Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মানুষ যখন অসহায়

চুপকথা-র নাটকটি দেখে লিখছেন পিয়ালী দাসদামিনী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। বয়স সত্তর, স্বাবলম্বী। নিজস্ব মূল্যবোধে, আত্মবিশ্বাসে অবিচল থাকেন। বাড়িতে একা থাকেন। সঙ্গী বলতে কাজের মেয়ে মাধবী, ড্রাইভার লালু। সম্প্রতি চুপকথার নিবেদনে ‘আত্মীয় স্বজন’ নাটকটি মঞ্চস্থ হল অ্যাকাডেমিতে। অ্যালফ্রেড উড়ির ‘ড্রাইভিং মিস ডেইসি নাটক থেকে নেওয়া গল্পটি। রূপান্তর করেছেন সৌম্য সেনগুপ্ত। তবে মূল নাটকে বর্ণবিদ্বেষ উঠে এলেও এই নাটকে অসম বন্ধুত্বের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। নির্দেশনায় ডলি বসু।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

দামিনী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। বয়স সত্তর, স্বাবলম্বী। নিজস্ব মূল্যবোধে, আত্মবিশ্বাসে অবিচল থাকেন। বাড়িতে একা থাকেন। সঙ্গী বলতে কাজের মেয়ে মাধবী, ড্রাইভার লালু। সম্প্রতি চুপকথার নিবেদনে ‘আত্মীয় স্বজন’ নাটকটি মঞ্চস্থ হল অ্যাকাডেমিতে। অ্যালফ্রেড উড়ির ‘ড্রাইভিং মিস ডেইসি নাটক থেকে নেওয়া গল্পটি। রূপান্তর করেছেন সৌম্য সেনগুপ্ত। তবে মূল নাটকে বর্ণবিদ্বেষ উঠে এলেও এই নাটকে অসম বন্ধুত্বের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। নির্দেশনায় ডলি বসু। তিনিই এই নাটকের মুখ্য ভূমিকায়। দামিনী চরিত্রটির মেজাজ এবং দৃঢ়তার আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকা এক সৎ এবং হৃদয়বান মানুষকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ডলি বসু। নাটকের প্রাণটিকে ধরে রাখে তাঁর সাবলীল অভিনয়। দামিনীর কথায় ‘পৃথিবীর সম্পদ প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট। লোভের জন্য নয়।’
তাঁর চরিত্রটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ড্রাইভার লালুকে কেন্দ্র করে। গাড়ি চালানো নিয়ে লালুর সঙ্গে খিটিমিটি লেগেই থাকে দামিনীর। পরে অবশ্য এই লালুই তাঁর একাকীত্বের বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে ওঠে। লালুকে সে হাতে ধরে পড়াশোনা শেখায়।
এক সময় দামিনীর বয়স বাড়ায় মেজাজও হারিয়ে যায়, স্মৃতিশক্তিও লোপ পায়। তাঁর সংলাপে করুণ আর্তনাদ ফুটে ওঠে, ‘আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। আমার কী হবে। লালু, তুই আমার বন্ধু’। এই অনুধাবনের দৃশ্য চোখে জল এনে দেয় দর্শকদেরও।
নাটকে ছেলে বাদলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। কিছু দৃশ্যে তাঁর অভিনয় নজর কাড়ে। ড্রাইভারের চরিত্রে সৌম্য সেনগুপ্তের অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়। নাটকে আবহ সঙ্গীতের ব্যবহারও যথাযথ।

প্রতীক্ষার নতুন জগৎ

নীলিমা চক্রবর্তীর নাটকে লিখছেন শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল ‘বরানগর স্ববাক’ প্রযোজিত ও মৈনাক সেনগুপ্তের রচনা ‘আজ সেই দিন’। নির্দেশনায় নীলিমা চক্রবর্তী। শুরু থেকেই নাটকের গতি ও কৌতূহল বাড়তে থাকে, প্রায় শেষ দৃশ্য অবধি। নারীর সম্মান বাঁচাতে গিয়ে আততায়ীদের হাতে প্রাণ দেয় অংশু। সেই দুঃখ নিয়ে বেঁচে থাকে বন্ধু ব্রতীন ও প্রেমিকা বিপাশা। এক সময়ে সমাজবদলের স্বপ্ন দেখা বিপ্লবী বাবা মিহির এই অমোঘ সত্য জানার পরও বুকে পাথর চাপিয়ে সব গোপন রাখতে বাধ্য হয় ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী ঝর্নার কাছে। বুক-ভরা আশা নিয়ে অংশুর জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকে সবাই। পুত্রের মৃত্যু সংবাদ গোপন রাখার তাগিদে মিহির বাধ্য হয় টাকা দিয়ে পাড়ার দাদা প্রণবের মুখ বন্ধ রাখতে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মধ্যে আরও অনেক অংশু তৈরি করতে স্কুল চালাবার জন্য বিপাশাকে গোপনে প্রেরণা দিলেন। মিহিরের ভাষায় শিরদাঁড়া তৈরির কারখানা। এ যেন অনেক সন্তানকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকার চেষ্টা, ভালবাসা, প্রতিবাদের লড়াই।

অত্যন্ত সময়োপযোগী এই নাটককে নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন মৈনাক সেনগুপ্ত ও নীলিমা চক্রবর্তী। মিহিরের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন মুরারী মুখোপাধ্যায়, মায়ের আকুতিতে নীলিমা চক্রবর্তী দর্শকদের মন ছুঁয়ে যান।

বিপাশার চরিত্রে সোমা দত্ত বেশ ভাল। জয়দীপ ঠাকুর (ব্রতীন) ও সুবীর গোস্বামী (প্রণব) –র আরও ভাল করার সুযোগ রয়েছে। শঙ্কর মাজি-র আলোক ভাবনায় অবশ্যই উন্নতির অবকাশ আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE