Advertisement
০২ মে ২০২৪

অপারেশনের দাগ মিলিয়ে যাওয়া সম্ভব, জেনে নিন কী ভাবে

অপারেশনের পরেও। কিন্তু কী ভাবে? জানাচ্ছেন ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়অপারেশনের পরেও। কিন্তু কী ভাবে?

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

প্র: অপারেশন হল অথচ দাগ থাকবে না, এমনটা নাকি আজকাল হচ্ছে?

উ: বেশির ভাগ অপারেশনই এখন ল্যাপারোস্কোপিক। তাতে মাত্র কয়েকটা ছিদ্র করা হয়। সুতরাং দাগও তেমন বোঝা যায় না।

প্র: মেদহীন সুন্দর পেটে ছিদ্র। কী বিশ্রী লাগবে বলুন তো? শর্ট লেন্থ ব্লাউজ বা নাভির নীচে শাড়ি পরাই তো মুশকিল হবে...।

উ: ছিদ্রর দাগ থাকবে না। একেবারেই মিলিয়ে যাবে বলতে পারেন। এক রকমের আঠা লাগিয়ে ফুটো বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুতরাং মনমতো পোশাক তো পরতেই পারেন। ছিদ্র করতে না চাইলে সেই ব্যবস্থাও আছে। সেক্ষেত্রে নাভি উল্টে তার মধ্য দিয়ে অপারেশন করা হয়। এতে কোনও দাগের বালাই থাকে না।

প্র: বিয়ের আগে কারও অপারেশন হলে কী ধরনের মানসিক সমস্যায় পড়তে হয় বুঝতে পারছেন তো?

উ: সে তো বটেই। বিয়ের আগে পেটে অপারেশন হয়েছে শুনলে অনেকেই নানা রকম সন্দেহ করে বসেন। ব্যাপারটা সহজ ভাবে নিতে পারেন না। এখনও ধারণা, পেটে অপারেশন মানে সেই মেয়ে আর মা হতে পারবে না। গায়নোকলজিকাল অপারেশন হলে তো কথাই নেই। ল্যাপারোস্কোপি করলে কিন্তু সমস্যা প্রায় হয় না।

প্র: আঠা দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করা হয় বলছেন, তাতে কোনও ক্ষতি হয় না?

উ: একেবারেই নয়।

প্র: কিন্তু ছিদ্র তো সেলাই করা হয় শুনেছি?

উ: সেলাই করলেও দাগ মেলানোর জন্য ভাল ওষুধ আছে। মাস দুয়েকের মধ্যে দাগ এক্বেবারে মিলিয়ে যাবে।

প্র: কমবয়সি মেয়েদের ইউটেরাসে টিউমার বা ফাইব্রয়েড হয়েছে এমনটা খুব শোনা যায়। বড় টিউমার কি ছোট ছিদ্র দিয়ে বেরোবে?

উ: হ্যাঁ। টিউমার ইউটেরাসের বাইরে হলে ল্যাপারোস্কোপি করে বের করে দেওয়া যায়। ইউটেরাসের ভেতরে টিউমার হলে এক রকমের যন্ত্র দিয়ে প্রসবের রাস্তা দিয়ে টিউমারকে ছোট ছোট করে কেটে বের করে আনা হয়। দাগের কোনও ঝামেলা নেই। বোঝাই যাবে না এত বড় টিউমার অপারেশন হয়েছে। পেট কাটার দরকার পড়ে না।

প্র: এই ধরনের অপারেশনে কোনও সমস্যা হয় না?

উ: বরং সুবিধে হয়। আগে এরকম বড় টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে প্রচুর ব্লিডিং‌ হত।

আর ব্লিডিং থেকেই তো যত্ত ঝামেলা হত।

প্র: ল্যাপারোস্কোপিতে ব্লিডিং হয় না?

উ: না। এতে ছোট ছোট যে সব শিরা থেকে ব্লিডিং হওয়ার সম্ভাবনা সেগুলোকে ক্লিপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় সাময়িক ভাবে। তাই ব্লিডিং একেবারেই হয় না। তার ফলে অপারেশনের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়।

প্র: কিন্তু একে ছোট ফুটো, তার ওপর আবার ক্লিপ দিয়ে শিরা আটকে দিচ্ছেন, অসুবিধে হবে না?

উ: ল্যাপারোস্কোপির সময় পেটের ভেতর ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাতে পেটের ভেতরকার জিনিস পাঁচগুণ বড় দেখায়। তাই কোনও সমস্যা হয় না। আর ব্লিডিং কম হওয়ায় ইনফেকশনের সম্ভাবনাও কম। এই ভাবে অপারেশন করার জন্য একেবারেই ব্যথা হয় না। রোগীও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান।

প্র: শুনেছি মোটা মেয়েদের ল্যাপারোস্কোপিতে সমস্যা হয়?

উ: একেবারেই নয়। বরং চেহারা ভারী হলে ল্যাপারোস্কোপিতেই সুবিধে। পেট কেটে অপারেশন করতে গেলে চর্বির স্তরের জন্য অপারেশন করতে অসুবিধে হয়। জড়িয়ে যায়। ল্যাপারোস্কোপিতে সে সমস্যা নেই।

প্র: আর স্ট্রেচ মার্ক? প্রেগন্যান্সির সময় বুক, পেট বা কোমরের গোলাপি এই দাগ খুব বিশ্রী দেখায়। কোনও উপায় আছে রেহাই পাওয়ার?

উ: স্ট্রেচ মার্ক হওয়ার পর পরই পুরোপুরি সারে না। ডেলিভারির পর স্ট্রেচ মার্ক কমে হালকা হয়ে আসে।

প্র: স্ট্রেচ মার্ক যাতে না হয়, তার জন্য কি কিছু করা যায়?

উ: না। স্ট্রেচমার্ক বংশগত সমস্যা। পরিবারে মা-দিদিমার হয়ে থাকলে হতেই পারে। তবে সমস্যা কমাতে হলে প্রেগন্যান্সিতে ওজন বাড়াতে হবে।

প্র: ওরে বাবা! একেই বেবি বাম্প, তার ওপর ওজন বাড়ালে তো আরও বিশ্রী লাগবে...

উ: প্রেগন্যান্সিতে ত্বক প্রসারিত হয়ে স্ট্রেচ মার্ক হয়। ত্বক ফেটে গেলে যেমন দেখতে হয়, এটাও সে রকম। ত্বক ফেটে ফেটে যায়। তাই স্ট্রেচ মার্ক এড়াতে ওজন বাড়াতেই হবে। অন্তত ২৫ পাউন্ড বা ১০ থেকে ১২ কেজি। আর ওজন না বাড়ালে বেবির ওজনও বাড়বে না।

প্র: এতে সমস্যা কমবে?

উ: অনেকটা। ত্বককে আর্দ্র রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। কোকো বাটার ক্রিম, অলিভ অয়েল মাখবেন। প্রচুর জল খেতে হবে। তবে বাজারে স্ট্রেচ মার্ক কমানোর জন্য যে সব ক্রিম পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার না করাই ভাল।

প্রেগন্যান্সির পর এই দাগ হালকা হয়ে আসে। তাতে সন্তুষ্ট না হলে ত্বক বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে।

প্র: অনেকের শুনি প্রেগন্যান্সির সময় মুখে কালো দাগ পড়ে। দেখতে অনেকটা মুখোশের মতো লাগে। সৌন্দর্যের এক্বেবারে দফারফা ...।

উ: একে বলে ক্লোআজমা। ত্বকের রং গাঢ় হলে এ ধরনের কালো দাগ বেশি হয়। ঠোঁটের ওপর, নাক, গাল, কপালে এ ধরনের দাগ হয়। পরিবারে অন্য কারও প্রেগন্যান্সির সময় এ রকম কালো দাগ হলে আপনারও হতে পারে।

প্র: দাগ থেকে রেহাই পাব কী করে?

উ: ত্বকের যে অংশে সূর্যালোক সরাসরি পৌঁছয়, সেখানে এ ধরনের দাগ বেশি হয়। তাই সরাসরি সূর্যালোক কম লাগাতে হবে। সানস্ক্রিন মেখে তবেই বাইরে বেরোবেন। রোদ না থাকলেও সানস্ক্রিন মেখে বেরোবেন। ফুলহাতা জামা পরবেন। টুপি ব্যবহার করতে পারেন। ডেলিভারির পরও এই সানস্ক্রিন মাখা থামাবেন না।

প্র: ডেলিভারির পর কি কমে যাবে?

উ: প্রেগন্যান্সিতে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য এমনটা হয়। যার ফলে মেলানিন বেড়ে গিয়ে ত্বক কালো হয়ে যায়। ডেলিভারির কয়েক মাসের মধ্যে এই সব দাগ হালকা হয়ে আসে। যদি দেখেন কমছে না, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে হবে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে এই পিগমেন্টেশন অন্য কোনও রোগের কারণ হতে পারে। তাই ত্বকে যদি ব্যথা, লালচে ভাব, বা রক্তপাত হয়, বা ত্বকের রং যদি পরিবর্তিত হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।

যোগাযোগ-৯৮৩০৭৭৭৬৩৬

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

stretch marks operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE