অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আম জনতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে ১৫ লাখ টাকা। আরও ছিল নানা প্রতিশ্রুতির সম্ভার। কিন্তু তার কোনওটাই প্রায় পূরণ হয়নি। পাঁচ বছর পর ফের ভোটের মুখে দেশ। ফের নয়া চমক নিয়ে হাজির নরেন্দ্র মোদী। এবার ঘরে ঘরে চিঠি পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান দিচ্ছেন, তাঁর সময়কালে কী কী করেছে এনডিএ সরকার। সাড়ে সাত কোটি চিঠি ছাপিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছনোর কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। আরও একটা নির্বাচনী ‘গিমিক’ বলে সরব বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, এই চিঠি ছাপতে খরচ হয়ে গিয়েছে ১৫ কোটিরও বেশি। জনগণের টাকা খরচ করে নিজের ঢাক পেটাচ্ছেন মোদী। যদিও সরকারি তরফে সাফাই দেওয়ার বিরাম নেই।
ভোটের মুখে সরকারের ‘গুণকীর্তন’-এ মোদীর নয়া ‘অস্ত্র’ চিঠি। পত্রবার্তার আপাত উদ্দেশ্য, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প বা প্রধানমন্ত্রী ‘জন আরোগ্য যোজনা’র (পিএমজেএওয়াই) সুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ওয়াকিবহাল করানো। তার জন্য ইতিমধ্যেই সাড়ে সাত কোটি চিঠি ছাপিয়ে নাম ঠিকানা লিখে প্রস্তুত। বড় একটা অংশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নাগরিকদের অনেকে সেই চিঠি পেতেও শুরু করেছেন। কিন্তু আদপে শুধু আয়ুষ্মান ভারত নয়, দু’পাতার ওই চিঠিতে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’, ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’, ‘সৌভাগ্য যোজনা’, প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনার মতো প্রকল্পের বিষয়বস্তুও থাকছে চিঠিতে। চিঠির খামের উপর মোদীর ছবি দিয়ে পিএমজেএওয়াই প্রকল্পের লোগো।
আর চিঠিতে মোদীর ব্যক্তিগত বার্তা। তার সারমর্ম, ‘‘আমি ব্যক্তিগত জীবনে দারিদ্রকে খুব কাছ থেকে দেখেছি...। গরিবদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সবচেয়ে ভাল উপায় হল তাঁদের আরও ক্ষমতা দেওয়া। সেই কারণেই যখনই দেশবাসী যখন আমাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে তাঁদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন, তখন থেকেই সাধারণ মধ্যবিত্ত, গরিব ও মহিলাদের ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করেছি। গরিবদের জন্য বাড়ি বানানো, আয় বাড়ানো, স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষার উন্নতিতে আমরা অনেকগুলি পদক্ষেপ করেছি।...’’
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই চিঠি ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
আরও পড়ুন: ভুবনেশ্বরে পৌঁছল শ্রীকান্ত, ২৪ কোটির খোঁজে গভীর রাতেও টানা জেরা
কিন্তু সরকারের ঢক্কানিনাদ করতে গিয়ে বিপুল অর্থব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, শুধু চিঠি ছাপতেই সরকারি কোষাগার থেকে ১৫.৭৫ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে চিঠি পাঠানোর খরচ, যা চিঠি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অর্থাৎ আরও প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকার মতো। কেরলের সিপিএম সাংসদ এমবি রাজেশ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বাজেটে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মোট খরচই ধরা হয়েছে ২০০০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম বাদ দিয়েও এত টাকা কোথা থেকে আসছে? ভোটের আগে এটা গিমিক ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
তবে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের সিইও ইন্দু ভূষণ অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, এই টাকা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনিক খরচ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এটা নির্বাচনী গিমিক নয়। বরং এই চিঠির মাধ্যমেই বিভিন্ন রাজ্যের প্রান্তিক মানুষ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা ও অধিকার সম্পর্কে জানতে পারছেন।’’
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের ‘বস্ত্রহরণ’ করেছে কমিশন-টিআরএস-মিম! কংগ্রেসের ‘দ্রৌপদী’ কার্টুনে তীব্র বিতর্ক
ইন্দু ভুষণ যাই বলুন, অবিজেপি রাজ্যগুলিতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন পড়েছে। কেরলে প্রায় ১২ লাখ চিঠি পৌঁছেছে বলে সূত্রের খবর। অন্যান্য রাজ্যেও চিঠি আসতে শুরু করেছে। রাজ্য প্রশাসনকে না জানিয়ে কেন্দ্র এ ভাবে চিঠি পাঠাতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে অনেক রাজ্যই। কেরলের শীর্ষ স্তুরের এক বাম নেতা জানিয়েছেন, কয়েক জনের কাছে চিঠি পৌঁছনোর পর থেকেই তাঁরা এ নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছেন। আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে নাম তুলে নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy