Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মেয়েরা কোথায়? জানা নেই সন্তান হারানো মায়ের

সরু ঘিঞ্জি সেই গলিতেই ঢাল্লু কুমারের দোতলা বাড়ি। যার একতলার একটি আট ফুটের খুপরিতে গত শনিবার এসে উঠেছিলেন বীণা দেবী ও তাঁর তিন শিশুকন্যা। মানসী, পারুল ও শিখা। পুলিশের মতে, অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগেই মারা গিয়েছে তিনটি শিশু। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বলছেন, অন্তত আট দিন কিছুই খাওয়া জোটেনি তাদের কারও।

মৃত শিশুদের মা ও আত্মীয়। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে। পিটিআই

মৃত শিশুদের মা ও আত্মীয়। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে। পিটিআই

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৯
Share: Save:

ঝাঁ-চকচকে রাজধানীকে দূরে ফেলে এসেছি পাঁচ মিনিট আগে।

পটপরগঞ্জ রোডের রাস্তার ওপারে অ্যাপার্টমেন্টের সারি, নির্মীয়মাণ মেট্রোর সদর্প উপস্থিতি। সেই বড় রাস্তা ছেড়ে অলিগলির ভুলভুলাইয়া ভেদ করে, ভেসে যাওয়া নর্দমা, হাঁটু-কাদা পেরিয়ে তবে মান্ডাবলীর পণ্ডিত চকের দু’নম্বর গলি।

সরু ঘিঞ্জি সেই গলিতেই ঢাল্লু কুমারের দোতলা বাড়ি। যার একতলার একটি আট ফুটের খুপরিতে গত শনিবার এসে উঠেছিলেন বীণা দেবী ও তাঁর তিন শিশুকন্যা। মানসী, পারুল ও শিখা। পুলিশের মতে, অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগেই মারা গিয়েছে তিনটি শিশু। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বলছেন, অন্তত আট দিন কিছুই খাওয়া জোটেনি তাদের কারও।

মান্ডাবলী থানায় দেখা হয়েছিল বীণাদেবীর সঙ্গে। চেয়ার বসে আপন মনেই পা দোলাচ্ছিলেন। বাঁ হাতের নখ দিয়ে এক মনে খুঁটছিলেন বেঞ্চের হাতল। বাহ্যজ্ঞানশূন্য নত দৃষ্টি। ‘‘মেয়েরা কোথায়?’’ প্রশ্ন করতে ফ্যালফ্যাল করে তাকালেন মধ্য তিরিশের বীণা। এক পলক থেমে ফের চোখ নামিয়ে মনোযোগ দিলেন বেঞ্চের হাতলে।

বীণার স্বামী মঙ্গল, মেদিনীপুরের যুবকের এখনও কোনও খোঁজ নেই। তাতে অবশ্য অবাক নন মঙ্গলদের পুরনো পাড়ার লোকেরা। এর আগে মান্ডাবলীরই গলি নম্বর ১৪-তে প্রায় মাস চারেক ছিল মঙ্গলের পরিবার। ভাঙাচোরা দোতলা ওই বাড়িতে অন্তত ১০-১২টি পরিবারের বাস। সামনের মুদির দোকানে দাঁড়িয়ে ছিলেন আয়েশা বেগম। বললেন, ‘‘রিকশা চালিয়ে দিনে ২০০-২৫০ টাকা রোজগার ছিল। কিন্তু মদ খেয়ে সব উড়িয়ে দিত মঙ্গল। সে জন্যই ওর আগের বৌ চলে যায়। এ বৌয়ের তো কোনও হুঁশ ছিল না। আশপাশের পড়শিরাই খাবার দিয়ে যেত। কিন্তু ওই ভাবে আর কত দিন চলে?’’

সত্যিই চলেনি। বাড়িওয়ালার রিকশা চালাতেন মঙ্গল। নেশার ঘোরে চুরি যায় সেটিও। বাড়িভাড়া জমে যাওয়ায় বাড়ির মালিক তিলক মেহতা গত শনিবার ঘর থেকে জোর করেই বার করে দেন বীণা ও মেয়েদের। ঘটনার পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন তিলক। দুরবস্থা দেখে বীণা ও তিন মেয়েকে পণ্ডিত চকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন মঙ্গলের বন্ধু নারায়ণ যাদব। ওই বাড়িতেই মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে মারা যায় তিন বোন। দিল্লি পুলিশ বলছে, বিতর্ক এড়াতে দু’-দু’বার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। দু’বারই মৃত্যুর কারণ হিসেবে অনাহারকেই দায়ী করা হয়েছে।

কিন্তু কিছু ধাঁধা এখনও রয়ে গিয়েছে। নারায়ণ কি বুঝতে পারেননি তিন বোন অভুক্ত? বাচ্চারাও কাউকে সে কথা জানায়নি? তিন বোন একসঙ্গে কী ভাবে মারা গেল? জবাব নেই কারও কাছে।

বীণার স্যাঁতসেঁতে ঘরে বৃষ্টির জল চুইয়ে পড়ে মেঝে থইথই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রতিবেশিনী সবিতা বললেন, ‘‘গা-ঘেষাঘেষি করে থাকি বটে, কিন্তু সত্যিই কিছু বুঝতে পারিনি। পারলে কিছু খাবার ঠিক দিতাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE