মহড়ার ফাঁকে ছবি: কৌশিক সরকার
‘‘তুমি আমায় সমুদ্রের ধারে বসে
কবিতা শোনাবে? —’’
‘‘সমুদ্রের আওয়াজে যে কবিতা
আছে তার চেয়ে ভাল প্রেমের কবিতা আর কিছু হয় না—’’
চিঠির মধ্যেই সর্বনাশের গন্ধ। ওলোট-পালোট হওয়ার নেশা। যত নষ্টের মূলেই ওই সব চিঠি। এক মহিলা আর পুরুষ খুলে ফেলেছেন তাদের মনের জানালা, চিঠির মোড়কে। দু’জনের দেশ আলাদা, দূরের ভাষা পৌঁছে যাচ্ছে স্তব্ধনৈকট্যে। চিঠি শুধুই আর চিঠি নয়। কখনও ট্র্যাভেলগ, কখনও এক মুঠো বসন্ত-প্রেম, কখনও বা বর্ষারাতের শেষ মিলন। হোয়াটসঅ্যাপ-এর যুগে মিষ্টি প্রেমের চিঠি। একটা-দুটো বছর নয়, ক্লাস ফাইভ থেকে প্রেমিকার মৃত্যু পর্যন্ত, প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে লেখা সেই প্রেমের আখর নিয়ে শ্রীজাত-র কলমে প্রেমের শ্রুতি ‘কী লিখি তোমায়’।
কলামন্দিরে ৯ এপ্রিল সন্ধে ছ’টায় এই শ্রুতির প্রথম অভিনয়। নাটক, সিনেমা, সঞ্চালনার বাইরে গিয়ে একটু অন্য ধারার কাজ করবেন দেবশঙ্কর হালদার। একই সঙ্গে এখন মঞ্চে পঁচিশটা নাটক চলছে তাঁর। সদ্যই তিনটে বাংলা ছবির কাজ করে নতুন নাটক ‘তোমার আমি’ নিয়ে খুব ব্যস্ত তিনি। বললেন, ‘‘আজকে আমরা কেবলই ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির কথা বলি। ‘কী লিখি তোমায়’ পড়তে গিয়ে মনে হল চিঠির চেয়ে বেশি ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির গল্প আর কোথায় পাওয়া যাবে? এই শ্রুতিতে খুব ইন্টারেস্টিং কতগুলো বাংলা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যা আজকের প্রজন্মকেও টানবে।’’
নাটক, সিনেমার জগৎ ছেড়ে হঠাৎ শ্রুতিতে আসছেন কেন তিনি? প্রশ্নটা করতেই বললেন, ‘‘রায়া ভট্টাচার্যের নির্দেশনা ও রূপায়ণে এই শ্রুতি থেকেও মঞ্চে অভিনয় করার অনেক রসদ আমি পাচ্ছি। সেই কারণেই চিঠির শ্রুতিতে অভিনয় করতে ভাল লাগছে।’’
প্রথম পার্থ-র পরে একই সঙ্গে দেবশঙ্কর হালদার, রায়া ভট্টাচার্য আবার মঞ্চে। ‘‘অনেক দিন ধরেই এ আর গুরনে ‘লভ লেটারস’ বইটা খুঁজছিলাম। পরিচালক সুমন ঘোষ আমাকে মায়ামি থেকে ওটা এনে দেন। বইটা পড়ার পর মনে হয়েছিল আজকের পটভূমিকায় বাংলায় কেউ যদি ওটা নিয়ে লিখতে পারেন, তা হলে সে শ্রীজাত-ই।’’ বললেন এই শ্রুতির অভিনেত্রী রায়া ভট্টাচার্য। তাঁরই পরিকল্পনায় কবির হাত ধরে চিঠির রোমাঞ্চ, নস্টালজিয়া এ বার মঞ্চে।
এই প্রথম কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় শ্রুতিনাটক উপস্থাপনার দায়িত্বে। নাট্য জগতের সঙ্গে অনেক কালের বিচ্ছেদের পর তিনি ফিরছেন মঞ্চে, চিঠির টানে— বললেন, ‘‘একটা ন্যাড়া মঞ্চে রায়াদির অনায়াস কণ্ঠ আর দেবশঙ্করের অভিনয় দর্শককে আকর্ষণ করার জন্যে যথেষ্ট ছিল। আমি এখানে পরিবেশটা তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে দর্শকের ভাবনা আর লেখক-অভিনেতার ভাবনা কোথাও গিয়ে মিলে যায়। আমার কাজ এখন ছবির মেক-আপ আর্টিস্টের মতো’’- হেসে বললেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। চিঠির প্রেম বিনিময়ে বিকেলবেলার কনে দেখা আলো, বৃষ্টিঝরা মেঘের রং এঁকে তুলবেন তিনি মঞ্চে।
মধ্যরাতে আহির ভৈরব শুনলে যেমন ভোর আসে, শ্রীজাতর শব্দে তেমনই দুই মানুষের শেষ বেলায় প্রথম বেলার সুর। ‘‘শ্রুতিতে যে ইমোশনাল লিঙ্কগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলোই আমি সুরে বলতে বলতে গেছি। এই অডিও ড্রামায় ছোটবেলার সাউন্ডস্কেপে যেমন বাজবে গিটার, হারমোনিকা, তেমনই আবার শেষ বেলার বিরহে থাকবে সরোদের ঝংকার’’ – বললেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। চিঠির সুর তৈরি করেছেন তিনি।
ক্যুরিয়ার নেই, মেল নেই, আছে কেবল একরাশ মনকাড়া চিঠি। সেই চিঠির কথা বলতে গিয়ে বললেন শ্রীজাত, ‘‘তুমহারি অমৃতার মতো একটা বহু প্রচলিত টেক্সটকে বাংলায় আলাদা করে লেখা খুব কঠিন একটা বিষয় ছিল। দুটো মানুষের প্রায় পুরো জীবনটাই শুধুমাত্র চিঠির সংলাপের মধ্যে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’’
চিঠি আসার অপেক্ষা, চিঠি না পাওয়ার রাগ, চিঠির সঙ্গে একলা হওয়া, চিঠির কাছে প্রেম চাওয়ার এই শব্দখেলা সেজে উঠবে সৌমিক-পিয়ালীর মঞ্চসজ্জায়।
শ্রুতিতে প্রযুক্তি আর চিঠি কখনও মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। চিঠির এমনই ক্ষমতা। দুই প্রিয় মানুষের চেহারা বেরিয়ে আসছে চিঠির সংলাপে।
‘তুমহারি অমৃতা’ বা ‘প্রিয় বন্ধু’-র সংলাপ বিনিময়ের ধরন থাকলেও ‘কী লিখি তোমায়’ তার ফর্মে, বিষয় ভাবনায় অনেকটাই সরে এসেছে। তা যেন অনেক বেশি ব্যক্তিগত। শব্দের মধ্যে ধরা থাকছে আজকের সম্পর্কের রোমাঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy