Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Rabindra Sadan

সুরুচিপূর্ণ সুন্দর এক সন্ধ্যা

শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ০৪:৪১
Share: Save:

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি অরূপবীণা সঙ্গীত ও নৃত্য অ্যাকাডেমির বার্ষিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় রবীন্দ্রসদনে। অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধে সমবেত সঙ্গীত ও নৃত্য এবং আবৃত্তি ও শ্রুতিনাটকের মঞ্চায়ন এবং দ্বিতীয়ার্ধে রবীন্দ্র-নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’ দর্শকের মনোরঞ্জন করেছিল। অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্দ্রাণীর সঙ্গীতশিক্ষা রবীন্দ্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের বিশিষ্ট শিক্ষাগুরুদের কাছে। অনুষ্ঠানে তার পরিচয় পাওয়া যায়। সুন্দর সুরুচিপূর্ণ একটি সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই। জানা গেল, অরূপবীণা নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে একটি স্মারক পুস্তিকাও প্রকাশিত হয় এ দিন। সংবর্ধিত করা হয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ (তিনি অবশ্য উপস্থিত ছিলেন না), নৃত্যগুরু শুভাশিস ও সুস্মিতা ভট্টাচার্য, আবৃত্তিকার বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ এবং সমাজসেবিকা নীলাঞ্জনা সান্যালকে। সমবেত সঙ্গীত, নৃত্য এবং শিশুদের নৃত্য, সঙ্গীত ও আবৃত্তির পরিবেশনও ছিল চমৎকার। সমগ্র অনুষ্ঠানটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপন করেন দেবাশিস বসু। শ্রুতিনাটক ‘লিপিকা’ থেকে ‘পায়ে চলার পথ’ (পরিচালনা : তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়) ছিল সুখশ্রাব্য। এর পাঠের সঙ্গে ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান অনুষ্ঠানটিতে নতুন মাত্রা যোগ করে।

বিরতির পর নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’র পরিবেশনা। জাতকের একটি কাহিনি অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথ ‘চণ্ডালিকা’ নাটিকা রচনা করেন ১৯৩৫ সালে। এটি শান্তিনিকেতনের সিংহসদনে অভিনীত হয়। পরবর্তী কালে ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর উৎসাহে নাটকটিকে নৃত্যনাট্যে রূপান্তরিত করে ১৬ মার্চ দোলপূর্ণিমায় শান্তিনিকেতনে এবং ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ কলকাতার ছায়া প্রেক্ষাগৃহে উপস্থাপিত করা হয়। শান্তিনিকেতনের নৃত্যধারায় এটিকে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেই থেকে এই নৃত্যনাট্য দেশে-বিদেশে প্রদর্শিত হয়ে চলেছে। সে দিন অরূপবীণার নৃত্যনাট্যটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপন করার প্রয়াস ছিল। মায়ের ভূমিকায় ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকীয় সঙ্গীত পরিবেশনা দর্শককে মুগ্ধ করে। তুলনায় চণ্ডালিকার সঙ্গীত উপস্থাপনা কিঞ্চিৎ নিষ্প্রভ। শেষের দিকে স্বরবিচ্যুতি ঘটেছে বারবার। ষাটের দশকে ইন্দুলেখা ঘোষের (শান্তিনিকেতনে ‘চণ্ডালিকা’ নাটিকা এবং নৃত্যনাট্যে অংশগ্রহণকারী) সঙ্গীত পরিচালনায় শান্তিনিকেতন আশ্রমিক সঙ্ঘের ‘চণ্ডালিকা’র মহড়ার সময়ে তাঁর সংলাপ ও সঙ্গীত শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। ষাটোর্ধ্ব শিল্পীর কাছে রবীন্দ্রনাথের থেকে শেখা সেই গানের উচ্চারণ শোনা ছিল এক বিরল অভিজ্ঞতা। পরবর্তী কালে অমন সঙ্গীত পরিবেশনা শুনেছি বলে মনে পড়ে না। আক্ষেপ হয়, কেন রেকর্ড করে রাখা গেল না সে সব গান! থাকলে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সে সব গায়কি অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindra Sadan Dance Program
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE