Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লুচি ও মাংসাশী

একজন জাত ঘি-সাদা, অন্য জন ঝালে লাল। রোববারের সকাল হোক বা গোলবাড়ির একচিলতে টেবিল। লুচি-কষা মাংসে হাবুডুবু খেলেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়একজন জাত ঘি-সাদা, অন্য জন ঝালে লাল। রোববারের সকাল হোক বা গোলবাড়ির একচিলতে টেবিল। লুচি-কষা মাংসে হাবুডুবু খেলেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

আমার শাকাহারী বন্ধুদের কাছে আগাম ক্ষমা। আজকের বিষয়ে পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধ আছে। হাতের কাছে রুমাল নিয়ে বসুন বা একটু হালকা রুম ফ্রেশনার ছড়িয়ে দিন।

বাঙালি অমরত্ব না পাক, অমৃতের স্বাদ পেয়েছে তো বটেই। নইলে কী করে লুচি আর কষা মাংসের মতো একটি যুগলবন্দি স্বাদের জন্ম হয়, বাঙালির ঘরে! এ যেন উত্তম-সুচিত্রা, ফেলুদা-তোপসের মতোই যুগজয়ী। একটি ছাড়া অন্যটি বেমানান। একজন জাত ঘি-সাদা, অন্য জন ঝালে লাল। আহা! কী চমৎকার ভিশুয়াল। রোববারের সকাল হোক বা গোলবাড়ির একচিলতে টেবিল, সর্বত্র পূজ্যতে।

পুজোর কথা যখন উঠল, তখন পেটপুজোর কথাই চলুক। লেদার-ফেদার নিয়ে পুরনো গল্পটা আবার শুনবেন? আমাদের সদ্য কৈশোর পেরোনো বয়স তখন। শ্যামপুকুর স্ট্রিট। রোববারের মাঝ-সকাল। পাড়ার ৮ থেকে ৮০র ইউনিভার্সাল ফণীদা, দ্য গ্রেট ফণীলাল মিত্র, হাতের সিগারেটটা একটা প্যারাবলিক কার্ভে থ্রো করে, আমার দিকে একটা ঘনাদা-লুক নিয়ে বললেন : কী হে খোকা! আজ বাড়িতে লেদার না ফেদার? আমার বোকা বোকা মুখ দেখে ফণীদা নিজেই এগিয়ে এলেন উদ্ধারকার্যে। বাঁকা হেসে বললেন : পাঁঠা না মুরগি? আমার স্মার্টনেস ততক্ষণে ফিরে এসেছে। উত্তর দিলাম : আজ্ঞে কচি লেদার ও লুচি।

লুচির ব্যাপারে আমার দুইখান কথা আছে। ফুলকো ও সাদা। এই চাই লুচির লুক। নইলে ব্যাপারটা টেবল এস্থেটিক-এর পরীক্ষায় ডাহা ফেল। সাদা রং মানেই সেরা লুচির পাশমার্ক। লালচে হলেই ফেল। আমি তো বলি, রঙের এদিক-ওদিক ভোটের খেলায় চলে, বাঙালির লুচির থালায় চলে না।

ময়দার সঙ্গে সামান্য সুজির মিশেলে যে সাদা ও ফুলকো লুচির সৃষ্টি, তার তুলনা আর কোথায়? শ্রীরামকুমার চাটুজ্যের বিখ্যাত গান ‘লুচি তুমি অরুচির রুচি’ শুনলে এ বিষয়ে কনফার্মড হবেন, এটুকু বলতে পারি।

আর কষা মাংস? তার কথা তো কষিয়ে বলতে হয়। রং হওয়া চাই লাল, স্বাদে মৃদু ঝাল। এই হল কষা মাংসের পারফেক্ট কম্বিনেশন। সেদ্ধ হতে হবে নরম-নরম, কিন্তু গলে গেলেই নম্বর কাটা। ক’টা সিটিতে ফাইনাল বেল বাজবে, সেটার কোনও স্কুল হয় না। মা-মাসিমাদের আবহমান হেঁসেলে তার কোর্স চলে আসছে সেই কত দিন ধরে! বাজারে গিয়ে শুধু বলতে হবে, সিনা-র থেকে দেবেন। হাড়েমাসে জড়ানো। অনেকে চান পায়ের দিক থেকে। সেটাও চলতে পারে।

আজকের গল্প শুরু করেছিলাম আমার শাকাহারী বন্ধুদের দিয়ে। সেরকমই এক বন্ধুর মা একবার খাইয়েছিলেন লুচি আর কষা সয়াবিনের ঝাল। বিশ্বাস করুন, আমার মতো হার্ডকোর মাংসাশী বাঙালি বাড়ি ফিরে গিয়েছিল কষা মাংসের স্বাদ নিয়ে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, জীবনে স্বাদের ব্যাপারে এমন ঠকা বেশি ঠকিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE