Advertisement
E-Paper

সার্জিকাল স্ট্রাইক নয়, আকাশ থেকে মাসুদের ডেরাতেই আঘাত হানতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা

মাসুদ আজহারের ঘাঁটিতে নিখুঁত লক্ষ্যে আকাশ থেকে বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ—চাই সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য। 

প্রেমাংশু চৌধুরী 

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:০১
মাসুদ আজহার এবং তার জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি শিবিরগুলিতে ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’ অর্থাৎ নিখুঁত বিমান হানার পরামর্শ দিলেন প্রাক্তন সামরিক শীর্ষ কর্তারা। —ফাইল চিত্র।

মাসুদ আজহার এবং তার জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি শিবিরগুলিতে ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’ অর্থাৎ নিখুঁত বিমান হানার পরামর্শ দিলেন প্রাক্তন সামরিক শীর্ষ কর্তারা। —ফাইল চিত্র।

মাসুদ আজহারের ঘাঁটিতে নিখুঁত লক্ষ্যে আকাশ থেকে বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ—চাই সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য।

নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করতে হামলা— চাই নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্য।

এ সব করতে গিয়ে পুরো দমে যুদ্ধ লেগে গেলে কী হবে, তার হিসেবও নিখুঁত ভাবেই কষতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে।

পুলওয়ামার হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পাকিস্তানকে বড় মাপের মূল্য চোকাতে হবে। আজ ওড়িশায় এক সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘ভারতীয় বাহিনীর সফল অভিযানের ফলে কাশ্মীরে জঙ্গিরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের চাঙ্গা করতেই পাকিস্তান পুলওয়ামায় হামলা চালিয়েছে। পাল্টা আঘাত চালাতে বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।’’

কিন্তু কী ভাবে প্রত্যাঘাত করবে মোদী সরকার?

আরও পড়ুন: পুলওয়ামা তদন্তে নজরে লাল গাড়ি

প্রাক্তন সামরিক শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রেখার এ পার থেকে গোলাগুলি ছোড়া বা ফের সার্জিকাল স্ট্রাইকের থেকে অনেক বেশি নিরাপদ বিকল্প মাসুদ আজহার এবং তার জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি শিবিরগুলিতে ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’ অর্থাৎ নিখুঁত বিমান হানা। বায়ুসেনার প্রাক্তন প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার চিফ মার্শাল ফালি হোমি মেজরের মতে, ‘‘বায়ুসেনার সেই ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তার জন্য একেবারে নিখুঁত, ‘রিয়াল টাইম’ গোয়েন্দা তথ্য থাকতে হবে।’’ গোয়েন্দা তথ্য যে নির্ভুল, সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে হবে। অর্থাৎ, জানতে হবে ঠিক কোথায় জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি শিবির রয়েছে।

আরও পড়ুন: এ বার আত্মঘাতী হামলা পাক কনভয়ে! নিহত ৯ পাক সেনা, আহত ১১

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা সামরিক বাহিনীকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবারই পাক-সীমান্ত ঘেঁষা পোখরানে বায়ুসেনা আকাশ থেকে মাটিতে কোনও লক্ষ্যে হামলা নিয়ে মহড়া দিয়েছে। বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া পোখরানে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা কতটা জোরের সঙ্গে, কত দ্রুত এবং কত নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত করতে পারি, সেই ক্ষমতা তুলে ধরছি।’’

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানেন?

সামরিক হামলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে রুগ্‌ণ পাকিস্তানের উপরে আর্থিক চাপ বাড়াতে অন্য অঙ্কও কষা হচ্ছে। পাক সরকার যে ভাবে জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য করে, তা বন্ধ করতে এবং পুলওয়ামার ঘটনায় পাক যোগ প্রমাণ করতে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর হাতে এ নিয়ে প্রামাণ্য নথি তুলে দেওয়া হবে। জঙ্গিদের আর্থিক মদত বন্ধ করতে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সক্রিয়। এ নিয়ে আলোচনা করতে আজই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন গোয়েন্দা দফতরগুলির শীর্ষ কর্তারা।

সামরিক হামলার ছক কষতে গিয়ে দু’টি বিষয় নিয়ে চিন্তায় সামরিক বাহিনীর কর্তারা। এক, চালে ভুল হলে পুরো দমে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি নেওয়া হবে কি না, তা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিতে হবে। দুই, পাল্টা হামলা কবে চালানো হবে। প্রাক্তন ফৌজি কর্তাদের মতে, যে কোনও ‘গোপন অভিযান’ থেকেই পুরোদস্তুর যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। সে সার্জিকাল স্ট্রাইক-ই হোক বা ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’। তাই এই ধরনের কোনও অভিযানের সমস্ত রকম ফলশ্রুতি হিসেবের মধ্যে রেখেই অভিযানের পরিকল্পনা তৈরি হয়।

সামরিক বাহিনীর নীতি বলে, লোহা গরম থাকতে থাকতে হাতুড়ি মারা হয় না। বদলা নেওয়া হয় সব ঠান্ডা হয়ে গেলে। পুলওয়ামার পরে ভারতের দিক থেকে পাল্টা হামলা হতে পারে, আঁচ করে পাকিস্তান এখন তৈরি। এখন ইট ছুড়তে গেলে পাটকেল খেতে হবে। তার বদলে নিজেদের সুবিধা মতো, সময়-সুযোগ বুঝে পাল্টা মার দিতে হবে। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন উপপ্রধান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল রাজ কাড়িয়ার মতে, ‘‘পাকিস্তানকে বার্তা দিতে হলে একেবারে ভিতরে ঢুকে মারতে হবে।’’ কিন্তু প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান ফালি হোমি মেজরের মতে, ‘‘পাকিস্তানের নিজের মাটিতে হামলা চালানোর বদলে, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালালে পাল্টা জবাব দেওয়ার আগে দশ বার ভাববে পাকিস্তান।’’

সেনা কর্তারা বলছেন, ‘প্রিসিশন এয়ার স্ট্রাইক’-এর কথা ভাবা হলেও কোনও ভাবেই তা জনবহুল এলাকায় করা যাবে না। কারণ নিরীহ মানুষের প্রাণ গেলে ভারতের দিকেই আঙুল উঠবে। সেই জন্যই পাকিস্তানের মাটি থেকে একেবারে নির্ভুল গোয়েন্দা তথ্য চাই। আজ এক সাক্ষাৎকারে ফালি হোমি মেজর মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই নিশ্চয়তা ছিল না বলেই আমেরিকা পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের ডেরায় আকাশ থেকে বোমা ছোড়েনি। তার বদলে মার্কিন নেভি সিল-এর কম্যান্ডোরা ঝুঁকি নিয়ে লাদেনের ডেরায় নেমেছিল।

পুলওয়ামার হামলার ঠিক আগে, ১৩ ফেব্রুয়ারি ইরানেও নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে একই ধরনের বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে হামলা হয়েছে। সেই হামলারও শিকড় মিলেছে পাকিস্তানে। ইরানও চোখ রাঙিয়েছে পাকিস্তানকে। ২০১৬-র সার্জিকাল স্ট্রাইক যাঁর নেতৃত্বে হয়েছিল, সেনার নর্দান কম্যান্ডের সেই প্রাক্তন প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল ডি এস হুডার প্রশ্ন, ‘‘পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তান, ইরান, ভারত— সকলেই পাক-মদতে পুষ্ট সন্ত্রাসের শিকার। এদের থেকে প্রত্যাঘাত হবেই। আমেরিকাও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এর পরেও আর কী হলে যে পাকিস্তানের জেনারেল ও আইএসআই কর্তারা সোজা হবেন, কে জানে!’’

Pulwama Attack পুলওয়ামা পুলওয়ামা হামলা Terrorism Terror Attack Masood Azhar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy