Advertisement
E-Paper

‘উড়ল’ রাফাল, স্পিকার বললেন, ‘বাচ্চে হো’! রাহুল-জেটলির বাগযুদ্ধে তপ্ত লোকসভা

এবার নিশানায় বক্তা রাহুলই। তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘‘আপনি কি ওই অডিয়ো টেপের সত্যতার দায়িত্ব নেবেন?’’ রাহুল তাতে রাজি হননি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৫৭
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

রাফাল ‘উড়ল’ সংসদে। যুদ্ধবিমান নিয়ে বাগযুদ্ধে দিনভর যেন ‘ব্যাটল-ফিল্ড’ লোকসভা। আছড়ে পড়ল একের পর এক ‘বোমা’। কখনও বিরোধী শিবির থেকে। তোপরক্ষণেই শাসক দলের।যেন দুই যুদ্ধবিমানে চড়ে মুখোমুখি দুই পাইলট। শাসক দলে অরুণ জেটলি। প্রতিপক্ষ রাহুল গাঁধী। একজন ছুড়লেন ‘অঅ’। পাল্টা এল ‘কিউ’ শেল। সংসদে এসে জবাব দেওয়ার মতো ‘বুকের পাটা’ নেই মোদীর, বললেন রাহুল। জেটলির কটাক্ষ, ‘‘যুদ্ধবিমান কি, উনি তো সেটাই জানেন না।’’ টেনে তুলে এনেছেন বোফর্স, অগুস্তা থেকে ন্যাশনাল হেরাল্ডের প্রসঙ্গ। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন পর তীব্র বাদানুবাদের সাক্ষী থাকলেন লোকসভার সাংসদরা। টিভিতে দেখল গোটা দেশ। আর গোটা অধিবেশনের ‘নজরকাড়া’ ইভেন্ট ছিল কংগ্রেসের কাগজের উড়োজাহাজ ওড়ানো।

রণক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন অরুণ জেটলি। তিনিই রাফাল চুক্তি নিয়ে সংসদে আলোচনার চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। তাতে রাজি হয় কংগ্রেস। আর সংসদের অভ্যন্তরে যুদ্ধের সূচনা করলেন রাহুল গাঁধী। মোদীকে নিশানা করে শুরু করলেন আক্রমণ। ‘‘বায়ুসেনা জানিয়েছিল ১২৬টি যুদ্ধবিমান দরকার তাঁদের। সেটা কীভাবে হয়ে গেল ৩৬। সরকার বলছে, জরুরি ভিত্তিতে দরকার ছিল, তাই এই সংখ্যা-হ্রাস। এতই যদি জরুরি হয়, তাহলে এখনও কেন একটাও রাফাল ভারতের আকাশে উড়তে দেখলাম না।’’ প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন রাহুল।

ময়দানের যুদ্ধের আগেই অবশ্য রাজধানীর আকাশে চক্কর কাটতে শুরু করে রাফাল। যেন বড় ম্যাচের আগে ওয়ার্ম আপ। অধিবেশন শুরুর আগেই দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূরজেওয়ালা একটি অডিয়ো টেপ প্রকাশ করেন। তাতে শোনা যায়, গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, মনোহর পর্রীকর বলেছেন, তাঁর বেডরুমে রাফালের ফাইল রয়েছে। (ওই অডিয়ো টেপের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।)

আরও পড়ুন: ‘রাফাল চুক্তির ফাইল মনোহর পর্রীকরের বেডরুমে’! এ বার ‘অডিয়ো বোমা’ ফাটাল কংগ্রেস

অবধারিত ভাবেই উঠে আসে সেই প্রসঙ্গ। রাহুল দাবি করে বসেন, ওই টেপ সংসদে চালিয়ে শোনাতে চান তিনি। তাহলেই ‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ হয়ে যাবে। রাহুলের বক্তব্যের সময়েও অরুণ জেটলির আশপাশে বসে থাকা নির্মলা সীতারামন, অনুরাগ ঠাকুরদের হইচই শোনা গিয়েছে। আবার বিরোধী বেঞ্চ থেকে ভেসে এসেছে শব্দবাণ। স্পিকার থামানোর চেষ্টা করেছেন। ফের তিনি সক্রিয়।

এবার নিশানায় বক্তা রাহুলই। তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘‘আপনি কি ওই অডিয়ো টেপের সত্যতার দায়িত্ব নেবেন?’’ রাহুল তাতে রাজি হননি। এমন ‘মওকা’ কি আর ছেড়ে দেবেন তাঁরা? সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন অরুণ জেটলি। বলতে শুরু করলেন, ‘‘উনি অডিয়ো ক্লিপিংয়ের দায়িত্ব নেবেন কি করে? ওটা তো ওঁদেরই তৈরি।’’ স্পিকারের দিকে ঘুরে দাবি জানালেন, ‘‘ওই অডিয়ো টেপ যদি মিথ্যে হয়, তাহলে রাহুলকে বহিষ্কার করতে হবে।’’ কিছুটা ঠোক্কর খেলেন কংগ্রেস সভাপতি।

ঠোক্কর অবশ্য আগেও খেয়েছেন। রাফাল চুক্তিতে নাম জড়িয়েছে অনিল অম্বানীর সংস্থার। ভারতের সঙ্গে ফ্রান্সের সংস্থা দাসো এভিয়েশনের চুক্তি হয়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার। এই দাসো এভিয়েশনের অফসেট পার্টনার হয়েছে অনিল অম্বানীর সংস্থা ‘রিলায়েন্স ডিফেন্স’।

আরও পড়ুন: ৪ কোটি ভিউ! হঠাৎ ইউটিউব থেকে উধাও ‘দি অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-এর ট্রেলার!

সেই প্রসঙ্গ তুলতে গিয়েই বাধা পান রাহুল। স্পিকার স্মরণ করিয়ে দিলেন, ‘‘অনিল অম্বানী সংসদের সদস্য নন। তাই তাঁর নাম নেওয়া যাবে না।’’তবে সামলে নিলেন দক্ষভাবে এবং সূক্ষ্ম খোঁচায়। স্পিকারকে প্রশ্ন করে বসলেন, ‘‘আমি কি ‘অঅ’ (AA) ব্যবহার করতে পারি?’’ বলা বাহুল্য এই ‘অঅ’ আসলে অনিল অম্বানীর নাম পদবীর আদ্যক্ষর। একই সঙ্গে সূক্ষ্ম খোঁচা, ‘‘অনিল অম্বানী কি বিজেপির সদস্য ম্যাম?’’ স্পিকার সম্মতি দিলেন।

কিন্তু চেপে ধরলেন অরুণ জেটলি। বললেন, পুরো নাম ব্যবহার না করে সংক্ষেপ ব্যবহার করেছেন। উনি যখন ছোট তখন বোফর্স কাণ্ডেও এরকম এক ‘কিউ’ উঠে এসেছিল। নোবেল ইন্ডাস্ট্রিজ, যারা বোফর্স তৈরি করেছিল, সেই সংস্থার সিইও তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, যে কোনও মূল্যে ‘কিউ’-এর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে। পরবর্তীকালে সেই ‘কিউ’-এর পক্ষে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য সামনে আসে।’’ বুধবারের অধিবেশনে এই পর্বকে ‘অঅ বনাম কিউ’- এর তরজা আখ্যা দিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

মঙ্গলবারই একটি সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তাতে তিনি বলেছেন, কেউ তাঁকে রাফাল নিয়ে প্রশ্ন করেননি। সেই প্রসঙ্গ টেনে রাহুল এদিন বলেন, সারা দেশ রাফাল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। একই সঙ্গে খোঁচা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ৯৫ মিনিট ধরে ‘ফিক্সড’(সাজানো) ইন্টারভিউ দিতে পারেন। কিন্তু সংসদে এসে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। আসলে সংসদে এসে উত্তর দেওয়ার সাহসই নেই প্রধানমন্ত্রীর।’’

কম যাননি প্রতিপক্ষ দলের বুধবারের ‘ক্যাপ্টেন’ও। রাহুল গাঁধীর নাম না করেও বারবার খোঁচা দিয়ে গিয়েছেন।চুক্তি সইয়ের সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঁসোয়া অলাঁদ। রাহুল দাবি করে আসছেন, অনিল অম্বানীকে চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য ভারত সরকারই চাপ দেয়। জবাব দিতে জেটলিও সেই অলাঁদকেই হাতিয়ার করেছেন। যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘অলাঁদই বলেছেন, ৭৪টি বৈঠকের পর রাফাল চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এতগুলি বৈঠকের পর দাসো এভিয়েশনের বৈঠক হয়। দুর্নীতির প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে।’’ একই সঙ্গে ডিফেন্সের অস্ত্র হিসেবে সামনে এনেছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও। জেটলির সওয়াল, ‘‘এখানে উপস্থিত কেউই সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। শীর্ষ আদালতই বলে দিয়েছে, পদ্ধতিতে কোনও ত্রুটি ছিল না।’’

কংগ্রেস-সহ সব বিরোধীদের দাবি ছিল, যৌথ সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে তদন্ত করাতে। তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মেঘনাদের মতো আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন। আর দলের এমনই দুরবস্থা যে, রাজ্যসভা থেকে একজনকে ধার করে এনে বিতর্কের জবাব দিতে হচ্ছে। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও জেপিসি-র দাবিতে সরব হন।

কিন্তু দিন ভর রাফাল চর্চার মধ্যেও সবচেয়ে নজরকাড়া ছিল ‘হাওয়াই জাহাজ’ পর্ব। অরুণ জেটলি যখন বক্তব্য রাখছিলেন, তখন কংগ্রেস সাসংদরা কাগজের উড়োজাহাজ ওড়াতে শুরু করলেন। তা দেখেই স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের কড়া ধমক, ‘‘ছোট বেলায় হাওয়াই জাহাজ উড়িয়েছেন। এখনও কি বাচ্চা আছেন?’’

সব মিলিয়ে বুধবার দিন ভর চর্চা চলল রাফাল নিয়ে। তবে একটাই সদর্থক ছবি, অন্তত সংসদে আলোচনা হয়েছে। যদিও এদিনও দু’বার অধিবেশনের কাজ ব্যাহত হয়েছে। তবে তাতে খুব বেশি সময় নষ্ট হয়নি। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার রাফাল নিয়ে সংসদে ফের আলোচনা হবে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সমস্ত সদস্যকে হাজির থাকার জন্য হুইপ জারি করেছে।

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

Lok Sabha Rafale Rahul Gandhi Arun Jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy