হাসিখুশি দময়ন্তী সে দিন অফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত ছিলেন। কথাও কম বলছিলেন। আচমকা কাজের ফাঁকেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন সকলের সামনে। কী হল তাঁর? ডাক্তারবাবু এসেই জানিয়ে দিলেন, হাইপার টেনশন।
হাইপার টেনশন কী?
রক্তচাপ বেড়ে গেলেই হাইপার টেনশনের কবলে পড়তে হয়। এটা অনেক সময় বুঝতে পারা যায় না। কুড়ি থেকে চল্লিশ— যে কোনও বয়সেই এর কবলে পড়ার ভয় খুব বেশি। রক্তচাপ ১৪০/৯০ ছাড়ালেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বলা যায়। তবে এরও ভাগ আছে। অল্প, মাঝারি এবং মারাত্মক। যেমন ১৪০/৯০ থেকে ১৫৯/১০৪-এর মধ্যে হলে বুঝতে হবে, অল্প মাত্রায় আছে। ১৬০/১০৫ থেকে ১৯৯/১১৪ হলে তা মাঝারি। আর ২০০/১১৫ হলে সেটা মারাত্মক পর্যায়ে বলা যায়। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা না হলে মৃত্যুও হতে পারে। সাধারণত বয়স ৩৫ পেরোলেই সাবধানে থাকা উচিত।
উপসর্গ
খেয়াল রাখতে হবে, মাঝেমধ্যেই মাথা ঘোরে কি না বা বুক ধড়ফড় করছে কি না। অনেকের আবার মাথাব্যথা হয় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর। এবং তা ঘণ্টা দুয়েক থাকে। কারও আবার অল্পতেই ক্লান্তি আসে। কখনও মনঃসংযোগের অভাব ঘটে। কোনও কাজ ভাল লাগে না। যেন খিটখিটে মেজাজ। কোনও কাজ করতে গেলেই হাঁফ ধরে যায়। অনেকের আবার হঠাৎ পা ফোলে।
অন্য কারণও আছে
কিডনি বা এন্ডোক্রিন গ্ল্যান্ডের সমস্যা থাকলেও রক্তচাপ বেড়ে যায়। সঠিক চিকিৎসায় তা ধরাও পড়ে যায়। এমনও দেখা যায় ‘কোয়ার্কটেশন অফ এওরেটা’, ‘পরফাইরিয়া’, ‘হাইপার ক্যালসিমিয়া’-র মতো অসুখেও রক্তচাপ বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনও কারণ ছাড়াও কেউ কেউ হাইপার টেনশনে আক্রান্ত হয়েছেন। তখন ধরে নেওয়া যায়, এটি বংশানুক্রমে চলে আসছে। হাইপার টেনশন বংশের কারও থাকলে, পরবর্তী প্রজন্মেও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা মিটে গেলেও ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ এই সমস্যা পুরোপুরি কাটে না। ওষুধেই নিয়ন্ত্রিত থাকে। অনেকে ভুল করেন, সমস্যা মিটে গিয়েছে ভেবে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। তখন যে কোনও সময়ে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। এই ভুল অনেকেই করে থাকেন।
নিয়ন্ত্রণে রাখতে
লাইফ স্টাইল বদলাতে হবে। বয়স ৩৫ পেরোলেই দেখতে হবে ওজন যাতে বেড়ে না যায়। বাইরের খাবার যত কম খাওয়া যায়, তত ভাল। যতটুকু পেটে ধরে ততটুকুই খাওয়া ভাল, তার বেশি নয়। কোলেস্টেরল বাড়ে এমন সব খাবার না খাওয়াই ভাল। চাকরি যা-ই করুন না কেন, মানসিক চাপ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তবুও যদি মনে হয় মানসিক চাপ আপনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না, তবে অবশ্যই একবার সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিন। সকাল হোক বা সন্ধে, দিনে অন্তত ২ কিলোমিটার হাঁটুন। তেল জাতীয় খাবার কম খান।
গর্ভাবস্থায় সাবধান
এই অবস্থায় রক্তচাপ বাড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, গর্ভাবস্থায় কেউ কেউ নানা টেনশনে ভোগেন। সন্তান না জন্মানো অবধি নানা চিন্তাভাবনা সূক্ষ্ম ভাবে মনে দাগ কাটে। তবে সন্তান জন্মানোর পরে রক্তচাপ আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। আবার ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলেও রক্তচাপ বাড়ে। স্টেরয়েড, অ্যাড্রিনালিন, জন্মনিরোধক ট্যাবলেট খেলেও রক্তচাপ বাড়তে পারে। তবে ওষুধ বন্ধ হলেই রক্তচাপ ফের স্বাভাবিক হয়ে যায়।
বিড়ম্বনা এড়াতে
• কোলেস্টেরল বাড়ে এমন খাবার না খাওয়াই ভাল
• দিনের যে কোনও সময় আধঘণ্টা হাঁটুন
• তামাক জাতীয় জিনিস ছাড়তে হবে
• যতই ব্যস্ত থাকুন, মানসিক চাপ এড়াতে চেষ্টা করুন
• অল্পতেই ক্লান্তি, হঠাৎ বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘুরে যাওয়া — এই তিন লক্ষণ হল অসুখের উপসর্গ। শুরুতেই গাফিলতি করবেন না।
• নাক দিয়ে রক্ত পড়া অনেক সময় হাইপার টেনশনের কারণে হয়। খেয়াল রাখুন।
অনুলিখন: বিপ্লবকুমার ঘোষ
তথ্য: ডা. পুষ্পিতা মণ্ডল
মডেল: তৃণা
মেকআপ: জিতেন্দ্র মাহাতো
ছবি: দেবর্ষি সরকার, লোকেশন: কর্মা কেটল, সুইনহো স্ট্রিট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy