দমদম প্রত্যয় ওয়েলফেয়ার সোসাইটি আয়োজিত দমদম মার্গসঙ্গীত উৎসব এ বার পঞ্চম বছরে পড়ল। দমদম রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের প্রথম ভাগে বৃন্দ তবলা বাদনে শ্রদ্ধা জানানো হল প্রয়াত শিল্পী জ়াকির হুসেনকে। সমবেত সুন্দর উপস্থাপনা। নানা বয়সের শিল্পীরা আয়োজনের সুর বেঁধে দিলেন শুরুতেই। দ্বিতীয় পর্বে মঞ্চে এলেন উল্লাস কশলকর। প্রবীণ কণ্ঠশিল্পী মুহূর্তে শ্রোতা-ঠাসা প্রেক্ষাগৃহের দখল নিলেন, আবিষ্ট করলেন সবাইকে।
সান্ধ্য আয়োজন। ভারতীয় মার্গগানের সময়-সূত্র ধরেই শিল্পী ধরলেন পূর্বী ঠাটের পুরিয়া ধানেশ্রী। বিলম্বিত একতাল এবং তিনতালের মধ্য লয়ে। শান্ত-ধীর মেজাজে অনুষ্ঠান শুরু করলেন শিল্পী। বেশ খানিকক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখলেন রাগরূপ প্রতিষ্ঠার স্বর-সম্পাদনার আবেশে। তার পরে দীর্ঘ বিস্তারে অনবদ্য এই রাগ ধীরে ধীরে ডালপালা মেলে মাধুর্যে ছড়িয়ে পড়ল। বৈয়াকরণের পাণ্ডিত্যের পাশাপাশি মধুর কণ্ঠের জন্য বিখ্যাত গ্বালিয়র-আগরা-জয়পুর ঘরানার ত্রিবেণীসঙ্গম-স্নাতক উল্লাস কশলকর। তারই তুমুল প্রকাশ ঘটল এ সন্ধ্যার পরিবেশনায়। সন্ধি-সময়ের স্নিগ্ধতা নিপুণ ভাবে আহরণ করলেন শিল্পী। তাঁর পরের পরিবেশনা কল্যাণ ঠাটের কেদারেও একই মাপের প্রাপ্তি। রাতের প্রথম পর্বের আপাত-চঞ্চল অথচ শান্তিময় এই রাগ তার গতিপ্রকৃতির জন্য বিশেষ সমীহ আদায় করে। উল্লাস কশলকর মাত করলেন সেই সব বৈশিষ্ট্যকে অনায়াস মূর্ত করে তুলে। আড়াই মিনিট রাগরূপ বিস্তারের পরে ‘সুঘর চতুর বালমা’ বন্দিশের মধ্য ও দ্রুত গতির তুলনাহীন পরিবেশনা। অতুলনীয় কেদার-নিবদ্ধ তারানাটিও। শিল্পীর শেষ পরিবেশনা সোহিনী। মারোয়া ঠাটের এই স্বল্প পরিসরের রাগে যে জাদুতে অনির্দেশ্য ঋতুমায়া আর কোমল ভাবের প্রকাশ, তা পূর্ণ প্রস্ফুটিত হয়ে উঠল শিল্পীর পরিবেশনায়। তাঁর সতীর্থ হিসাবে এ দিন তবলায় ছিলেন অজিঙ্ক জোশী, হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায় এবং সারেঙ্গিতে সরওয়ার হুসেন। তিন জনই মাপা সঙ্গতে মাতিয়ে রাখলেন।
পরবর্তী উপস্থাপনা যুগ্ম বাদনের। সেতারে পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায় এবং বাঁশিতে রাকেশ চৌরাসিয়া। তাঁরা শুরু করলেন ভূপালি দিয়ে। ন’মাত্রার চলন। নিটোল আলাপ-জোড়। পরিচ্ছন্ন বাদন তো বটেই, সঙ্গে কিছুটা সাহসী উপস্থাপনাও। এই সন্ধ্যায় দুই শিল্পী প্রথম থেকেই কিছুটা যেন সওয়াল-জবাবের মেজাজে ছিলেন। তাঁদের সেই ভাবনা পূর্ণ মাত্রায় উপভোগ করেছেন শ্রোতারা। কল্যাণ ঠাটের ভূপালির পরে শিল্পীরা এলেন কর্নাটকী আঙ্গিক থেকে জন্ম নেওয়া কিরওয়ানিতে। তিন তালে সুন্দর উপস্থাপনা এবং সওয়াল-জবাবের বড় মাপের পরিসর নির্বাচনের সূত্রে আক্ষরিক অর্থেই জমে যাওয়া পরিবেশনা। তবলায় দাপুটে সঙ্গতে মুগ্ধ করলেন নবীনশিল্পী আর্চিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথম দিনের আয়োজনের শেষ পর্বে ছিলেন কণ্ঠশিল্পী রূপকুমার রাঠৌড় আর সোনালি রাঠৌড়। সতীর্থদের নিয়ে তাঁরা রাগভিত্তিক কিছু গানের পাশাপাশি পরিবেশন করলেন হিন্দি ছায়াছবির বেশ কিছু জনপ্রিয় গান।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)