Advertisement
E-Paper

ভোটের মুখে রাষ্ট্রদ্রোহের চার্জশিট কানহাইয়াদের 

তিন বছরের মাথায়, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিল দিল্লি পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩২
কানহাইয়া কুমার। ফাইল চিত্র

কানহাইয়া কুমার। ফাইল চিত্র

তিন বছরের মাথায়, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিল দিল্লি পুলিশ।

কানহাইয়া ছাড়াও রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অভিযোগে চার্জশিট দায়ের করা হয়েছে উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, আকিব হুসেন, মুনিব হুসেন, উমর গুল, মুজিব হুসেন, বশির বাট-সহ মোট দশ জন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। এঁদের মধ্যে খালিদ-সহ সাত জন কাশ্মীরি।

চার্জশিটে আরও প্রায় ৩৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ। তবে ঘটনার দিন তাঁরা যে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন তার প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব হয়নি বলে চার্জশিটে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। যে তালিকায় রয়েছেন সিপিআই নেতা ডি রাজার মেয়ে অপরাজিতা রাজা, জেএনইউ ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন সহ-সভাপতি শেহলা রশিদ, রাম নাগা, আশুতোষ কুমার, বনজ্যোৎস্না লাহিড়ি। স্বভাবতই লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তিন বছর আগের ঘটনার চার্জশিট জমা দেওয়ার পিছনে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধী শিবিরের দাবি, রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই এ ভাবে কানহাইয়া কাণ্ডকে ফের উস্কে দেওয়ার খেলায় নেমেছে বিজেপি।

তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সংসদে হামলাকারী জঙ্গি আফজল গুরুর সমর্থনে জেএনইউ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান করার অভিযোগ ওঠে। সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র অভিযোগ ছিল, ওই অনুষ্ঠানের পিছনে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের তৎকালীন প্রধান কানহাইয়া, উমর খালিদ, অনির্বাণ ও একাধিক কাশ্মীরি পড়ুয়া। পরে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কানহাইয়াদের গ্রেফতার করে পুলিশ। বেশ কিছু দিন জেলে থাকার পরে জামিন পান কানহাইয়ারা।

আজ ওই মামলায় দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখা পাতিয়ালা হাউস কোর্টের বিচারক সুমিত আনন্দের এজলাসে ১২০০ পাতার চার্জশিট জমা দেয়। ট্রাঙ্কে করে নিয়ে আসা হয় ওই চার্জশিট। আগামিকাল থেকে ওই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। চার্জশিটে রাষ্ট্রদ্রোহ, ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করা, জালিয়াতি, জাল নথিকে প্রকৃত নথি হিসেবে ব্যবহার, বেআইনি সমাবেশে হাজির থাকা, হিংসায় জড়িত থাকা ও ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। কানহাইয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। প্রমাণ হিসাবে একাধিক সাক্ষীর বয়ান ছাড়াও সে দিনের ঘটনার সিসিটিভি ও মোবাইল ফুটেজও জমা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ।

কানহাইয়ার বক্তব্য, ‘‘যদি সত্যিই চার্জশিট পেশ হয়ে থাকে তাহলে দিল্লি পুলিশ ও মোদীজিকে ধন্যবাদ। ভোটের ঠিক আগে এ ভাবে চার্জশিট পেশ করা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে দেশের বিচারব্যবস্থার উপর আমার ভরসা রয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই মামলার দ্রুত বিচার হোক। তা হলেই সত্য প্রকাশ পাবে। প্রমাণ হিসেবে পেশ হওয়া ভিডিয়োও আমরা

দেখতে চাই।’’

অন্য দুই অভিযুক্ত উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘তিন বছর বাদে ও লোকসভা ভোটের তিন মাস আগে গভীর ঘুম থেকে জেগে ওঠার জন্য সরকার ও দিল্লি পুলিশকে ধন্যবাদ। মিথ্যে বলা এক ধরনের শিল্প।

মিথ্যে বলার জন্য উপযুক্ত সময়ও বেছে নিতে হয়। সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নির্বাচনের চিত্রনাট্য বদল করতে চাইছে। আদালতে আমরা নিজেদের নির্দোষ প্রতিপন্ন করব।’’ অভিযুক্তদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে জেএনইউ-এর ছাত্র সংগঠন।

চার্জশিটের ইতিবৃত্ত • ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল দিল্লির বসন্তকুঞ্জ (উত্তর) থানায় • অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি সাংসদ মহেশ গিরি ও এবিভিপি • চার্জশিট ১২০০ পাতার • রয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ, ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করা, জালিয়াতি, জাল নথিকে প্রকৃত নথি হিসেবে ব্যবহার করা, বেআইনি সমাবেশে যোগ দেওয়া, হিংসায় যোগ দেওয়া, ষড়যন্ত্রে যোগ দেওয়ার অভিযোগ • প্রমাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে সিসিটিভি ও মোবাইল ফুটেজ এবং নথি

আগামী লোকসভা ভোটে সিপিআইয়ের টিকিটে তাঁর জন্মস্থান বেগুসরায় থেকে নির্বাচনে লড়ার কথা রয়েছে কানহাইয়ার। বামেদের পাশাপাশি কংগ্রেস, আরজেডির মতো দলগুলি তাঁকে সমর্থন করবে বলে প্রাথমিক ভাবে আশ্বাস দিয়ে রেখেছে সিপিআই নেতৃত্বকে। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘এই অভিযোগ অবিশ্বাস্য। বস্তুত ভারতীয় দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত ধারাটি নিয়েই বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে।’’ দলীয় মুখপাত্র পবন খেড়ার মতে, ‘‘আমাদের আশা এই মামলার প্রমাণে কারচুপি করার সুযোগ দেওয়া হবে না। প্রমাণ হিসেবে পেশ করা ভিডিয়োয় কারচুপি করা হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। এই সরকারের কাজকর্মের উপরে মানুষের আর আস্থা নেই।’’

সিপিআই নেতা ডি রাজার বক্তব্য, ‘‘পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। কারণ আমাদের ছাত্র সংগঠন অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট ফেডারেশন কোনও ভাবেই রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। আমাদের ছাত্রেরা এমন কোনও কাজ করেনি যার জন্য সরকার তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনবে। আমরা আইনি ভাবে ওই অভিযোগের মোকাবিলা করব।’’

তালিকায় সাত কাশ্মীরির নাম থাকা নিয়ে সরব হয়েছেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। তাঁর কথায়, ‘‘ফের ভোটের আগে কাশ্মীরিদের ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউপিএ সরকার আফজলকে ফাঁসি দিয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীর এখনও তার ফল ভুগছে।’’

Chargesheet Kanhaiya Kumar JNU Police Umar Khalid
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy