Advertisement
E-Paper

মনের আকাশে এক পশলা সন্দেহ

সন্দেহ কখন মানসিক রোগ, কতটুকুই বা সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর? তার উত্তর দিচ্ছেন সোহিনী দাসসন্দেহ কখন মানসিক রোগ, কতটুকুই বা সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর? তার উত্তর দিচ্ছেন সোহিনী দাস

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:২০

কলেজের পাগলাঝোরা প্রণয় বিয়ের দু’বছর কাটতে না কাটতেই বদলাচ্ছে। কী ভাবে যেন সংসারের ফাঁক গলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রেম। প্রতিদিনের সংসারের হাজার ঠেলা সামলাতে সামলাতে একে অপরের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছি না তো...

আজ্ঞে হ্যাঁ। ওখানেই সূত্রপাত। আকর্ষণ হারানোর ভয়, পুরনো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই জন্ম দেয় সম্পর্কের মধ্যে বিঁধে থাকা সন্দেহ নামে বিষ-কাঁটার। পরবর্তী কালে যার বিষবৃক্ষ হওয়ার ভয় প্রবল।

ধাঁধার থেকেও জটিল তুমি

মনোবিদদের মতে, সব সন্দেহই যে অমূলক এমনটা নয়। এক ছাদের তলায় থেকেও বদলে যেতে পারেন সঙ্গীটি। আসুন, চিনে নিই তারই কয়েকটা সফট সাইন...

• হঠাৎ করেই খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঠোকাঠুকি লেগে যাচ্ছে। এত দিন যে ছোটখাটো বিষয়গুলো নজরেই পড়ত না, তা হচ্ছে ঝগড়ার কারণ।

• আবেদন হারাচ্ছে শরীর।

• বদলে যাচ্ছে আচার-আচরণও।

তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে

যুগটাই নেটিজেনদের। মুঠোয় মোবাইল আর তাতে রংচঙে পৃথিবীর ডাক। প্রতিদিন হাজারটা প্রলোভন দেখায় সোশ্যাল মিডিয়া। আর সেখানেই ঘাপটি মেরে থাকে যত ভুল আর সন্দেহ।

লক্ষণ কী কী?

হঠাৎ করেই সঙ্গীর হয়তো বেড়ে গিয়েছে ফোন নিয়ে ব্যস্ততা। জটিল হচ্ছে লক-প্যাটার্ন। ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ার পিছনেই হয়তো বেশির ভাগ সময় ব্যয় করছেন তিনি। সঙ্গীকে গোপন করে চলছে কথা কিংবা মেসেজ চালাচালিও।

সন্দেহ সত্যি হলে কী করব?

ঝগড়া, কান্নাকাটি, ইমোশনাল অত্যাচার! একেবারেই নয়। আলোচনার পথে এগোন। অসুবিধের কথা জানুন এবং জানান। যদি মনে হয়, উল্টো দিকের মানুষটির সন্দেহ অমূলক, তাঁকে প্রমাণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। বড়দের মতামত নিন। প্রয়োজনে ম্যারেজ কাউন্সিলার বা মনোবিদের সাহায্য নিন। হয়তো সামান্য যোগাযোগের ভুলেই এত কিছু। আর যদি বুঝতেই পারেন সঙ্গীটির চাওয়া বা পাওয়া একান্ত ভাবেই অন্য কোথাও—জোরাজুরি করবেন না। সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকতে থাকতে বেরিয়ে আসুন।

পরিসংখ্যান বলছে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সন্দেহপ্রবণতা বেশি। বিশেষত, যারা হোমমেকার তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বেশি দেখা যায়। হয়তো পারিবারিক চাপ, বাচ্চাদের বড় করা, এমন হাজারো দায়িত্বের মধ্যে জড়িয়ে থাকতে থাকতে কোথাও একা হয়ে পড়ছেন মানুষটি। তার থেকেই কোথাও জন্ম হচ্ছে ভিতরে সন্দেহপ্রবণতার।

তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্দেহ প্রবণতার জন্ম অধিকারবোধ থেকে। আর এ ব্যপারে ছেলেদের টেক্কা দেওয়াও মুশকিল। মনোবিদরা মনে করছেন, অতিরিক্ত অধিকারবোধ বা পজেসিভনেসও আসলে সন্দেহপ্রবণতারই প্রথম ধাপ।

কতটা পথ পেরোলে পরে

কিন্তু কতটুকু সন্দেহ সম্পর্কের জন্য স্বাস্থ্যকর, বুঝে নিতে হবে সেটাও। অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতাও কিন্তু এক ধরনের মানসিক রোগ। l ডিপ্রেশন বা অবসাদের থেকেও আসতে পারে সন্দেহপ্রবণতা। দীর্ঘদিনের ডিপ্রেশন হ্যালুসিনেশন তৈরি করে। যার থেকে মন ভাবতে শুরু করে, হয়তো সঙ্গী অন্যত্র
জড়িয়ে পড়েছে। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে ‘ইলিউশন অফ ইনসিবেলিটি’। ডিপ্রেশন ছাড়াও স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, অ্যালঝাইমার্স, এই ধরনের অসুস্থতার ক্ষেত্রেও দেখা যেতে পারে সন্দেহপ্রবণতা।

• অতিরিক্ত মাদকাসক্তি থেকেও আসে সন্দেহপ্রবণতা। যৌন অতৃপ্তি থেকেও সন্দেহের জন্ম হয়।

ভালবাসারই অংশ আসলে সন্দেহপ্রবণতা। তবে ওই যে বুঝে নিতে হবে, কতখানি অবধি তা খুনসুটি আর কত দূর গেলে তা বাতিক। পাশাপাশি, উল্টো দিকের মানুষটির মনেও যাতে অকারণ সন্দেহ না জন্মায়, সেই ভরসা ও বিশ্বাসের জায়গাটুকু তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্বও কিন্তু আমাদেরই। আর কে না জানে, জীবনটাও আসলে একটা ব্যালান্সেরই খেলা।

তথ্য সহায়তা: ড. সব্যসাচী মিত্র

মডেল: তৃণা, অনমিত্র

মেকআপ: জিতেন্দ্র মাহাতো, পোশাক: বহুরূপী (তৃণা), লোকেশন: আইভি হাউস, ছবি: দেবর্ষি সরকার

Relationship Doubt Mental Illness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy