Advertisement
E-Paper

পাক মারছে একে অন্যকে, বিরল যমজ গ্রহাণুর হদিশ

নাসার নেতৃত্বে এই বিরল মহাজাগতিক বস্তুটির হদিশ পেয়েছে যে আন্তর্জাতিক গবেষকদল, তার সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দুই বাঙালি-সহ ৬ ভারতীয় রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ১৮:৩৩
সেই বিরল জোড়া গ্রহাণু। সৌজন্যে: নাসা।

সেই বিরল জোড়া গ্রহাণু। সৌজন্যে: নাসা।

একটা নয়। আলাদা আলাদা ভাবে দু’টো বা তিনটে নয়। এই প্রথম একটি এক জোড়া গ্রহাণু বা বাইনারি অ্যাস্টারয়েডের হদিশ পেলেন বিজ্ঞানীরা, যারা আকারে-আকৃতিতে হুবুহু একই রকমের। আর তারা একে অন্যকে পাক মারছে, নিয়মিত। হাত ধরাধরি করে! ২০ থেকে ২৪ ঘণ্টা অন্তর। প্রতিটির ব্যাস ৩ হাজার ফুট বা, ৯০০ মিটার। গ্রহাণুটির নাম- ‘2017-YE-5’। পাথুরে গ্রহাণুটি কয়লার মতো কালো।

নাসার নেতৃত্বে এই বিরল মহাজাগতিক বস্তুটির হদিশ পেয়েছে যে আন্তর্জাতিক গবেষকদল, তার সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দুই বাঙালি-সহ ৬ ভারতীয় রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

এমন মহাজাগতিক বস্তু যে এই ব্রহ্মাণ্ডে রয়েছে, তা জানাই যেত না, যদি না তা গত ২১ ডিসেম্বর এসে পড়ত পৃথিবীর খুব কাছে। ওই দিনই প্রথম সেটি এসে পড়েছিল পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৭ লক্ষ মাইল (বা, ৬০ লক্ষ কিলোমিটার) দূরে। পৃথিবী থেকে চাঁদ যতটা দূরে রয়েছে, তার ১৬ গুণ দূরত্বে। পৃথিবীর এতটা কাছে ওই বিরল মহাজাগতিক বস্তুটি আবার আসবে ১৭০ বছর পর।

তার আজব চেহারার ইঙ্গিত মিলল ২১ জুন

যে দিন সেই ‘আগন্তুক’ আমাদের সবচেয়ে কাছে এসেছিল, সে দিন কিন্তু বিজ্ঞানীরা আদৌ বুঝে উঠতে পারেননি তার চেহারা, চরিত্র। শুধু এইটুকুই জানতে পেরেছিলেন, তারা মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝের ‘গ্রহাণুদের মুক্তাঞ্চল’ বা অ্যাস্টারয়েড বেল্ট থেকে আসেনি। ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গল পেরনো তো দূরের কথা, তাদের ‘ঘর-বাড়ি’ পৃথিবীর খুব কাছেই। তাই এদের বলা হয়, ‘নিয়ার-আর্থ অ্যাস্টারয়েড’। এরা ঠিক কোথায় রয়েছে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে, সংখ্যায় তারা ক’জনা, কেমন তাদের চেহারা-চরিত্র, আচার-আচরণ, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ততটা জানা-শোনা নেই বলেই এদের থেকে আমাদের বিপদের আশঙ্কা বেশি। কোন দিক থেকে তারা কখন এসে হামলে পড়ে ঘাড়ে!

আরও পড়ুন- আজ রাতের আকাশে আলোর ঝর্না​

কেন বিরল এরা?

পৃথিবীর কাছে-পিঠে থাকা বাইনারি গ্রহাণুগুলির ১৫ শতাংশেরই শরীরের দু’টি খণ্ডের চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে। একটি খণ্ড খুব বড়। অন্য খণ্ডটি অনেকটা চাঁদের মতো, খুব ছোট। এ সব ক্ষেত্রে একটি খণ্ডের জন্ম হতে পারে অন্য খণ্ডটি থেকে। ১৫ শতাংশের শরীরের দু’টি খণ্ড অনেকটাই গায়ে গা লাগিয়ে রয়েছে। কিন্তু সে দিক দিয়ে ‘2017-YE-5’ গ্রহাণুটি একেবারেই অন্য রকমের। এমন গ্রহাণুর জন্ম আলাদা ভাবে হতে পারে।

ওই বিরল গ্রহাণুর হদিশ পাওয়ার পর থেকেই তার চেহারা-চরিত্র জানতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। গ্রহাণুটি যে একলা একলা ঘুরে বেড়াচ্ছে না মহাকাশে, দু’টি খণ্ডে ভাগ হয়ে রয়েছে তার দেহ, প্রথম তার ইঙ্গিত পায় নাসার গোল্ডস্টোন সোলার সিস্টেম রাডার (জিএসএসআর)। যার তদারকিতে ছিলেন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী মারিনা ব্রোজোভি। কিন্তু সেই হদিশ মিলেছিল যে রাডারে, তা চালানো হয় দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গে। অনেক দূর থেকে সেই গ্রহাণুকে বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন বলে বুঝতে পারেননি, সেই গ্রহাণুর দু’টি খণ্ড কি একে অন্যের সঙ্গে লেগে রয়েছে নাকি রয়েছে কিছুটা দূরে। এটাও বোঝা যায়নি, বিরল গ্রহাণুটির শরীরের দু’টি খণ্ড সমান চেহারার কি না।

আরও পড়ুন- ‘বাঁচার রসদ’ খুঁজতে গিয়ে আজ থেকে ‘ঘাতকে’র সন্ধানে নামছে নাসা​

একে অন্যকে পাক মারছে ২০/২৪ ঘণ্টা অন্তর

আন্তর্জাতিক গবেষকদলের অন্যতম সদস্য সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ই-মেলে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, সেই সময়েই প্রয়োজন হয় রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে ওই গ্রহাণুটিকে দেখার। কারণ, রেডিও তরঙ্গকে ব্যবহার করে যে টেলিস্কোপ চালানো হয়, তা অনেক বেশি নিখুঁত ভাবে দেখতে পায় বহু দূরে থাকা মহাজাগতিক বস্তুগুলিকে। খবর পাঠানো হয় পুয়ের্তো রিকোর অ্যারেসিবো অবজারভেটরিকে। একই সঙ্গে সতর্ক করা হয় পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রিন ব্যাঙ্ক অবজারভেটরি (জিবিও)-কে। দু’টিতেই রয়েছে রেডিও টেলিস্কোপ। গত ২৪ জুন অ্যারেসিবো অবজারভেটরির অবজারভেটরি থেকে ওই গ্রহাণুটিকে লক্ষ্য করে পাঠানো হয় রেডিও সিগন্যাল। গ্রহাণুটি থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসা রেডিও সিগন্যালটিকে ধরা হয় গ্রিন ব্যাঙ্ক অবজারভেটরিতে। ২৬ জুন ওই সিগন্যাল চালাচালিতেই ধরা পড়ে ওই বিরল গ্রহাণু ‘2017-YE-5’-র শরীর ভাগ হয়ে রয়েছে অবিকল একই চেহারার দু’টি খণ্ড গ্রহাণুতে। আর তারা গায়ে গা লাগিয়ে নেই। কিছুটা দূরে থেকে মহাকর্ষীয় বলে একে অন্যকে টেনে রেখে, যেন ‘হাত ধরাধরি করে’ তারা পাক মেরে চলেছে একে অন্যকে। ২০ থেকে ২৪ ঘণ্টা অন্তর। পাক মারার সময় তারা কখনও একে অন্যের কাছে আসে, কখনও-বা চলে যায় দূরে। তার ফলে তার ওপর পড়া আলোর বাড়া-কমা হয়।

চেহারায় অবিকল একই রকমের, জানা গেল কী ভাবে?

পশ্চিম ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিন ব্যাঙ্ক টেলিস্কোপ অবজারভেটরির অন্যতম বিজ্ঞানী রহিত দাশগুপ্ত ই-মেলে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, রাডার থেকে পাঠানো ও গ্রহাণুটি থেকে প্রতিফলিত সিগন্যাল খতিয়ে দেখে আমরা বুঝেছি, মহাজাগতিক বস্তুটির শরীরের দু’টি খণ্ডই চেহারায় অবিকল একই রকমের। কিন্তু সূর্যের আলো দু’টির পিঠ থেকে সমান ভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। একটি থেকে প্রতিফলিত হচ্ছে অনেক বেশি পরিমাণে, অন্যটি থেকে অনেকটাই কম।

কেন আলোর বাড়া-কমা গ্রহাণু থেকে আলোর প্রতিফলনে?

ধ্রুবজ্যোতির কথায়, ‘‘এটা তিনটি কারণে হতে পারে। দু’টি খণ্ডের ঘনত্বের ভিন্নতা। তা আলাদা আলাদা পদার্থ দিয়ে তৈরি হতে পারে। তাদের কোনও একটির পিঠ হতে পারে বেশি রুক্ষ। কোনওটা হতে পারে বেশি মসৃণ।’’

ছবি ও ভিডিও সৌজন্যে: নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি।

Binary Asteroid 2017 YE5 NASA Arecibo Observatory বাইনারি অ্যাস্টারয়েড
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy