Advertisement
E-Paper

বদলির ডামাডোলের মধ্যেই চলছে মৃত্যুর মিছিল

এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর স্রোত চলছেই। খিঁচুনি-জ্বরের রোগীর ঢল সামাল দিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হিমসিম। পরিষেবার হাল ফেরাতে আরও চিকিৎসক পাঠানোর দাবি উঠেছে। কিন্তু বাড়তি কেউ কাজে যোগ তো দেনইনি, উল্টে এক সঙ্গে ১৯ জন চিকিৎসককে বদলি করে দেওয়ায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কাজকর্মও ভীষণ রকম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন রোগীর পরিজনেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৬
জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মৃত বিপ্লব সিংহের শোকার্ত পরিবার। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মৃত বিপ্লব সিংহের শোকার্ত পরিবার। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যুর স্রোত চলছেই। খিঁচুনি-জ্বরের রোগীর ঢল সামাল দিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হিমসিম। পরিষেবার হাল ফেরাতে আরও চিকিৎসক পাঠানোর দাবি উঠেছে। কিন্তু বাড়তি কেউ কাজে যোগ তো দেনইনি, উল্টে এক সঙ্গে ১৯ জন চিকিৎসককে বদলি করে দেওয়ায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কাজকর্মও ভীষণ রকম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন রোগীর পরিজনেরা।

যাঁদের বদলি করা হয়েছে তাঁরা এখনও তো ওখানেই রয়েছেন। তা হলে অবস্থা এমন কেন?

ওঁদের দাবি, বদলির নির্দেশ পাওয়ার পরে ওই চিকিৎসকেরা এখন ঠাঁই বদলের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তাই সে ভাবে কাজে মন দিতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষের ধারণা, ওঁদের জায়গায় যাঁরা আসবেন, তাঁদেরও পেতে পেতে অন্তত ৭-১০ দিন।

অর্থাৎ, আগামী এক সপ্তাহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পরিষেবা-সঙ্কট বহাল থাকারই ইঙ্গিত। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ কথা মানতে নারাজ। “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে বদলি হওয়া চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট সময়ে ওখানে পৌঁঁছে যাবেন। এবং তার আগে ওখানকার কাউকে অন্যত্র পাঠানো হবে না। তাই কোনও সমস্যা আপাতত নেই।” সোমবার মন্তব্য করেছেন অধিকর্তা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেবও একমত। “চিকিৎসা পরিষেবা ঠিকঠাক আছে। ল্যাবরেটরি চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখা, কর্মী বাড়ানো বা বাড়তি ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা সব হয়েছে।” বলছেন মন্ত্রী। তাঁর দাবি, বাইরে থেকে আসা জীবাণু-বিজ্ঞানী ও ডাক্তারেরা এখানকার চিকিৎসা পরিষেবার মান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে গিয়েছেন।

এরই মধ্যে এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে প্রাণ গিয়েছে আরও দু’জনের। এক জনের নাম বৈকুণ্ঠ সরকার (৫৮), বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডিতে। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অন্য জন বিপ্লব সিংহ (১৫), বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালটুলিতে। সঙ্কটাপন্ন কিশোরটিকে গত বাইশ দিন সিসিইউ’তে রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া রবিবার বিকেলে দীপ্তি বর্মন (৩৪) নামে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের বাসিন্দা যে মহিলার মৃত্যু হয়েছে, তিনিও জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে যে ১৮ জন ভর্তি, তাঁদের অন্তত ১০ জন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত। চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের সিসিইউ’তে রেখে চিকিৎসা চলছে।

পরিষেবায় যদি কোনও সমস্যাই না থাকবে, তা হলে মৃত্যু-মিছিল থামানো যাচ্ছে না কেন?

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “এ সব সত্ত্বেও যে রোগীদের মৃত্যু আটকানো যাচ্ছে না, তা দুর্ভাগ্যের।” গৌতমবাবুর এ-ও দাবি: হাসপাতালে রোগী ভর্তি কমছে। রোগীদের ওষুধ কেনা এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচও সরকারের তরফে মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। “অনেকে আগে ওষুধ কিনেছেন। তাঁদের সেই টাকাও দিয়ে দেওয়া হবে।” বলেছেন তিনি।

রোগীর বাড়ির লোকের কথাবার্তায় কিন্তু মন্ত্রীর আশ্বাস বা দাবির সমর্থন মিলছে না। বিপ্লবের বাবা মহেশবাবু এ দিন জানান, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ওষুধ ও বিভিন্ন টেস্টের পিছনে অন্তত তিরিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবু বাঁচানো গেল না। বিপ্লব ১৬ জুলাই জ্বরে পড়েছিল। প্রথমে তাকে ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দিনভর সেখানে ডাক্তারের দেখা মেলেনি বলে পরিজনদের অভিযোগ। ১৮ জুলাই তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আনা হয়। মহেশবাবুর আক্ষেপ, “হাসপাতালের কাজকর্ম রোজই যেন বেশি বেশি বেহাল হয়ে পড়ছে!”

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ শোনা গিয়েছে প্রতিমাদেবীর মুখেও। অসমের গোসাইগাঁওয়ের বাসিন্দা ওই মহিলার স্বামী গোপাল দাস শিলিগুড়ির উপকন্ঠে ফুলবাড়িতে এক হোটেলে কাজ করতেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে শনিবার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। প্রতিমাদেবীর দাবি, জুনিয়র ডাক্তারেরা প্রথমে এনসেফ্যালাইটিস বলেছিলেন। সেই মতো চিকিৎসা হচ্ছিল। রবিবার এক সিনিয়র ডাক্তার এসে জানান, গোপালবাবুর হার্টের অসুখ। তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। এ-ও বলে যান যে, ওঁর ভুল চিকিৎসা হচ্ছিল।

রবিবার গোপালবাবু মারা গিয়েছেন। প্রতিমাদেবীর আক্ষেপ, “কিছু একটা ভুল যে হচ্ছিল, সেটা পরিষ্কার। তার জন্যই ওঁকে হারাতে হল।”

এর পরে আর পরিষেবায় কী ভাবে ভরসা রাখা যায়, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সদ্য বিধবা।

japani encephalitis north bengal medical college biplab singha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy