Advertisement
E-Paper

সব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাচ্ছে সুগার মাপার যন্ত্র

ডায়াবিটিস, স্ট্রোক, ক্যান্সার, হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ রুখতে পশ্চিম মেদিনীপুরেও নতুন সেল খোলার তৎপরতা শুরু হয়েছে। নাম ‘নন কমিউনিক্যাবেল ডিজিজ (এনসিডি) সেল’ বা অসংক্রামক রোগের ক্লিনিক। কী ভাবে এই সেল খোলা হবে, কী ভাবেই বা কাজ করবে, তার নির্দেশিকাও চলে এসেছে জেলায়।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৬

ডায়াবিটিস, স্ট্রোক, ক্যান্সার, হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ রুখতে পশ্চিম মেদিনীপুরেও নতুন সেল খোলার তৎপরতা শুরু হয়েছে। নাম ‘নন কমিউনিক্যাবেল ডিজিজ (এনসিডি) সেল’ বা অসংক্রামক রোগের ক্লিনিক। কী ভাবে এই সেল খোলা হবে, কী ভাবেই বা কাজ করবে, তার নির্দেশিকাও চলে এসেছে জেলায়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরে এনসিডি সেল খোলা হবে। ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপও করা হয়েছে।”

কী ভাবে কাজ করবে ওই সেল?

শুরুতে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলবেন চিকিৎসকেরা। জানবেন, কে নেশা করেন, কে মদ্যপান করেন প্রভৃতি। পরে রক্তচাপ মাপা হবে। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ব্লাড সুগার এবং কোলেস্টেরল মাপা হবে। শুরুতে প্রতিটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ব্লাড সুগার পরিমাপক যন্ত্র পৌঁছনো হচ্ছে।

নির্দেশিকা অনুযায়ী, জেলাস্তরে সেলে থাকবেন পাঁচ সদস্য। সেলের নোডাল অফিসার হবেন উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২)। থাকবেন এক জন জেলা প্রোগ্রাম অফিসার, একজন জেলা প্রোগ্রাম কো অর্ডিনেটর, এক জন ফিনান্স কাম লজিস্টিক অফিসার এবং এক জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। এঁদের মধ্যে প্রথম তিনজন চিকিৎসক। চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসার এবং স্ট্রোক মূলত এই চার ধরনের রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহকুমাস্তরে থাকবে এনসিডি ক্লিনিক। গ্রামস্তর থেকেই শুরু হবে কাজ। এ জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে রোগীদের চিহ্নিত করে ব্লকস্তরে পাঠানো হবে। ব্লকস্তর থেকে রোগীদের মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হবে।

অনেক সময়ে ছোট থেকেই শরীরের মধ্যে নানা সমস্যা লুকনো থাকে। গোড়ায় চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় পরে জটিল আকার নেয়। মৃত্যুও হয়। ছোঁয়াচে নয়, এমন অসুখে মৃত্যুর সংখ্যা গোটা পৃথিবীতেই বাড়ছে। রাজ্যেও সংখ্যাটা কম নয়। পরিস্থিতি দেখে একেবারে গ্রামস্তর থেকে রোগ নির্ণয়ের কাজ করতে চাইছে সরকার। জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “গোড়াতে অসুখ ধরা পড়লে সহজে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। না হলে পরবর্তী সময় ওই অসুখ জটিল আকার নেয়। তখন নানা সমস্যাও দেখা দেয়।”

ডায়াবেটিস যে আগামী দিনে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছে একটি সমীক্ষায়। ওই সমীক্ষা বলছে, ১৯৭০ সালে শহরাঞ্চলে মাত্র ২.৩ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতেন। ২০০০ সালে তা বেড়ে শহরাঞ্চলে হয়েছে ১২-১৯ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৪-১০ শতাংশ। এখন হৃদরোগের প্রকোপও বাড়ছে। শুধু বয়স্কদের মধ্যে নয়, শিশুদের মধ্যেও এই অসুখ দেখা দিচ্ছে। কেন? চিকিৎসকদের মতে, মূলত চারটি কারণে এই পরিস্থিতি। ১) ক্যালোরিযুক্ত খাবার, ভাজাভুজি বেশি খাওয়া। ২) খেলা-ব্যায়ামের বদলে টিভি-কম্পিউটারে সময় কাটানো। ৩) রাতে না ঘুমিয়ে ইন্টারনেট-মোবাইলে ডুবে থাকা এবং ৪) বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা।

সরকারি স্কুলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে বার করে তাদের অস্ত্রোপচার করার প্রকল্প অবশ্য সরকারের আছে। ‘শিশুসাথী’ নামে এই প্রকল্পে প্রতিদিনই কোনও না কোনও স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের স্ক্রিনিং হওয়ার কথা। কিন্তু চিকিৎসক এবং নার্সের অভাবে স্ক্রিনিং চালানোই মুশকিল। পশ্চিম মেদিনীপুরে ইতিমধ্যে ‘শিশুসাথী’ প্রকল্পে ১৩৬ জন ছাত্রছাত্রীর হৃদ্রোগের চিকিৎসা হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “অনেকের মধ্যেই জন্ম থেকে ভালভ খারাপ, ধমনী খারাপ, অনিয়মিত হৃদ্স্পন্দন, হৃদ্যন্ত্রে ফুটোর মতো সমস্যা লুকনো থাকে। তখন গোড়ায় চিকিৎসা শুরু হলে ভাল।”

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীতে এখন প্রতি ছ’জনের এক জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ২০০০ সালের পর থেকে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা বা ইউরোপের মতো ধনী দেশগুলোর চেয়ে উন্নতশীল বা অনুন্নত দেশগুলোতেই স্ট্রোকের সংখ্যা বেশি। মূলত, খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস, ন্যূনতম শরীরচর্চা না করা এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপকেই এর জন্য দায়ী করেন চিকিৎসকেরা। তথ্য বলছে, পৃথিবীতে প্রতি বছর ৫৮ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন। এড্স, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়া মিলিয়ে যত মানুষ মারা যান, স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। প্রতি ৬ সেকেন্ডে এক জন মানুষ এর বলি হন।

চিকিৎসকদের মতে, সময় মতো রোগীর রিহ্যাবিলিটেশন অর্থাৎ পুনর্বাসনের চেষ্টা শুরু করতে পারলে বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারে। এখন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। দেরিতে ধরা পড়লে ক্যানসার দুরারোগ্য। জেলার সর্বত্র এই অসুখের চিকিৎসা বা কেমোথেরাপি দেওয়ার কোনও পরিকাঠামোই নেই। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে একেবারে গ্রামস্তর থেকে এই সব রোগ নির্ণয়ের কাজ শুরু করতে চাইছে সরকার। এ জন্য নতুন সেল খোলা হচ্ছে। রাজ্যের সাতটি জেলায় এনসিডি সেল চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা জানালেন, ছোঁয়াছে নয়, এমন অসুখে মৃত্যুর সংখ্যা গোটা পৃথিবীতেই বেড়ে চলেছে। এখন পৃথিবীতে প্রতি বছর ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ এমন অসুখে মারা যান। জেলায় ওই সেল কাজ শুরু করলে অনেকের গোড়াতেই রোগ নির্ণয় হয়ে যাবে। চিকিৎসাও শুরু হবে। ফলে, বহু মানুষকে আর এই সব অসুখে মৃত্যুর মুখ দেখতে হবে না।

barun dey midnapore health center blood sugar diabetics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy