Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

লিনি নেই, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না সজিশের

কেরলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে নিজেই ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন লিনি।

যুগলে: স্ত্রী লিনির সঙ্গে সজিশ পুথুর। নিজস্ব চিত্র

যুগলে: স্ত্রী লিনির সঙ্গে সজিশ পুথুর। নিজস্ব চিত্র

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

প্রতি বছর জন্মদিনে স্ত্রী কিছু না কিছু উপহার পাঠাতেন সজিশ পুথুরকে। গত বছরে পাঠিয়েছিলেন একটি টি-শার্ট। এ বারে ২৮ মে দিনটা অবশ্য কেরলের বাড়িতে স্ত্রীকে ছাড়াই কাটবে বছর ছত্রিশের ওই যুবকের। কারণ, গত সাত দিনে আমূল বদলে গিয়েছে সজিশের পৃথিবী। মারণ নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার মারা গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, কেরলের পেরামব্রা হাসপাতালের নার্স লিনি পুতুসেরি। যে সত্যিটা এখনও ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি সজিশ।

কেরলের বাড়ি থেকে ফোনে সজিশ বলছেন, ‘‘এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না যে কী করব, কী করা উচিত। বাড়িতে থাকলে মাঝেমাঝেই মনে হচ্ছে, ও (লিনি) বোধহয় হাসপাতালে ডিউটি করতে গিয়েছে, একটু পরেই এসে পড়বে!’’

কেরলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে নিজেই ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন লিনি। গত সোমবার পেরামবারার মেডিক্যাল হাসপাতালে মারা যান ৩১ বছরের ওই নার্স। স্বামীকে লেখা শেষ চিঠিতে পাঁচ বছরের রিতুল এবং দু’বছরের সিদ্ধার্থের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মা ছাড়া কী ভাবে সামলাবেন দুই ছেলেকে, তা নিয়ে ভেবেও কূল কিনারা পাচ্ছেন না সজিশ। বলছেন, ‘‘বড় ছেলেকে বলেছি, হয়তো কিছু বুঝেওছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ছোটটিকে নিয়ে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় মায়ের জন্য বায়না করছে। তখন বুঝতে পারছি না ওকে কী ভাবে সামলাব।’’ সন্তানদের মুখ চেয়েই বাহরিনে অ্যাকাউন্ট্যান্টের চাকরিতে ইতি টানার সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন সজিশ। বলছেন, ‘‘কেরল সরকার কী চাকরি দেবে, তা জানি না। কিন্তু এ ছাড়া আমার আর কোনও উপায় নেই।’’

স্ত্রীর সঙ্গে গত শুক্রবার সকালে শেষ বার কথা বলেছিলেন সজিশ। ভিডিয়ো কলে। লিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর জ্বর না কমায় মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। সজিশের স্মৃতিচারণায়, ‘‘সে দিন ওকে দেখে আমার খারাপ কিছু মনে হয়নি। তবে পরে জেনেছি, নিপা ভাইরাসের নাম না জানলেও লিনি তখনই বুঝতে পেরেছিল যে, ও নিজে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাই ওর মা-বোনদের সঙ্গে যেতে নিষেধ করেছিল। এমনকি, হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসককে নিজেই বলেছিল, ওকে যেন আলাদা রাখা হয়।’’

এর পরে ভাইয়ের ফোনে সজিশ জানতে পারেন, লিনির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তড়িঘড়ি করে শনিবার রাতে দেশে ফিরেছেন, তত ক্ষণে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় আইসিইউয়ে ভর্তি করানো হয়েছে লিনিকে। পরের দিন, রবিবার সকালে শেষ বারের মতো দেখা হয় দু’জনের। সজিশের কথায়, ‘‘ওর মুখে অক্সিজেন মাস্ক ছিল। কথা বলতে পারেনি, শুধু আমার হাতটা অনেকক্ষণ ধরে ছিল।’’ স্ত্রীর লেখা চিঠি যতক্ষণে হাতে পান সজিশ, ততক্ষণে সব শেষ।

নার্সিং পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরিতে ঢোকার পরেই মারা গিয়েছিলেন লিনির বাবা। সেসময় মা এবং দুই বোনের দায়িত্ব এসে পড়ে সংসারের একমাত্র রোজগেরে লিনির উপরেই। নার্স হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালনেও কোনও দিন পিছপা ছিলেন না। নিপা-যুদ্ধে লড়াই করেছেন সাধ্যমতো। তাই স্ত্রীয়ের জন্য রীতিমতো ‘গর্বিত’ সজিশ। বলছেন, ‘‘ও এখন আমার কাছেও হিরো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sajish Puthur Husband Wife Nipah Virus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE