Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

আলোচনার কেন্দ্রে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা, কী ছিল এই দুই ধারায়, জানেন তো?

৩৭০ ধারা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জম্মু কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। এমনকি, কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না কেন্দ্র বা সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সহমত নিতে হত।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ১৩:৪৭
Share: Save:

বিশেষ মর্যাদা হারাল জম্মু-কাশ্মীর। সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করল কেন্দ্র। এই ধারার অন্তর্গত ৩৫এ ধারাও স্বাভাবিক ভাবেই লুপ্ত হয়ে গেল। রাজ্য ভেঙে তৈরি হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ— এই দু’টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এই নিয়েই উত্তাল দেশের রাজনীতি। কী ছিল এই দুই ধারায়, আসুন দেখে নেওয়া যাক।

৩৭০ ধারা ভারতীয় সংবিধানের একটি অস্থায়ী সংস্থান (‘টেম্পোরারি প্রভিশন’)। এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা ও বিশেষ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল। সংবিধানের ১১ নম্বর অংশে অস্থায়ী, পরিবর্তনশীল এবং বিশেষ সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ীই জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ সংবিধানের ধারাগুলি অন্য সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও জম্মু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নাও হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপালের জন্য সদর-এ-রিয়াসত চালু ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বদলে ছিল প্রধানমন্ত্রী। যদিও ১৯৬৫ সালের পর তা উঠে যায়। আবার ১৯৫৬ সালে সংবিধানের ২৩৮ ধারা উঠে যায়। এই ধারায় দেশীয় রাজ্যগুলি (প্রিন্সলি স্টেট) তুলে দিয়ে সাধারণ রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সেই সময়ও জম্মু কাশ্মীরকে এর বাইরে রাখা হয়। অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীর ‘প্রিন্সলি স্টেট’ হলেও তা তুলে দিয়ে সাধারণ প্রদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

৩৭০ ধারা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জম্মু কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। এমনকি, কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না কেন্দ্র বা সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সহমত নিতে হত।

ভারতীয় সংবিধানে ৩৬০ ধারায় আর্থিক জরুরি অবস্থার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু জম্মু কাশ্মীরে সেটা সম্ভব ছিল না।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

৩৭০ ধারার অধীনেই ছিল ৩৫এ ধারা। এই ৩৫এ ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাও বিশেষ সুবিধা পেতেন। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া অন্য রাজ্যের কেউ সেখানে স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারতেন না। কিনতে হলে অন্তত ১০ বছর জম্মু-কাশ্মীরে থাকতে হত। এ বার যে কোনও রাজ্যের বাসিন্দা সেখানে জমি কিনতে পারবেন।

স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া জম্মু কাশ্মীরে অন্য রাজ্যের কেউ সেখানে চাকরির আবেদন করতে পারতেন না। দিতে পারতেন না ভোটও। কে স্থায়ী বাসিন্দা এবং কে নয়, তা নির্ধারণ করার অধিকার ছিল রাজ্য বিধানসভার উপরেই ন্যস্ত।

এই ধারা অনুযায়ী রাজ্য অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভাই ঠিক করতে পারত, রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কারা এবং তাঁদের বিশেষ অধিকার কী ধরনের হবে।

জম্মু-কাশ্মীরের কোনও মহিলা রাজ্যের বাইরে কাউকে বিয়ে করলে তিনি সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। অর্থাৎ তাঁর সম্পত্তিতে আর কোনও অধিকার থাকত না। এমনকি, তাঁর উত্তরাধিকারীরাও ওই সম্পত্তির মালিকানা বা অধিকার পেতেন না।

আরও পড়ুন: উত্তাল সংসদ, কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত ‘অসাংবিধানিক’, মন্তব্য মুফতির

১৯৪৭ সালে এই ৩৭০ ধারার খসড়া প্রস্তুত করেন শেখ আবদুল্লা। জম্মু কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী মহারাজা হরি সিংহ এবং জওহরলাল নেহরু তাঁকে নিয়োগ করেন। তবে শেখ আবদুল্লা অস্থায়ী ভাবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না, বরং স্থায়ী ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষপাতী ছিলেন। যদিও কেন্দ্র তাঁর সেই দাবি মেনে নেয়নি। ফলে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও ৩৭০ ধারা বলে জম্মু-কাশ্মীর ছিল আলাদা স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য, যদিও সেই স্বায়ত্তশাসন ছিল ‘অস্থায়ী’।

সোমবার রাষ্ট্রপতির নির্দেশনামার জেরে এই ৩৭০ ধারা এবং তার অধীনে থাকা ৩৫এ ধারা বিলুপ্ত হয়ে গেল। ফলে সব দিক থেকেই বিশেষ মর্যাদা হারাল জম্মু-কাশ্মীর। দিল্লি, গোয়ার মতো দেশের বাকি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে আর কোনও পার্থক্য থাকল না জম্মু-কাশ্মীরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE