বাসযাত্রা: বিরোধী নেতাদের নিয়ে শপথ-অনুষ্ঠানের পথে। নিজস্ব চিত্র
সবুজ জ্যাকেট পরে মনমোহন সিংহের পাশে বসে তিনি। বাঁ পাশে দুই শরদ, পওয়ার আর যাদব। উঁকি দিচ্ছে ফারুক আবদুল্লার কাশ্মীরি টুপিও। ঠিক পিছনে বসে আছেন এম কে স্ট্যালিন, যিনি কাল রাতেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বাসে চেপে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে একের পর এক শপথে যোগ দিতে যাচ্ছেন রাহুল গাঁধী। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন সেই সৈনিকদের, যাঁরা লোকসভা ভোটে একজোট হয়ে লড়বেন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। মোদীর গড় থেকেই রাহুল ছিনিয়ে নিয়েছেন মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়। আর একই দিনে তিন নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথে রাহুল শুধু বিরোধী ঐক্যের ছবিটি মেলেই ধরলেন না, দেখালেন জোটের শক্তিও।
সনিয়া গাঁধীর উপস্থিতি ছাড়াই রাহুলের ডাকে চাঁদের হাট। চন্দ্রবাবু নায়ডু, দেবগৌড়া, কুমারস্বামী, তেজস্বী যাদব, হেমন্ত সোরেন, জিতেন রাম মাঝি, বাবুলাল মরান্ডি— সব মিলিয়ে প্রায় কুড়িটি দলের নেতা। মায়া-অখিলেশ অবশ্য থাকেননি, মমতা পাঠিয়েছেন প্রতিনিধি। রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী পদে অশোক গহলৌত, উপমুখ্যমন্ত্রী পদে সচিন পাইলট, মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ, ছত্তীসগঢ়ে ভূপেশ বঘেলের শপথে অনেক টুকরো ছবি নজর কাড়ল। যেমন বসুন্ধরা রাজের আদর জ্যোতিরাদিত্যকে, কমল নাথ-জ্যোতিরাদিত্যের মাঝে হাত ধরে শিবরাজ সিংহ চৌহান। কিন্তু সব ছাপিয়ে মধ্যমণি রইলেন রাহুলই। আগে যেমন বিজেপির সভায় ‘মোদী-মোদী’ রব উঠত, তিন শপথেই উঠল ‘রাহুল-রাহুল’ ধ্বনি।
আরও পড়ুন: আড়াই বছরেও মিলল না অর্থ কমিশনের বরাদ্দ
রাহুল নিজেও বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। সে বসুন্ধরাই হোন বা শিবরাজ অথবা রমন সিংহ। এক এক রাজ্যের শপথ অনুষ্ঠানের পর রাজ্যের বাসিন্দাদের ‘ধন্যবাদ’, কঠিন সময়ে কংগ্রেস কর্মী-নেতাদের মেহনতের জন্য ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে টুইটও করলেন। মোদীও টুইট করে তিন মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তবে কাল স্ট্যালিনের ঘোষণার পরে বিজেপি মুখিয়ে ছিল, এই বুঝি বিরোধী জোট ভাঙল! প্রধানমন্ত্রী পদে রাহুলের নাম উঠে আসায় এই বুঝি বেঁকে বসলেন মায়া-মমতারা। কারণ বিরোধী জোটের আলোচনায় স্থির হয়েছিল যে, ভোটের আগে কারও নাম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হবে না। কাল স্ট্যালিন তার অন্যথা করায় বাকি দলগুলি কী করে, তা দেখার জন্য ব্যস্ত ছিল বিজেপি। নিজে কাল থেকেই এই নিয়ে চুপ রাহুল। কমল নাথ আজ বলে দিলেন, ‘‘রাহুল তো কখনও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য চাপ দেননি। সে তো ভোটের পরেই স্থির হবে।’’ আরজেডি-র মনোজ ঝা-ও বললেন, ‘‘আমরা কে কবে বললাম, রাহুলের যোগ্যতা নেই? কিন্তু এখন প্রথম কাজ হল মোদীকে হারানো। রাহুলও সেটাই চান।’’
এ কথা ঠিক যে, ভোটের পরে নেতা ঠিক হবে, এটাই জোটের শর্ত। সীতারাম ইয়েচুরি এ দিনও বললেন, ‘‘ভোটের পরেই ধর্মনিরপেক্ষ জোটের নেতা স্থির হয়ে এসেছে।’’ কিন্তু বিরোধী অনেক নেতা এ-ও মানছেন, তিন রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের পর রাহুলই এখন বিরোধী শিবিরের মুখ। বাম নেতা ডি রাজা তাই রসিকতা করে বললেন, ‘‘কাল আবেগে কথা বলেছেন স্ট্যালিন। কিন্তু হতেই পারে ভবিষ্যতে তিনিই হয়তো ব্রেকিং নিউজটা দিলেন!’’ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে যে রাহুল এগিয়ে গিয়েছেন, সেটা অন্য বিরোধী নেতারা এক রকম মানতেই শুরু করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy