Advertisement
E-Paper

গোঁফেই আটকে পৌরুষ, আছে পুলিশদের জন্য উৎসাহ ভাতাও

হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গোলমাল’ ছবির ভবানী শঙ্কর উৎপল দত্ত নিজের পাকানো গোঁফে মোচড় দিয়ে ‘মুছমুণ্ডা’দের হতচ্ছেদ্দা করতেন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৪:০২
ভবানী শঙ্কর (বাঁ দিকে) ও সংগ্রাম ‘সিম্বা’ ভালেরাও

ভবানী শঙ্কর (বাঁ দিকে) ও সংগ্রাম ‘সিম্বা’ ভালেরাও

ভবানী শঙ্কর আর বিনোদ কুমার সিংহ দু’জনেই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, পৌরুষের অন্যতম নির্ণায়কচিহ্ন হল পুরুষ্টু গুম্ফ!

হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গোলমাল’ ছবির ভবানী শঙ্কর উৎপল দত্ত নিজের পাকানো গোঁফে মোচড় দিয়ে ‘মুছমুণ্ডা’দের হতচ্ছেদ্দা করতেন। আর যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে পুলিশের এডিজি বিনোদ কুমার সিংহ নিজে গুম্ফহীন হলেও পুরুষালি ব্যক্তিত্ব, সাহস এবং গরিমা বৃদ্ধিতে গোঁফের অবদানের ভয়ানক গুণগ্রাহী।

উত্তরপ্রদেশে ‘প্রভিনশিয়াল আর্মড ফোর্স’ বা ‘প্যাক’-এর এই এডিজি এ বছর কুম্ভমেলায় গিয়ে তাঁরই ব্যাটেলিয়নের পাঁচ পুলিশ কর্মীর তাগড়াই গোঁফ দেখে যারপরনাই মুগ্ধ হন। তাঁদের তৎক্ষণাৎ পুরস্কৃত করেই বিনোদ থেমে থাকেননি। গোঁফপ্রেমে ভেসে সিদ্ধান্ত নেন, উত্তরপ্রদেশ ‘প্যাক’-এ পুলিশদের গোঁফ রাখতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ আমলে যে ভাতা শুরু হয়েছিল, তা আবার চালু করবেন। ‘ক্লিন শেভড’ এই অফিসারের তদ্বিরেই ব্রিটিশ আমলের ‘গোঁফ ভাতা’ নতুন করে চালু করা হচ্ছে সে রাজ্যে। আগের থেকে টাকার পরিমাণও প্রায় চার গুণ বেড়ে এখন ভাতা হবে আড়াইশো টাকা।

টেলিফোনে বিনোদ বললেন, ‘‘সুন্দর মোটা গোঁফ পুরুষকে আলাদা ব্যক্তিত্ব দেয়। এমন গোঁফকে যিনি লালন করেন, তাঁকে তো বাহবা ও উৎসাহ দিতেই হবে। উৎসাহ ভাতা পেয়ে যদি পুলিশদের মধ্যে গোঁফ রাখার ঐতিহ্য ফিরে আসে, খুব খুশি হব। ব্যাটেলিয়নেরও মর্যাদা বাড়বে।’’

ব্রিটিশ আমলে গোঁফের যত্নের জন্য উত্তরপ্রদেশে গোঁফওয়ালা পুলিশকর্মীরা মাসে ৫০ টাকা করে পেতেন। পুলিশ সূত্রের খবর, আশির দশক পর্যন্ত অনেকেই এই ভাতা পেয়েছেন। তার পর পুলিশে নতুন পোশাকবিধি চালু হয়। রোজ পরিষ্কার করে দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে ডিউটিতে আসা নিয়ম হয়। পাকানো-বাহারি গোঁফ পুলিশ কর্মীদের মুখ থেকে ক্রমশ উধাও হতে থাকে।

বিনোদের কথায়, ‘‘আমার নিজের ভাল গোঁফ ওঠে না। কিন্তু যদি কারও গোঁফ সত্যিই ভাল হয়, তা হলে তার মর্যাদা দেওয়া উচিত। এমনিতেই পুলিশকে লোকে সমঝে চলে, গোঁফ থাকলে অপরাধী নিশ্চিত আরও ভয় পাবে।’’ উত্তরপ্রদেশে ‘প্যাক’-এর আওতায় ৩৩টি ব্যাটেলিয়ন আছে। ইতিমধ্যে প্রতিটি ব্যাটেলিয়নকে জবরদস্ত গোঁফওয়ালা অফিসারদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। এর পর তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা হবে। তার পর ভাতা দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্যাক-এর এডিজি। তবে এ-ও স্পষ্ট করেছেন যে, গোঁফ রাখার জন্য কাউকে জোর করা হবে না।

বছর চোদ্দো আগে মধ্যপ্রদেশের ডাকাত-অধ্যুষিত মোরেনা অঞ্চলে নজরদারির জন্য ৫০ সদস্যের বিশেষ বাহিনী তৈরি করেছিল পুলিশ। তাঁরা মোটরবাইকে এলাকা টহল দিতেন। এই পুলিশদের পাকানো গোঁফ রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। পুলিশের যুক্তি— এ হল মানসিক চাপের খেলা! বিশাল গোঁফের জন্য ডাকাতদের ভয়াল দেখায়। পুলিশেরও মারকাটারি গোঁফ না থাকলে ডাকাতের সামনে মনোবল কমে যেতে পারে! ‘দবং’-এর চুলবুল পাণ্ডে থেকে ‘সিংঘম’-এর বাজিরাও বা হাল আমলের ‘সিম্বা’-র সংগ্রাম ভালেরাও, বলিউডের ছবির পুলিশ-নায়কেরা এখনও সবাই কেতাদুরস্ত গোঁফের মালিক!

বছর চল্লিশ আগেও কলকাতা পুলিশে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের অনেকে চাকরি করতেন। অনেকেরই ছিল মোচড়ানো গোঁফ। কলকাতা পুলিশের পুরোনো অফিসারদের অনেকেই মানছেন, সময়ের সঙ্গে পৌরুষ বা শক্তির ধারণাও বদলেছে। প্রেসিডেন্সি কলেজের আর্কিয়োলজি বিভাগের অধ্যাপক রূপেনকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ভারতে বৈদিকযুগে মুনিঋষিদের গোঁফদাড়ি থাকলেও আর্য সভ্যতায় দেবতারা ছিলেন দাড়িগোঁফ বিহিন। অনার্য অসুরেরা ছিলেন গোঁফশোভিত। সম্ভবত শক্তির সঙ্গে গোঁফের সম্পর্কের ধারণা এই অসুরদের থেকেই প্রথম আসে।

কলকাতার নামী প্লাস্টিক সার্জন মনোজ খন্না জানালেন, ভাল গোঁফ নেই বলে পুরুষ-পুরুষ লাগছে না—এই আক্ষেপ নিয়ে প্রতিদিন তাঁর চেম্বারে কেউ না কেউ আসেন। ৪০-৫০ হাজার টাকা লাগে গোঁফ ট্রান্সপ্লান্ট করাতে। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের ব্যাখ্যাতেও, ‘‘গোঁফ হল পুরুষ হরমোনের বহিঃপ্রকাশ। দেশবিদেশের সম্রাট, রাজা, এমনকি জমিদাররাও ক্ষমতা ও পৌরুষের প্রতীক হিসেবে গোঁফ রাখতেন। পৌরুষের সঙ্গে গোঁফের সংযোগ আছে বলেই ‘মাকুন্দ’ বলে একটা শব্দ বাংলায় রয়েছে। যে সব পুরুষের গোঁফ-দাড়ি নেই তাঁরা যেন সমাজের ব্যঙ্গের পাত্র। গোঁফেই যেন আটকে রয়েছে পৌরুষ!’’

UP Moustaches
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy