Advertisement
E-Paper

রামকিঙ্করের প্রতি এ এক অনন্য স্মরণ

ফার্ন রোডে দেবভাষার আস্তানায় শিল্প-সংস্কৃতির এক ব্যাপক আয়োজনে সম্প্রতি হয়ে গেল ‘রামকিঙ্কর উৎসব ১৪২৫’ নামে একটি প্রদর্শনী।

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০৭:১০
মার্জারকুল: শিল্পী কালীকিঙ্কর ঘোষ দস্তিদারের কাজ। সম্প্রতি, ‘রামকিঙ্কর উৎসব ১৪২৫’-এর প্রদর্শনীতে

মার্জারকুল: শিল্পী কালীকিঙ্কর ঘোষ দস্তিদারের কাজ। সম্প্রতি, ‘রামকিঙ্কর উৎসব ১৪২৫’-এর প্রদর্শনীতে

দেবভাষা। শুধু গ্রন্থ প্রকাশের উদ্দেশ্য নয়, শিল্পকলার বিবিধ কর্মসূচিকে কত ভাবে কাজে লাগানো যায়, বহু দিন ধরে সে প্রয়াস করে আসছেন তাঁরা। দুই উদ্যোগী যুবক গ্রন্থ ও শিল্পকলাকে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে দিয়ে একের পর এক প্রদর্শনী, আলোচনাসভা, শিল্পী-ভাস্করদের চমৎকার সব বই প্রকাশ, তাঁদের মূল শিল্পকৃতির একটি মাত্র কপি হিসেবে ক্যালেন্ডার প্রকাশ, শিল্পীদের সাক্ষাৎকারকে মুদ্রণাকারে বইয়ের রূপ দেওয়া, প্রাতঃস্মরণীয় ভারতীয় শিল্পীদের কাজ নিয়ে নতুন নতুন প্রদর্শনীর পরিকল্পনা, কবি ও গদ্যকারদের সুচিন্তিত বিষয়ের নানান বই প্রকাশ— অনেক কিছুই চোখে দেখে আশ্চর্য হতে হয়। ফার্ন রোডে দেবভাষার আস্তানায় শিল্প-সংস্কৃতির এক ব্যাপক আয়োজনে সম্প্রতি হয়ে গেল ‘রামকিঙ্কর উৎসব ১৪২৫’ নামে একটি প্রদর্শনী।

দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসে কে জি সুব্রহ্মণ্যন কক্ষে রামকিঙ্করকে উৎসর্গীকৃত ‘লিভিং ট্র্যাডিশন’ নামের প্রদর্শনীতে দেখা গেল নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ, সুধীর খাস্তগীর, ফুয়া হারিবিতাক, পরিতোষ সেন, সোমনাথ হোর, কে জি সুব্রহ্মণ্যন, কালীকিঙ্কর ঘোষ দস্তিদার, বিকাশ দেবনাথ, তান চুং, দিনকর কৌশিক ও ইন্দ্র দুগারের মোট ১৮টি কাজ। এই অসামান্য প্রদর্শনীর ছবি সংগ্রাহক সুশোভন অধিকারী, পরিমল গোস্বামী বিকাশ দেবনাথ, ইন্দ্র দুগারের পরিবার ছাড়াও দেবভাষার নিজস্ব সংগ্রহ।

এঁদের মধ্যে ফুয়া হারিবিতাক থাইল্যান্ডের জাতীয় শিল্পী। নন্দলাল বসুর অধীনে কলাভবনে তিনি কাজ শেখেন। ওঁর মোটা কলমের আঁচড়ে করা মা ও ছেলের ড্রয়িংয়ে কোথাও সামান্য ঘষামাজা করেছেন। অন্য কাজটি শুধু কলমে অতি সংক্ষিপ্ত কিছু রেখার টানে করা ল্যান্ডস্কেপ।

শিল্পী তান চুং শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন ১৯৩০-এর পর। প্রায় পঞ্চাশ বছর ছিলেন। কাজ করতেন এক নাগাড়ে। প্রদর্শনীতে ওঁর একটি অসাধারণ চৈনিক নিসর্গের ছবি ছিল, মনোরম নরম বর্ণচ্ছায়ার জলরং।

রামকিঙ্করের তিনটি ছোট কাজ এ প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ। নিজের বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘যক্ষ ও যক্ষী’র অজস্র ড্রয়িং করেছিলেন তিনি। এখানে অমনই একটি ছোট ড্রয়িং (কিংবা লে আউট বলা যাক) দেখা গেল। কাজটি উপভোগ্য। অন্য একটি ড্রয়িং ও শিল্পীর সই করা একটি গ্রাফিক্স (প্রিন্ট)।

সুধীর খাস্তগীর টেম্পারায় কাজ করেছিলেন। বেশ ভাল কাজ। এঁর কাজ খুব বেশি জনের সংগ্রহে নেই। থাকলেও খুব একটা প্রকাশিত নয়।

নন্দলাল বসুর যে কাজটি প্রদর্শিত ছিল সেটি টেম্পারা। চল্লিশের দশকে এক ইংরেজি দৈনিক বড় করে প্রকাশ করে। সেই কাজটির একটি ছোট প্রিন্ট সই করে নন্দলাল এক জনকে উপহার দেন ১৯৪৫ সালে। ছবিটি নন্দলাল এঁকেছিলেন ২৯ নভেম্বর, ১৯৩৮-এ। ‘বুদ্ধ’ নামের ছবিটির কোণে তারিখ উল্লেখ করেছিলেন শিল্পী। সেটিই এখানে রাখা ছিল।

১৯৭৭ সালে আঁকা সাদা-কালো রঙের এক রূপসীর ছবির শিল্পী পরিতোষ সেন। যেন সামান্য কিছু টানটোনের আশ্চর্য গভীরতা থেকে উঠে আসা এই নারীর ছবিটি দেবভাষার নিজস্ব সংগ্রহ।

খুব সামান্য রং, জলের ভাগ বেশি। কালো, হলদে, খয়েরি তুলির পোঁচে ও লালচে খয়েরি স্কেচ পেনের সরু লাইনে দিনকর কৌশিক এঁকেছিলেন এক জন মগ্ন পাঠক মাটিতে বসে বই পড়ছেন। নয়ন ভোলানো অসাধারণ কাজ!

ইন্দ্র দুগারের পরিচিত নিসর্গদৃশ্য জলরঙের। বহু বছর আগের কোনও একটি শারদীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল কালীকিঙ্কর ঘোষ দস্তিদারের আঁকা দুর্গার ছবি। সেটি এখানে প্রদর্শিত। টেম্পারায় করা। অন্যটি পারিবারিক একটি পত্রিকার জন্য এঁকেছিলেন ১৭টি বেড়ালের অদ্ভুত সব ভঙ্গি। দুর্দান্ত সচিত্রকরণ যেন। নিউজ প্রিন্টে কালো শুকনো কালি-তুলির ড্রয়িং।

কে জি সুব্রহ্মণ্যনের পাঁচটি কাজ। মৃত্যুর ৩-৪ মাস আগে করা ছোট একটি কাজ ছিল। সই করা রঙিন প্রিন্ট ছাড়াও, আসল কাজ দু’টি সাদা-কালো পাখি নিয়ে করা চমৎকার ড্রয়িং। বিকাশ দেবনাথের ব্রোঞ্জ কাস্টিংয়ে করা একটি কাঁকড়া ও সোমনাথ হোরের গেরুয়া কাগজে করা ভাস্কর্য গুণান্বিত অসামান্য একটি ছোট ড্রয়িং এই প্রদর্শনীর গৌরব।

অতনু বসু

মণিপুরের মূর্ছনায়

সম্প্রতি জওহরলাল নেহরু মণিপুর ডান্স অ্যাকাডেমি এবং মৈতৈ জগোই কলকাতা-র যৌথ পরিবেশনায় ‘কুরঙ্গনয়নী’ নৃত্যনাট্যটি পরিবেশিত হল আইসিসিআর-এ।

সপ্তদশ শতকে বর্মার সৈন্য মণিপুর আক্রমণ করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই রচিত এই নৃত্যনাট্যে মণিপুর রাজার বীর ও দুঃসাহসী কন্যা কুরঙ্গনয়নী এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওঁর সঙ্গে অসমের বাহিনীও যৌথ ভাবে লড়াই করে লাটাকাটার যুদ্ধে বর্মা বাহিনীকে পরাস্ত করে। শেষত রাজা জয়সিংহ মণিপুরের সিংহাসন ফিরে পান এবং অহমরাজের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কুরঙ্গনয়নী।মণিপুরী নৃত্য ও সমসাময়িক নৃত্যের মাধ্যমে চাওতোম্বি সিংহের নৃত্য পরিকল্পনা দর্শকের মন ছুঁয়ে গিয়েছে। কুরঙ্গনয়নীর নামভূমিকায় জি চন্দন দেবী তাঁর অপূর্ব নৃত্য ও অভিনয় মাধ্যমে চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। তাঁকে সাধুবাদ জানাই।

দলগত নৃত্যে প্রত্যেকেই প্রশংসার দাবি রাখেন। এ ছাড়া আবহসঙ্গীতে আইবোপিসাক সিংহ, মঞ্চসজ্জায় জিতেন সিংহ ও পোশাক পরিকল্পনায় এল শরৎ সিংহ তাঁদের কর্মক্ষেত্রে যথাযথ। কুরঙ্গনয়নীর কাহিনিবিন্যাস করেছেন মৈতে জগোই-এর কর্ণধার দেবযানী চালিহা। সুন্দর একটি কাহিনি রচনার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।

পলি গুহ

রবীন্দ্রসন্ধ্যায় শিল্পীর উপস্থাপনা

সম্প্রতি বৈতানিক আয়োজিত সান্ধ্য এক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করলেন শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায়। শিল্পীর পরিশীলিত কণ্ঠে পরিবেশিত হল ‘ওহে সুন্দর মম গৃহে আজি’ শিরোনামে ১৫টি গান। দীর্ঘ তালিকায় ছিল ৭টি পূজা, ৭টি প্রেম এবং ১টি প্রকৃতি পর্যায়ের গান। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ‘আমার মাথা নত করে দাও’ গানটির মধ্য দিয়ে। এর পর একে একে পরিবেশিত হয় ‘ওহে সুন্দর মম গৃহে’, ‘হেথা যে গান গাইতে আসা’, ‘তুমি একটু কেবল বসতে দিও’, ‘তোমায় গান শোনাব’, ‘আমি আছি তোমার সভার’, ‘আমার মনের মাঝে’, ‘আকাশ জুড়ে শুনিনু’, ‘দিনের বেলায় বাঁশি তোমার’, ‘মধ্যদিনের বিজন বাতায়নে’, ‘আমার নয়ন তব নয়নের’, ‘আমার মনের কোণের বাইরে’, ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ’, ‘ওহে সুন্দর মরি মরি’ ইত্যাদি গানগুলি। অনুষ্ঠানের শেষ গান ‘আমার এই রিক্ত ডালি’। গানগুলি যে কোনও নির্দিষ্ট সূত্রে গ্রথিত হয়েছিল, তা নয়। বরং এগুলি মূলত শিল্পীর ব্যক্তিগত ভাবনার প্রকাশ। তালিকা দেখলেই যা অনুমিত হয়। সুর-তাল-লয় বজায় রেখে গাইলেও গানগুলিতে প্রাণের অভাব লক্ষণীয়। এমনকী, শেষ ক’টি গানে শিল্পীর কণ্ঠে ক্লান্তির ছাপও স্পষ্ট। এ বিষয়ে আর একটি কথা না বললেই নয়। রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশনের ক্ষেত্রে সুরের শুদ্ধতা বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। সে দিকে শিল্পীর আরও যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। ফলে সব মিলিয়ে যেন আরও বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয়েছে।

তবে তারই মধ্যে ভাল লাগে ‘আমার মাথা নত করে দাও’, ‘তোমায় গান শোনাব’, ‘আমার নয়ন তব নয়নের’ গানগুলি। প্রতিটি গানের মাঝে ছিল ভাষ্য, যা লিখেছেন প্রফুল্লকুমার দে ও পাঠ করেছেন চিত্রা সেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, শব্দ প্রক্ষেপণ যন্ত্রের অসহযোগিতার জন্য তার কিছুই প্রায় শোনা যায়নি। বিপ্লব মণ্ডল এবং অঞ্জন বসুর সহযোগিতা যথাযথ হলেও তানপুরার অভাব খুবই অনুভূত হচ্ছিল। শব্দ প্রক্ষেপণ ছিল অত্যন্ত দুর্বল।

কাশীনাথ রায়

অনুষ্ঠান

সম্প্রতি দ্য হারমোনাইজারস এবং ডা. ববিতা বসু আয়োজন করলেন ‘কবির সুরে সুর মেলাতে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এটি উপস্থাপিত হয়েছিল ইন্দুমতী সভাগৃহে। এ দিন অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা সকলেই হারমোনিকায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বাজিয়ে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অংশগ্রহণ করেন অনুপম পাল, ভাস্কর চৌধুরী, স্বরূপ মিত্র, সুমন্ত বসু, গৌরব দাস, মন্দিরা ঘোষ প্রমুখ। ডা. ববিতা বসু নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র একটি গান এবং ‘চণ্ডালিকার’ একটি অংশবিশেষ তুলে ধরেন। রানা দত্তের পরিচালনায় পলাশ মুখোপাধ্যায়, শুভজ্যোতি দত্ত, বিশ্বনাথ সাহা এবং টিটো দত্ত যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। গোটা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শাশ্বতী দত্ত।

Ramkinkar Baij রামকিঙ্কর উৎসব ১৪২৫
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy