Advertisement
E-Paper

মনোমুগ্ধকর নৃত্যোৎসব

ওড়িশি নৃত্যশৈলীতে নিবদ্ধ ‘কৃষ্ণায়া তুভ্যমনমহঃ’ ছিল ওই সন্ধ্যার দ্বিতীয় নিবেদন।

বিপাশা মাইতি

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১০:১৫
Share
Save

গত ১৮ এবং ১৯ জানুয়ারি আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে ওড়িশি নৃত্যশিল্পী অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘দর্পণী’ আয়োজন করে ‘মর্দালা মঞ্জিরা’ নৃত্যোৎসব।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল যথাক্রমে মণিপুরি, ওড়িশি এবং ভরতনাট্যম নৃত্যধারা দিয়ে। প্রথম শিল্পী মণিপুরি নৃত্যগুরু সঞ্জীব ভট্টাচার্য। মণিপুরি নৃত্যে প্রচলিত রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলাকে সঞ্জীব যে ভাবে মণিপুরের তাণ্ডব ও লাস্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। তাঁর দ্বিতীয় নিবেদনে ছয়টি অঙ্গ যথাক্রমে পদ, পাট, স্বর, তেরকা, বিরুদা এবং তাল-এর যথাযথ সদ্ব্যবহার করেছেন। শেষের নিবেদন ছিল দশকোষ তাল ও সাত মাত্রায় নিবদ্ধ পুং বাদন।

ওড়িশি নৃত্যশৈলীতে নিবদ্ধ ‘কৃষ্ণায়া তুভ্যমনমহঃ’ ছিল ওই সন্ধ্যার দ্বিতীয় নিবেদন। এই নৃত্যাংশে বিষ্ণুর দশ অবতারের রূপকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এবং ‘দর্পণী’র ছাত্রছাত্রীগণ। কৃষ্ণরূপী অর্ণবের নৃত্যভঙ্গিমা সুন্দর। এই নৃত্যাংশের সঙ্গীত রচয়িতা হিমাংশু সোয়েন। রাগমালিকা এবং মালিকা তালে নিবদ্ধ নৃত্যালেখ্যটির কোরিয়োগ্রাফিতে ছিলেন অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওই সন্ধ্যার শেষ নিবেদন পি. নবীন কুমারের ভরতনাট্যম। তাঁর প্রথম নিবেদন ‘সখা’। সেখানে অর্জুন এবং শ্রীকৃষ্ণের সখ্যের ছবি এঁকেছেন শিল্পী, তাঁর নৃত্যের মাধ্যমে। এই নৃত্যাংশে গাণ্ডীবধন্যা অর্জুনের ধনুকের ছিলায় টান দেওয়া কিংবা বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতে সর্বাঙ্গ ভিজে যাওয়ার দৃশ্যে প্রবীণ কুমারের অভিনয় মনে দাগ কাটে। দ্বিতীয় নিবেদন জাভেরী এবং সর্বশেষ নিবেদন ‘সুমনিসরজনী’ রাগে নিবদ্ধ তিলানা। ভরতনাট্যম তিলানা নৃত্যভিত্তিক এবং শিল্পী তার যথাযথ সদ্ব্যবহার করেছেন।

১৯জানুয়ারি ‘মর্দালা মঞ্জিরা’ নৃত্যোৎসবের দ্বিতীয় দিনের প্রথম নিবেদন শিল্পী আকাশ মল্লিকের ‘মার্গনাট্য’। প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের থিয়েটারে ব্যবহৃত নৃত্য, গীত এবং অভিনয়— যা নাট্যশাস্ত্রে লেখা আছে, মূলত সেই ভিত্তিতেই মার্গনাট্যের সৃষ্টি। হারিয়ে যাওয়া ভারতবর্ষের এই প্রাচীন শিল্পকে নবরূপ দিয়ে, গুরু কলামণ্ডলম পিয়াল ভট্টাচার্য তৈরি করেন মার্গনাট্যের শিল্পী আকাশ মল্লিককে। আকাশের প্রথম নিবেদন ‘সরিতা বর্ধমান বিধি’। একই রকম টানা সুরে গীত ‘সরিতা’ আসলে শিবের স্তুতি, যা বিবিধ মহাজাগতিক এবং দার্শনিক সত্যের উপলব্ধির সঙ্গে জড়িত এবং প্রকাশিত। ‘বর্ধমান’ যেখানে ‘সরিতা’ গান গাওয়া হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট তালে এবং ওই তালের উপরে ভিত্তি করেই নৃত্যশিল্পী নৃত্য পরিবেশন করছেন। লয়ান্তরের সময়ে এই তাল দ্রুত হয়ে যায়, আবার ‘জ্যেষ্ঠ সরিতা’র সময়ে একটানা তালে চলতে থাকে। আকাশের দ্বিতীয় নিবেদন ‘পশুপতি পনিকা বিধি’। চারটি অধ্যায়ে এটি বিভক্ত—মুখ, প্রতিমুখ, শরীর, সংহারণ। এই নৃত্যটি ‘চক্ষসানভগ্রাম’ রাগে নিবদ্ধ, যেখানে আরোহণের সময়ে শুদ্ধ নিষাদ এবং অবরোহণের সময়ে কোমল নিষাদ ব্যবহৃত হয়েছে। শিল্পীর তৃতীয় নিবেদন ‘সদাজি কপলা গীতি’। এই গীতিতে বলা হয়েছে, একবার শিবের জটা থেকে সোমরস নির্গত হয়ে তাঁর গলার মুণ্ডমালার উপরে পড়ে। ফলস্বরূপ সাতটি মুণ্ডে প্রাণ ফিরে আসে এবং তাঁরা শিবকে সাতটি সুর প্রদান করেন, যার নাম ‘কপলা গীত’। মার্গনাট্য অভিনব একটি নৃত্যধারা এবং আকাশ মল্লিক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা পরিবেশন করেন। তাঁর ভাব এবং নৃত্য যথেষ্ট দৃপ্ত। সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার যথাযথ।

পরবর্তী নিবেদন গুরু প্রীতি পটেল এবং সম্প্রদায় পরিবেশিত মণিপুরি নৃত্য। এই অংশে পুং বাদকের পুং সহকারে প্রচলিত মণিপুরি নৃত্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ওই সন্ধ্যার তৃতীয় নিবেদন অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘দর্পণী’র ওড়িশি নৃত্য। মালকোষ রাগ ও ত্রিপদা তালে নিবদ্ধ ‘মাণিক্য বীণা’, মঙ্গলাচরণ, হংসধ্বনি রাগ ও চতুরাশ্র একতালে নিবদ্ধ পল্লবী; এবং ভাতিয়ার রাগ ও খেমটা তালে নিবদ্ধ ‘শিবতাণ্ডব’...এই ছিল ‘দর্পণী’র নিবেদন। যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গেই যে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী তালিম নিয়েছেন তাঁদের গুরু অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে, তা বোঝা গিয়েছে তাঁদের একসঙ্গে একই রকম মুদ্রা ব্যবহার করা এবং সুন্দর অভিনয়ের মাধ্যমে সমবেত নৃত্য প্রদর্শনে। নৃত্যোৎসবের শেষ নিবেদন গুরু শর্মিলা বিশ্বাসের একক ওড়িশি নৃত্য। তাঁর নিবেদনে ছিল অষ্টপদী ‘সখা হে’, যেখানে রাধাকে প্রেম নিবেদন করছেন কৃষ্ণ। মঞ্চে বসে কথা বলে, মুদ্রার সাহায্যে এবং অভিনয়ের মাধ্যমে এই ভাবকে শিল্পী ব্যক্ত করেন। পরে সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য প্রদর্শন করে সুন্দর একটি চিত্র তিনি ফুটিয়ে তোলেন। শৃঙ্গার রসে শিল্পীর অভিনয় এবং সুন্দর নৃত্যভঙ্গিমা দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল। ‘দর্পণী’ আয়োজিত ‘মর্দালা মঞ্জিরা’ নৃত্যোৎসব একটি সফল অনুষ্ঠান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ICCR Odishi Dance

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}