দেশের মোট ৫৩৪ লোকসভা কেন্দ্রের ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৮৭ ভোটারকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালিয়েছে এডিআর।
ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি যেমনই দিয়ে থাকুন, বাস্তবে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাজের ফল নিয়ে আদৌ সন্তুষ্ট নন দেশের মানুষ। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের ঠিক মুখে, এমনই এক সমীক্ষার রিপোর্ট মোদী-অমিতদের কপালে ভাঁজ ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে করা সমীক্ষার ফলে দেখা যাচ্ছে, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বা পানীয় জল, মানুষের সবচেয়ে বেশি চাহিদার জায়গাগুলোতে মাঝারিরও নীচে নম্বর পেয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সমীক্ষাটি চালিয়েছিল দিল্লি ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)।
দেশের মোট ৫৩৪ লোকসভা কেন্দ্রের ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৮৭ ভোটারের উপর এই সমীক্ষা চালিয়েছে এডিআর। সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের নিরাপত্তা বা সন্ত্রাস হানার থেকেও জনগণ অনেক বেশি চিন্তিত কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, পানীয় জলের মতো বিষয়গুলো নিয়ে। সমীক্ষাটা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবর এবং ডিসেম্বর মাসে। সে সময় যদিও পুলওয়ামা কাণ্ড ঘটেনি। আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, এই সমীক্ষা মূলত দেশবাসী সরকারের কাছ থেকে কী চান তার উপর। সমীক্ষা থেকে এটা বোঝা সম্ভব না, ওই ৩ লক্ষ ভোটার বিজেপিকে ভোট দেবেন কি না। কারণ সেটা তাঁদের থেকে জানতে চাওয়া হয়নি।
মানুষের প্রথম দশ দাবি বা চাহিদা কী? এডিআর-এর সমীক্ষার রিপোর্টে তালিকার শীর্ষে রয়েছে কর্মসংস্থান। ভোটাররা তালিকায় দ্বিতীয় অগ্রাধিকার দিয়েছেন চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তাকে। তৃতীয় পানীয় জল এবং তার পর যথাক্রমে রাস্তাঘাট, যানবাহন, সেচের জল, কৃষিকাজে ঋণের সুবিধা, কৃষিজাত দ্রব্যের ক্রয়মূল্য বাড়ানো, সার এবং বীজে ভর্তুকি এবং আইন-শৃঙ্খলা বা বিভিন্ন পলিসির প্রয়োজনীতার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা। শহর এবং গ্রামে এই তালিকায় একটু হেরফের হলেও দু’ক্ষেত্রেই ভোটাররা কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
২০১৭ সালে অল ইন্ডিয়া মিড-টার্ম নামে ঠিক এমনই একটা সমীক্ষা করেছিল এডিআর। ২০১৮ সালে এডিআর-এর সমীক্ষার সঙ্গে তার তুলনা করলে ফল আরও মারাত্মক বেরিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তখনও জনগণের জন্য চাকরি সুযোগ দেওয়া এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এই দুই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে অসফল ছিল সরকার।
আরও পড়ুন: গঙ্গায় বাড়তে থাকা ব্যাকটিরিয়াই অকেজো করে দিচ্ছে সব অ্যান্টিবায়োটিককে, বলছে গবেষণা
এই পুরো বিষয়টাকে এডিআর ১, ২, ৩ করে ৫ পর্যন্ত রেটিং করেছে। ৫-এর অর্থ ভাল। ৩-এর অর্থ মাঝারি এবং ১-এর অর্থ খারাপ। যে প্রথম ১০ প্রয়োজনীতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন ভোটাররা, সে সমস্ত ক্ষেত্রে সরকার কেমন কাজ করেছে, তা বোঝানোর জন্যই এই রেটিং। এডিআর-এর সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, প্রতিটা ক্ষেত্রেই সরকারের নম্বর মাঝারির থেকেও কম। এমনকি তালিকার এই ১০টি ক্ষেত্রেই সরকারের নম্বর এক বছরে বাড়ার বদলে বরং কমেছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারের নম্বর যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৩.২, সেখানে ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২.২। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই নম্বর ২০১৭ সালের সমীক্ষার ৩.৭ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২.৪। সে রকম পানীয় জল এবং রাস্তাঘাটের ক্ষেত্রেও ২০১৭ সালের চেয়ে নম্বর কমেছে সরকারের।
এর মধ্যে রাজ্য অনুযায়ী দেখলে, বিহার, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশ এই সাত রাজ্যে কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা অন্য রাজ্যগুলোর তুলনায় বেশি। তেমনই ওড়িশা, কর্ণাটক এবং দমন-দিউয়ে পানীয় জলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়তার কথা ভোটার জানিয়েছেন। ঠিক যেমন চন্ডীগড়ে ভোটারদের অগ্রাধিকার জল এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, দিল্লির যানজট, মেঘালয়ের কৃষি বীজ এবং সারে ভর্তুকি এবং ত্রিপুরায় ভোটাররা অগ্রাধিকার দিয়েছেন কৃষিকাজের জন্য ঋণের সুযোগকে। পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা কোন প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তা অবশ্য আলাদা করে এডিআর-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সমীক্ষার রিপোর্টে উল্লেখ নেই।
চলতি মাসেই বেকারত্বের বৃদ্ধি নিয়ে আরও একটি পরিসংখ্যান বেরিয়েছিল। সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই)-এর সমীক্ষায় তখন দেখা গিয়েছিল, গত এক বছরে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৭.২ শতাংশ। যেখানে গত বছর ঠিক এই সময়ে বেকারত্বের হার ছিল ৫.৯ শতাংশ। মোদী যতই কর্মসংস্থানের হিসাব দিন না কেন, বাস্তব যে ততটা সহজ নয়, এডিআর এই সমীক্ষা থেকে তা আরও একবার স্পষ্ট হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy