লিফ্ট চালানোর লোক নেই। নির্দিষ্ট সময়ে পাম্প চালিয়ে জল তোলা? তার কর্মীও অমিল। এসি খারাপ? সেটাও সারানোর লোক নেই। আলো-পাখা খারাপ হয়ে পড়ে থাকলে সে সব মেরামতির জন্যও কর্মী মিলছে না। এমনকী, অপারেশন থিয়েটারে জরুরি বৈদ্যুতিন কাজ প্রয়োজন হলে সেটাও বহু ক্ষেত্রেই করানো যাচ্ছে না।
ভোটের বাজারে এমনই হাল কলকাতার সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালের। পূর্ত দফতরের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ৯১ জন কর্মীর মধ্যে ৮৭ জনেরই ডাক পড়েছে ভোটের কাজে। ফলে বিভাগের সমস্ত কাজকর্ম লাটে ওঠার জোগাড়। বিভিন্ন বিভাগের চিকিত্সক-নার্স থেকে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সকলেই ত্রস্ত রয়েছেন, কখন কী ঘটে যায়।
ইতিমধ্যেই পূর্ত দফতরের তরফে নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের কাছে চিঠি লিখেও হাসপাতাল কর্তারা অনুরোধ করেছেন, এ ভাবে যেন গণহারে কর্মীদের ভোটের কাজে তুলে নেওয়া না হয়। না হলে পরিষেবা ধাক্কা খাবে।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই আবেদনের কোনও জবাব আসেনি। ফলে একাধিক ওয়ার্ডে মাঝেমধ্যেই জল বন্ধ থাকছে। বহু সময়েই লিফ্ট চলছে না। পাখা, এসি বিকল হলে গরমে পচছেন কর্মীরা।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তা বলেন, “শুধু চিঠি নয়, কোন কর্মীদের একেবারেই ছাড়া যাবে না, তথ্য-প্রমাণ-সহ প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি তা জানান, তা হলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।”
এর আগে অবসর গ্রহণের মুখে থাকা কর্মীকে ভোটের কাজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কিংবা সদ্য কাজে যোগ দেওয়া তরুণ কর্মীকে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্যে বিতকর্র্ তৈরি হয়েছিল। সরকারি হাসপাতাল থেকে কর্মী তুলে নেওয়ার বিষয়টিকে ঘিরেও সেই একই রকম বিতর্ক তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ভোটের জন্য কর্মী তুলে নেওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে, এমনকী সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কেও সমস্যা চলছে। কিন্তু এসএসকেএমের বিষয়টি নজিরবিহীন। মাত্র চার জন কর্মীর ভরসায় কী ভাবে প্রায় ১৮০০ শয্যার একটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চালানো সম্ভব, তা বোধগম্য হচ্ছে না হাসপাতাল কর্তাদের।
এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমইআর)-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “এ ভাবে সমস্ত কর্মী তুলে নিলে হাসপাতাল চলবে কী করে? পূর্ত দফতরের কর্তাদেরই এ নিয়ে আপত্তি তোলা উচিত ছিল। আমি ওঁদের সে কথা জানিয়েওছি। ওঁরা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। আমিও লিখিত ভাবে অনুরোধ জানিয়েছি, যাতে আরও অন্তত ১৮-২০ জনকে রেখে দেওয়া যায়। তা না হলে হাসপাতালের কাজ বন্ধ করে দিতে হবে।”
এমনিতেই পূর্ত দফতরের কর্মীদের কাজকর্ম নিয়ে বেশ কিছু অসন্তোষ রয়েছে হাসপাতাল কর্তাদের মধ্যে। বহু ক্ষেত্রে সাধারণ সময়েই লিফ্ট চালানোর কর্মী থাকেন না, পাম্পে সময়মতো জল না তোলায় নানা ওয়ার্ডের রোগীরা জল পান না। বাকি পড়ে থাকে বৈদ্যুতিক সংযোগ সংক্রান্ত নানা কাজ। ভোটের কাজে কর্মী তুলে নেওয়ায় সেই সমস্যা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীরাই।
দিন দুয়েক আগেই সময়মতো জল না তোলায় উডবার্ন ওয়ার্ডের রোগীরা দিনভর জল পাননি। তীব্র গরমে পানীয় জল নিয়েও হাহাকার পড়েছিল হাসপাতাল জুড়ে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, একাধিক ওয়ার্ডেই সমস্যা শুরু হওয়ায় নাজেহাল অবস্থা হয় রোগী ও হাসপাতাল কর্মীদের।
হাসপাতালের পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ভোটে এ ভাবে কর্মী তুলে নেওয়ায় তাঁদের সমস্যা হচ্ছে সব থেকে বেশি। কারণ নামমাত্র কর্মী নিয়ে এত বড় হাসপাতালের সমস্ত কাজ সুষ্ঠু ভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে সে নিয়ে লোকজনের কাছে তাঁদেরই জবাবদিহি করতে হচ্ছে। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “স্বাস্থ্য ও পূর্ত দফতরের সমন্বয় নিয়ে হাজারো অভিযোগ রয়েছে। ভোটের বাজারে সেই অভিযোগ বড় আকার নিচ্ছে। রোগীদের কাছেও কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছি আমরা। অথচ এ ব্যাপারে আমাদের তিলমাত্র দায় নেই।”
পূর্ত দফতরের এক কর্তা এ বিষয়ে বলেন, “এখানে ২০ জন লিফ্ট-চালক, ১০ জন পাম্পচালক রয়েছেন। সকলে চলে যাচ্ছেন। এমনও হয়েছে যে, অফিসারেরা গিয়ে পাম্প চালিয়েছেন।”
নিয়ম অনুযায়ী সরকারি দফতর থেকে কর্মীদের নামের তালিকা এবং কাজের ধরন নির্বাচন কমিশনে লিখে পাঠাতে হয়। কোন কর্মীদের একেবারেই ছাড়া চলবে না, উল্লেখ থাকে সে কথাও। পূর্তকর্তারা অভিযোগ করেছেন, এসএসকেএমের ক্ষেত্রেও সে সব লেখা হয়েছিল। কিন্তু সেই তথ্য অগ্রাহ্য করেই ৮৭ জনকে চেয়ে পাঠানো হয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশন অবশ্য দাবি করছে, হাসপাতালের তরফে এমন কিছুই জানানো হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy