Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘কাশ্মীর অহিংস প্রতিবাদে ফুঁসছে’

মনোবিদ অনিরুদ্ধ কালা, জনস্বাস্থ্যকর্মী ব্রিনেল ডিসুজা, সাংবাদিক রেবতী লাউল এবং সমাজকর্মী শবনম হাসমি কাশ্মীরে ছিলেন ২৫-৩০ সেপ্টেম্বর, জম্মুতে ৬-৭ অক্টোবর।

কাশ্মীর। ছবি: পিটিআই।

কাশ্মীর। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১৪
Share: Save:

পর্যটনে অনুমতি মিলেছে। মোবাইলে রাশ শিথিল হতে চলেছে। প্রশাসন আমজনতাকে অনুরোধ করছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোজ জোরগলায় বলছেন, একটা বুলেটও লাগেনি দু’মাসে। কাশ্মীর নিয়ে বিরোধী আশঙ্কা বৃথা প্রমাণ হয়েছে। শনিবার চার সমাজকর্মীর একটি দল সম্প্রতি কাশ্মীর এবং জম্মু ঘুরে এসে তাঁদের রিপোর্ট প্রকাশ করলেন, সেই ছবিটা কিন্তু সরকারি বয়ানের চেয়ে আলাদা।

মনোবিদ অনিরুদ্ধ কালা, জনস্বাস্থ্যকর্মী ব্রিনেল ডিসুজা, সাংবাদিক রেবতী লাউল এবং সমাজকর্মী শবনম হাসমি কাশ্মীরে ছিলেন ২৫-৩০ সেপ্টেম্বর, জম্মুতে ৬-৭ অক্টোবর। তাঁরা কথা বলেছেন, সমাদের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে। তার মধ্যে আছেন— রাজনীতিক, আমলা, গৃহবধূ, স্কুলশিক্ষক, ব্যবসায়ী, ফলবিক্রেতা, ট্যাক্সিচালক, ছাত্র, কবি, চাষি, শিশু, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, কেটারিং ব্যবসায়ী। আছেন পণ্ডিত, শিখ, খ্রিস্টানরাও। শ্রীনগর থেকে বারামুলা, অনন্তনাগ থেকে বাদগাম এবং জম্মু— সর্বত্র ওঁরা শুনেছেন একই আর্ত প্রতিক্রিয়া।

এই দুই মাসে একটাও গুলি ছুড়তে হয়নি বলে বারবার বক্তৃতায় বলছেন অমিত শাহ। এই আপাত শান্তিকেই কাশ্মীরের জনসমর্থন বলে দাবি করছে সরকার। শবমনদের রিপোর্ট কিন্তু দাবি করছে, হিংসার প্রকোপ যে দেখা যায়নি, সেটা কাশ্মীরিদের দাঁতে দাঁত চাপা সিদ্ধান্ত। তাঁরা আসলে খুব ভেবেচিন্তেই অহিংস প্রতিবাদের রাস্তায় গিয়েছেন। কী রকম? বেশির ভাগই শবনমদের বলেছেন, তাঁরা দোকানপাট, অফিস বন্ধ রেখেছেন নিজে থেকেই। দু’তিন জন জানিয়েছেন, দোকান বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে জঙ্গি সংগঠনের সাঁটা পোস্টার তাঁরা দেখেছেন। তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক বলেছেন, কী ভাবে আধাসামরিক বাহিনী বাধ্য করছে ঝাঁপ খোলা রাখতে। তার অবধারিত জবাব, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাশ্মীরিরা দিয়েছেন, সব কিছু বন্ধ
করে রেখে।

৩৭০ বাতিল হওয়ার পরে জম্মুতে সকলে উল্লসিত, এ রকম একটা ছবিও সংবাদমাধ্যমের একাংশে তুলে ধরা হয়েছে বারবার। কিন্তু সেটা অনেকটাই সত্য নয় বলেই মনে হয়েছে শবনমদের। জম্মুতে কোনও কড়াকড়ি নেই। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক, গতিবিধি অবাধ,
মোবাইল কাজ করছে। তবু হোটেলগুলো ফাঁকা। হতাশ এক মালবাহক বললেন, ‘‘কাশ্মীরের যদি একটা চোখ নষ্ট হয়ে থাকে, আমাদের দু’টো চোখই গিয়েছে।’’

কেন এ কথা? জম্মুর লোকজনই ওঁদের জানিয়েছেন, জম্মুর ৩৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা ছিল শুধু পরিবহণ থেকে। ৫ অগস্টের পর থেকে তাতে শনির দশা। স্টেশন থেকে মাল নিয়ে অন্তত ৫০০ ট্রাক রোজ আশপাশের এলাকায় যেত। এই দুই মাসে সেই সংখ্যাটা চার দিনে একটা ‘ট্রিপ’ পাওয়ায় এসে ঠেকেছে।

আজ দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন শবনম-রেবতীরা। রেবতী সেখানে দাবি করেন, ‘‘কাশ্মীরের থেকেও কম সংখ্যক মানুষ জম্মুতে মুখ খুলেছেন। ওঁদের বাধ্য করা হচ্ছে বলতে, ওঁরা খুশি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Article 370 Jammu and Kashmir Nonviolent Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE