অশোক পারমার এবং কুতুবুদ্দিন আনসারি (ডান দিকে)।
‘‘কী পেয়েছি দাঙ্গা থেকে? আজই তো ২৮ ফেব্রুয়ারি। ১৮ বছর আগে এই দিনে গুজরাত জুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়েছিল।’’ শুক্রবার ফোনে ধরতেই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন কুতুবুদ্দিন আনসারি— ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার মুখ। হাত জোড় করে জীবনভিক্ষা করছেন— কুতুবের এই ছবি দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছিল। ছড়িয়ে গিয়েছিল অশোক পারমারের (মোচী) সহিংস ছবিও— ছড়ানো হাতে লোহার রড, গেরুয়া ফেট্টি।
দিন বদলেছে। মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এখন শান্তির বার্তা দেন কুতুব-অশোকেরা, ভুলতে চান দাঙ্গার দিনগুলো। পারেন কি? দিল্লির হিংসার ছবি যেমন তোলপাড় করে দিচ্ছে তাঁদের। এ কথা ঠিক, পরে জানা যায়, সে দিনের হিংসায় অশোকের কোনও ভূমিকাই ছিল না। বস্তুত অশোকের নিজের কথায়, তাঁর দাড়ি থাকায়, কেউ পাছে মুসলমান ভেবে ফেলেন, তাই একটা গেরুয়া ফেট্টি তিনি বেঁধে রাখতেন সেই দিনগুলোতে। এই সময় এক চিত্র সাংবাদিকের আবেদনে তিনি পোজ দেন। পরের দিন জানতে পারেন, সে ছবি ভারতের সব কাগজে ছড়িয়ে গিয়েছে এবং তিনি হয়ে গিয়েছেন ভিলেন।
তিন সন্তানের বাবা কুতুব আমদাবাদে জামাকাপড় সেলাই করেন। যেমনটি করতেন ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু প্রাণভিক্ষার ছবি নিয়ে তোলপাড় হওয়ার পরে কুতুব কাজ হারান। চলে যান মুম্বইয়ে, বোনের কাছে। টেলারিং ইউনিটে কাজ পেয়েছিলেন। কিন্তু সে কাজও যায়। কয়েক মাস কলকাতায় থেকে ফিরে যান আমদাবাদে।
কুতুব এ দিন বলেন, ‘‘দাঙ্গা কী দেয়? পারস্পরিক অবিশ্বাস। দিল্লিতে দেখছেন না? সব কিছু ভেঙে, পুড়িয়ে ভাল থাকা যায়? মানুষ যদি মানুষকে বিশ্বাস না-করে, কে করবে?’’
আমদাবাদের ‘দিল্লি দরওয়াজা’র কাছে জুতোর দোকান খুলে ব্যবসায় নতুন ইনিংস শুরু করেছেন অশোকও। দোকানের নাম— ‘একতা চপ্পল হাউস’। শাহপুরে থাকেন। দিল্লির হিংসার সঙ্গে গুজরাতের তুলনা শুনে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘সকলের কাছে আবেদন, বিদ্বেষ আর ঘৃণার রাজনীতির ফাঁদে পা দেবেন না। দাঙ্গার মতো ভয়ানক আর কিছু হয় না।’’ কারা দায়ী দিল্লির এই হালের জন্য? অশোকের কথায়, ‘‘জানে তো সবাই। ও সব আর বলতে চাই না। ভুলের শিকার হয়েছিলাম। সারা জীবন আফসোস করতে হবে। শান্তি রাখুন। শান্তিতে থাকুন।’’
২০০২ সালে অশোক এবং কুতুব পরস্পরকে চিনতেন না। দিল্লি-আবহে জয়ের সতর্কবাণী—‘‘ওঁদের নিয়ে কথা না-হওয়াই ভাল। অপ্রিয় কথা বলে রোষে পড়ার দরকার কী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy