

যদিও হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু ঘটেনি। গ্যাংরিন হয়ে অসুস্থ ছিল শিশুটি। মৃত্যু হয়েছে সেই কারণেই।”

jangipur hospital refer doctor biman hazra jangipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy