Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Science News

চাঁদের মাটিতে নামুক ভারত, পাশাপাশি উন্নতি হোক মানবজমিনেরও, চান এঁরা

এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কে কী ভাবে দেখছেন জানতে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’ পৌঁছেছিল সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও বিজ্ঞানীদের কাছে।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ১৯:২৫
Share: Save:

ভারত নামছে চাঁদে। এই প্রথম চাঁদে পা পড়তে চলেছে ভারতের। ৫০ বছর আগে প্রথম চাঁদে নেমেছিল মানুষ। চাঁদে হেঁটেছিলেন নাসার ‘অ্যাপোলো-১১’ অভিযানের দুই মহাকাশচারী নিল আর্মস্ট্রং ও এডুইন (বাজ) অলড্রিন। আর একা একা অরবিটারে বসে চাঁদের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে চলেছিলেন আর এক মহাকাশচারী মাইকেল কলিন্‌স। প্রথম ঘটনাটি ভারতের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক। দ্বিতীয়টি মানবসভ্যতার একটি মাইলস্টোন।

এই দু’টি ঐতিহাসিক ঘটনাকে কে কী ভাবে দেখছেন জানতে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’ পৌঁছেছিল সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও বিজ্ঞানীদের কাছে। পৌঁছেছিল আমজনতার কাছেও। যে প্রবীণরা দেখেছিলেন ৫০ বছর আগে চাঁদের সভ্যতার প্রথম পদার্পণ, ‘অ্যাপোলো-১১’-এর সেই ঐতিহাসিক অভিযান, স্মৃতি হাতড়ে তাঁদের কী কী মনে পড়ছে, জানতে চাওয়া হয়েছিল। চন্দ্রযান-২ চাঁদ-মুলুকে রওনা হওয়ার পর তাঁদের কী অনুভূতি, তা-ও জানাতে দ্বিধা করেননি কেউই।

‘চন্দ্রযান-২’-এর মতো উৎক্ষেপণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যে কী গভীর দেশপ্রেমের জোয়ারে ভাসছিল গোটা দেশ, তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল সোমবার বেলা ২টো ৪৩ মিনিটে। যখন উৎক্ষেপণের পর আকাশের দিকে বিদ্যুৎগতিতে উঠে যেতে শুরু করল ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযান, তখন ঘরে ঘরে, অফিসে, রাস্তার মোড়ে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বিজয়োল্লাসে ভেসে যেতে দেখা গেল আমজনতাকেও। যার তাৎপর্য হয়তো অনেকেই বুঝলেন না! তবু, তার পরেও!

১৯৬৯-এর ২০ জুলাই। চাঁদের বুকে আমেরিকার পতাকা পুঁতে দিচ্ছেন আর্মস্ট্রং, অলড্রিন

আবার অন্য কথাও যে একেবারেই শোনা গেল না, তা নয়। সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের একাংশ এমন প্রশ্নও তুললেন, এই সব দিয়ে সাধারণ মানুষের আশু সমস্যাগুলি মিটবে কি? অ্যাপোলো-১১-র তিন মহাকাশচারী চাঁদে নামার পর সাধারণ মানুষের জীবনে কি প্রত্যক্ষ ভাবে পড়েছিল তার কোনও ছাপ? সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের আর একটি অংশ অবশ্য এই সব কিছুকে ‘নেতিবাচক চোখে’ দেখার বিরোধিতাও করলেন। স্বাগত জানালেন বিজ্ঞানে ভারতের এক কদম এগিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক পদক্ষেপকে।

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কথাই ধরুন। ‘অ্যাপোলো-১১’-র ঘটনা ওঁর বেশ মনে আছে। সৌমিত্রের কথায়, ‘‘সে তো রোমাঞ্চকর। তার কয়েক বছর আগেই ভিয়েতনামের যুদ্ধ। সেটাও কম মনে রাখার মতো ঘটনা নয়। গুরুত্বের নিরিখে আমার বিচারে দু’টি ঘটনা দু’ধরনের। দু’টিতেই জয়গান গেয়েছে মানুষ। সব সময়েই চেয়েছি, চেয়ে চলেছি বিজ্ঞানের অগ্রগতি। তাই ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানেও গর্বিত হয়েছি। তবে বিজ্ঞান এগোলেই যে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়ে যাবে, তা বিশ্বাস করি না। তা হলে তো অ্যাপোলো-১১-র ঘটনার পর তো ৫০ বছর কেটে গেল। আমেরিকা থেকে যাবতীয় অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার কি ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে? হয়নি। তবে তাই বলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি চাইব না, তা হতে পারে না। দেখতে হবে, সেই অগ্রগতিকে আপামর মানুষের জীবনে কতটা কাজে লাগানো যায়।’’

আরও পড়ুন- চাঁদের ভেলা পৌঁছে দেবে নতুন দিগন্তে, রুখবে ব্রেন ড্রেন, বাড়াবে বাণিজ্যও!

আরও পড়ুন- চাঁদই হতে চলেছে আগামী দিনের সেরা ল্যাবরেটরি!​

অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী সোমক রায়চৌধুরীর কাছে ‘ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানের স্বাদটা একেবারেই অন্য রকমের।’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও পেরেছি দেখে গর্ব তো হচ্ছেই। এই অভিযান আগামী দিনে দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে ভাবনাচিন্তার একটা নতুন দরজা খুলে দেবে, এমনটাও দেখতে পাচ্ছি।’’

সোমকের ব্যাখ্যা, এই অভিযানে ইসরো ও ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানের গবেষণা দুই’ই উপকৃত হবে। কারণ, সুলভে চোখ টানার মতো নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রকৌশলে আগ্রহী হয়ে ছোট ছোট দেশগুলি যত বেশি করে ইসরোর দিকে ঝুঁকবে, ততই সরকারের উপর নির্ভরতা কমবে ইসরোর। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাকে তা আরও বেশি করে স্বনির্ভর হয়ে ওঠার দিশা দেখাবে। স্বনির্ভর করে তুলবে। আরও একটা লাভ হবে। সরকারি নির্ভরতা কমলে সরকারি বাধ্যবাধকতার ফাঁসটাও কিছুটা আলগা হয়ে যাবে। সরকারি অর্থের ভরসায় চলতে হয়, তাই চটজলদি চটকদার কিছু সরকারি প্রকল্প, চিন্তাভাবনা বাস্তবায়িত করার যে চাপটা এত দিন ছিল, এখনও যথেষ্টই রয়েছে ইসরোর কাঁধে, তা কমবে। সেটাই স্বাভাবিক। অনিবার্য। বহুকাঙ্খিতও। ফলে, ইসরোকে আর শুধুই আবহাওয়ার উপর নজরদারি, খনিজ সম্পদের সন্ধান বা অন্য দেশ বা সন্ত্রাসবাদীদের গোপন ঘাঁটির উপর নজরদারির জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, প্রকৌশল আয়ত্ত করার সাধনায় মগ্ন হয়ে থাকতে হবে না। অ্যাপোলো অভিযানগুলির সময় চাঁদে যাওয়ার কথা ভাবত আমেরিকা, রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন)-র মতো ধনী দেশগুলি। এখন ভারত, ইজরায়েলের মতো দেশও সেই চেষ্টায় সামিল হয়েছে। এটাই সোমকের কাছে ‘বেশি উত্তেজক’।

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘খুব ভাল ভাবেই মনে আছে ছোটবেলার সেই ঘটনার কথা। যে দিন চাঁদে নামলেন আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন। আমেরিকার পতাকা উড়ল।’ বললেন, ‘‘তখন বয়স কম। অবাক হয়েছিলাম। তবে সেই দিনও খুব আলোড়িত হইনি। প্রশ্ন উঠেছিল, সেই ঘটনা আমাদের কতটা কাজে লাগবে? আজ যখন ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান নিয়ে এত উত্তেজনা, তখনও আমার মনে একটা প্রশ্ন উঠছে, তা হল; চাঁদে বা মঙ্গলে গিয়ে আমরা যে সভ্যতার দ্বিতীয় উপনিবেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি, তা আকাশকুসুম কল্পনা নয় তো?’’

১৯৬৯-এর ২০ জুলাই। চাঁদের বুকে হাঁটছেন বাজ অলড্রিন।

শীর্ষেন্দু এও জুড়লেন, ‘‘অবশ্যই চাই, বিজ্ঞানের অগ্রগতি। কিন্তু তা যেন প্রত্যক্ষ ভাবে সভ্যতার সহায়ক হয়ে ওঠে। মারীচ হরিণের পিছনে যেন আমরা না ছুটি!’’

অধ্যাপক, দেশের বিশিষ্ট কণাপদার্থবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের কথায়, ‘‘বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এতটা গর্বিত হওয়ার সুযোগ আমাদের দেশের মানুষ এর আগে আর পাননি বলেই আমার মনে হয়।’’

বিকাশ বললেন, বিজ্ঞানের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে চন্দ্রযান-২-এর উৎক্ষেপণ একটি মাইলস্টোন হয়ে রইল। অ্যাপোলো-১১-র দুই মহাকাশচারীর চাঁদে পদার্পণের স্মৃতি এখনও টাটকা বিকাশের কাছে। তখন বিকাশ সদ্য যুবক। বললেন, ‘‘সে দিন আমার মনে প্রশ্ন উঠেছিল, আমরাও কি পারি না? সঙ্গে বুকের মধ্যে জমেছিল কিছুটা দুঃখবোধও। ভাবতে শুরু করেছিলাম, আমরাও কি কোনও দিন নামতে পারব চাঁদে? আজ সেই প্রশ্নটার উত্তর পেয়ে গেলাম জীবনের উপান্তে পৌঁছে।’’

কিছুটা বৈপরীত্যের ছোঁয়া পরিবেশবিদ জয়া মিত্রের কথায়। বললেন, ‘‘সত্যি বলতে কি, তা সে অ্যাপোলো-১১-এর মহাকাশচারীদের চাঁদে সেই ঐতিহাসিক পদার্পণই বলুন বা ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান, কোনও ঘটনাই আমাকে তেমন ভাবে টানেনি কখনও। টানছেও না। আশপাশের পরিবেশে এখন যে আতঙ্কের আবহ, যে ভাবে প্রতি মুহূর্তে বিষিয়ে উঠছে প্রকৃতি ও পরিবেশ, তাতে অ্যাপোলো-১১ বা চন্দ্রযানের মতো কোনও মহাকাশ অভিযান নিয়ে আমার তেমন কোনও উৎসাহ নেই। ঘটনা ঘটছে, দেখছি। এইটুকুই।’’

কবি জয় গোস্বামী কিন্তু মনে করেন, ‘স্বপ্নটা দেখতে জানতে হয়!’ তার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ প্রতিভারও। বললেন, ‘‘তখন আমার বয়স ১৫। যখন আর্মস্ট্রং, অলড্রিনরা নামলেন চাঁদে। রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। আজও রোমাঞ্চ বোধ করছি। শুধু কবিরাই স্বপ্ন দেখেন না, স্বপ্ন দেখেন বিজ্ঞানীরাও। স্বপ্ন না দেখতে শিখলে, না দেখতে পারলে কিছু সৃষ্টি করা যায় না যে!’’

অ্যাপোলোর ঐতিহাসিক ঘটনা যথেষ্টই মনে রয়েছে নাট্য পরিচালক রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের। হ্যাঁ, ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান নিয়েও রয়েছে তাঁর যথেষ্টই গর্ব। শ্রদ্ধাবোধও।

তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের বিজ্ঞান গবেষণা, মহাকাশ অভিযান এগিয়ে যাচ্ছে, এই দেশেরই মানুষ হিসাবে, তা দেখে ভাল লাগছে। গর্ব হচ্ছে।’’

রুদ্রপ্রসাদের অবশ্য এটাও মনে হচ্ছে, ‘‘যাঁরা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর কথা বলেন, তাঁরাই তো এই দেশে দলিতদের কেউ পেটালে তাঁদের উৎসাহ দেন, মদতও দেন। একই সঙ্গে বিজ্ঞানের অগ্রগতির নৌকায় একটি পা রেখে আর অন্য পা-টি এই ধরনের বিদ্বেষমূলক অবৈজ্ঞানিক নৌকায় রাখলে কি সত্যি-সত্যিই বিজ্ঞানে দেশের এই এগিয়ে যাওয়ার সুফল পাব আমরা? নাকি যে অন্ধকারের অতলে ছিলাম ও রয়েছি আমরা, থাকব সেইখানেই?’’

রীতিমতো উত্তেজিত দেশের বিশিষ্ট কার্ডিও-থোরাসিক সার্জেন কুণাল সরকার। বললেন, ‘‘তখন আমি ক্লাস থ্রি-তে পড়ি। অ্যাপোলো রওনা হওয়ার বেশ কিছু দিন আগে থেকেই আমাদের ভবানীপুরের বাড়িতে বাবাকে সব সময় দেখতাম অ্যাপোলো নিয়ে আলোচনায় মেতে থাকতে। বাবা আমাকে অ্যাপোলোর বিষয় নিয়ে বোঝাতেন। সেই সব শুনতাম অবাক হয়ে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, আমরাও তো সেখানে যেতে পারি কোনও এক দিন!’’

কুণাল জানালেন, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়ার সময় তিনিই সহপাঠীদের চন্দ্রাভিযান নিয়ে নানা বিষয় বোঝাতেন।চন্দ্রযান-২-এর সফল উৎক্ষেপণে গর্বিত কুণাল বললেন, ‘‘মহাকাশ গবেষণা এমন অনেক নতুন প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে এসেছে যা এখন আমাদের রোজকার জীবনে কাজে লাগছে। ওষুধ নিয়ে যে সব গবেষণা চলছে এখন মহাকাশে, তা আগামী দিনে নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কারের সহায়ক হয়ে উঠবে। তাই চন্দ্রাভিযান নিয়ে যাঁরা নানা রকম কটাক্ষ করছেন, আমি বলব, দূরটা তাঁরা দেখতে পারছেন না। নাসার অনেক প্রযুক্তিই এখন আমাদের রোজকার জীবনে কাজে লাগে। চন্দ্রাভিযানও আমাদের সভ্যতার কাজে লাগবে এক সময়।’’

অ্যাপোলো অভিযানের সময় অধ্যাপক পবিত্র সরকার ছিলেন আমেরিকায়। পিএইচডি করতে। বললেন, ‘‘যখন আর্মস্ট্রং, অলড্রিনরা প্রথম চাঁদে নামলেন। সেই উন্মাদনা আমি আমেরিকায় চাক্ষুষ করেছি। এখনও সেই উন্মাদনাটা লক্ষ্য করছি চন্দ্রযান-২-কে কেন্দ্র করে।’’

তবে এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহ বাড়লেও তা অন্ধ বিশ্বাস আর কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করতে কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে পবিত্রের সংশয় রয়েছে যথেষ্টই।

আরও পড়ুন- চার বছরের মধ্যেই চাঁদের পাড়ায় ‘বাড়ি’ বানাচ্ছে নাসা!​

আরও পড়ুন- সাড়ে ৫৬ মিনিট আগের সিদ্ধান্তেই বাজিমাত! বিশ্বে নজির গড়ল ইসরো

অ্যাপোলো-১১ আর চন্দ্রযান-২, দুই নিয়েই উচ্ছ্বসিত অনিতা অগ্নিহোত্রী। জানালেন, নিল আর্মস্ট্রং আর তাঁর দুই সঙ্গী যখন অ্যাপোলো-১১ মিশনে চাঁদে গেলেন, তিনি তখন ক্লাস এইটে পড়েন।

অনিতার কথায়, ‘‘স্কুলে খুব হইচই হয়েছিল। বড়দিদিমণি অ্যাসেম্বলিতে ডেকে আমাদের বুঝিয়েছিলেন ঘটনাটির তাৎপর্য। আমরা অনেকে সই করে একটা বড় শুভেচ্ছার চিঠি পাঠিয়েছিলাম আমেরিকায়, স্কুল মারফৎ। এই ঘটনার ২৫ বছর পূর্তির সময় আমি ইংল্যান্ডে। টেলিভিশনে চলছিল ঐতিহাসিক অ্যাপোলোর স্মৃতিচারণ মহোৎসব। আর্মস্ট্রং, কলিন্‌স, অলড্রিন টেলিভিশনের পর্দায় কথা বলছিলেন।’’

১৯৬৯-এর ১৬ জুলাই। চাঁদ মুলুকে রওনা হওয়ার আগে আর্মস্ট্রং, অলড্রিন ও কলিন্‌স

আজ যখন ইসরোর চন্দ্রযান-২ চাঁদে অবতরণের জন্য রওনা দিল, অনিতার কাছে সেই অনুভূতিটা অনেকটাই আলাদা। গর্ব আর আত্মবিশ্বাসের। বললেন, ‘‘এ আমাদেরই নিজস্ব গবেষণার ফল, চন্দ্রযান-২ সফল হলে ভারত চতুর্থ সফল অভিযানের নায়ক হবে, রাশিয়া, আমেরিকা ও চিনের পর। আমরা এই প্রথম চাঁদে নামব। চন্দ্রযান-১ শুধুই পরিক্রমা করেছিল চাঁদের কক্ষপথে। মহাকাশ গবেষণা ইতিহাস তৈরি করছে আমার নিজের দেশে।’’

তবে আরও কিছু চাওয়ার আছে, পাওয়ার আছে, জানালেন অনিতা। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার দেশটাকে সাধারণ মানুষের বসবাসের জন্য একটু স্বাচ্ছন্দ্য আর সুখের করে তুলতে হবে। এর জন্য অবশ্য গবেষণার দরকার নেই। প্রয়োজন সদিচ্ছা আর সহিষ্ণুতার, ৭০ বছরের পুরনো সংবিধানটা বোঝার।’’

চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ মনে করিয়ে দিলেন সত্যজিত রায়ের সেই ফিল্মের কথা। বললেন, অ্যাপোলোর ঘটনার সময় তো আমি সদ্য যুবক। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় প্রশ্নটা তোলা হয়েছিল, কোনটা বড় ঘটনা? ভিয়েতনামের যুদ্ধ নাকি মানুষের প্রথম চাঁদে নামা। মহাকাশ গবেষণায় ভারতের এগিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় অবশ্যই আমি আলোড়িত। তবে আপামর মানুষের জীবনের রোজকার সমস্যাগুলি আরও দ্রুত মিটবে, এই আশাটাও জিইয়ে রাখছি।’’

দেশের বিশিষ্ট কণাপদার্থবিজ্ঞানী সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের ‘রাজা রামান্না’ চেয়ার প্রফেসর নব কুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘ঐতিহাসিক ঘটনা। শুধু ভারতই নয়, এই ঘটনা বিশ্বের সামনে গবেষণার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। খুলে দিতে পারে সেই দরজাটা, যার ফলে যে গবেষণাগুলি পৃথিবীতে কোনও দিনই করা সম্ভব হত না নিখুঁত ভাবে, সেগুলিও এ বার করা যাবে অনেক অনেক বেশি নিখুঁত ভাবে। আমার কাছে অ্যাপোলো-১১-র চেয়ে কোনও অংশে কম নয় ইসরোর আজকের কৃতিত্ব।’’

ছবি: ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ আর্কাইভ

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE