বাড়ির সুন্দর ইন্টিরিয়ারের জন্য স্পেস যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্ব রাখে আপনার টেস্ট। এ বার আমরা যাঁর আবাসের ইন্টিরিয়ার তুলে ধরছি, তাঁর রুচি এবং ফ্ল্যাটের পরিসর দুটোই লা-জবাব। অয়ন ঘোষ পেশায় ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট হলেও সাহিত্যানুরাগী, বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের । দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্তান রোডে ২৫০০ স্কোয়্যার ফুটের ডুপ্লে ফ্ল্যাটে স্ত্রী প্রিয়ব্রতা, ছেলে শুভ এবং মা-বাবাকে নিয়ে সাজানো সংসার। অবশ্য ‘ডুপ্লে’ কথাটায় অয়নের আপত্তি আছে। কারণ, তাঁরা ‘ফ্যান্সি’ নন। তবে শব্দে কী এসে যায়, মেজাজটাই তো আসল রাজা। এ ক্ষেত্রে সেটি হল শৌখিনতায় জারিত রুচিবোধ।
এই ফ্ল্যাটের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো হল অয়নের কালেকশন! এ প্রসঙ্গে রসিকতা করে বললেন, ‘‘আমার বয়স এবং পৃথিবীর যত দেশে বেড়িয়েছি, তার সংখ্যাটাও এক।’’ সে সংখ্যাটা হল ৪৩! ভুবন ভ্রমিয়া তিনি সংগ্রহ করে এনেছেন সব অরূপ রতন! এ বাড়ির একতলায় ডাইনিং কাম ড্রয়িংরুমে যে কাঠের ডাইনিং টেব্লটি রয়েছে তা কিনেছিলেন ভিয়েতনামের সাইরন থেকে। সেখানকার এক ওয়্যারহাউসে পড়ে থাকা জঞ্জালের মধ্য থেকেই জহুরির চোখ ঠিক জিনিসটা চিনে নিয়েছিল।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে শুধু টেবলটুকুই নয়, কর্মসূত্রে কয়েক বছর থাকার সুবাদে নিয়ে এসেছেন আরও কয়েকটি ইউনিক জিনিস। সাদা চোখে যার বিশিষ্টতা ধরা সহজ নয়। একতলার ড্রয়িংরুমের দেওয়ালে টাঙানো সিনারিটি দেখিয়ে প্রিয়ব্রতা জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘বলুন তো ছবিটি কী ভাবে তৈরি?’’ নিজের অপারগতা জানাতে উনি বললেন, ভিয়েতনাম থেকে কেনা এই ছবিটি আসলে সুতো দিয়ে তৈরি। কিন্তু এত সূক্ষ্ম তার বুনন, শিল্পী ব্যতীত রং-তুলির সঙ্গে তফাত করে কার সাধ্য! চোখ টানল দেওয়ালের অন্য আর একটি ছবিও। সেও বিদেশ থেকে এসে এ বাড়ির বাসিন্দা হয়েছে। প্রজাপতির পাখা দিয়ে ‘আঁকা’ হয়েছে ছবিটি। কী অপূর্ব তাতে রঙের খেলা! সত্যি, পৃথিবীর নানা দেশে কত যে শিল্পের আকর ছড়িয়ে আছে!
একতলার ড্রয়িংরুমের যে দিকে তাকাই, সেখানেই চোখ যেন দু’ দণ্ড শান্তি পেতে চায়। তুরস্ক থেকে আনা কার্পেট বা তুর্কমেনিস্তান থেকে রাগ-এর জমকালো শোভা ব্যালান্সড হয়েছে হালকা ঘিয়ে রঙা দেওয়ালে ও সোফার কভারের রঙে। সোফার পাশে রাখা ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা মেটালের গরুর মূর্তি, কম্বোডিয়ার হর-পার্বতীর শিল্পসুষমা পূর্ণাঙ্গ। এ বাড়িতে রাখা বিভিন্ন চেয়ার, ক্যাবিনেট, কাঠের পার্টিশনও এসেছে আকাশপথে পাড়ি দিয়ে।
তবে বাড়ি জুড়ে শুধু যে বিদেশি জিনিসের সমাহার, তা ভাববেন না। দক্ষিণ ভারতের নানা জায়গা থেকে কেনা প্রদীপগুলো যে ভাবে ল্যাম্পশেডে পরিবর্তিত, তা কী সহজ সৃজনশীলতার উদাহরণ! এবং এর পুরো কৃতিত্ব অয়নবাবুর মা আগমনীদেবীর।
বিরাট এই ফ্ল্যাটের শোভা আরও বাড়িয়েছে নিঃসন্দেহে তার পরিচ্ছন্নতা। এই দায়িত্বটা অবশ্য বিশেষ ভাবে বর্তেছে বাড়ির দুই কর্ত্রী প্রিয়ব্রতা ও আগমনীদেবীর উপর। অয়নের কথায়, এ বাড়ির সকল সদস্যই যে যথেষ্ট গোছানো তা নয় এবং তিনিও এই গুণ আয়ত্ত করেছেন পরিণত বয়সে এসে। অবশ্য সেটা পারিপাট্য দেখে বোঝার উপায় মোটেই নেই।
রুচি, পরিসর, পরিচ্ছন্নতা ও বিশিষ্টতা... চার গুণের সমাহারে ঘোষ পরিবারের আবাস অনন্য।
ছবি: আশিস সাহা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy