Advertisement
E-Paper

হার মানবে না হাড়

ভিটামিনের অভাব এবং সূর্যরশ্মি পর্যাপ্ত না পাওয়ার কারণে এটা হয়ে থাকে। মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার হলে হাড় ক্রমশ নরম হয়ে যায়। হাড়ের ভিতরে ছোট ছোট ফ্র্যাকচার তৈরি হতে পারে।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০

আমরা চোখ, হার্ট, কি়ডনি বা পেটের সমস্যাকে যতটা গুরুত্ব দিই, হয়তো ঠিক ততটাই এড়িয়ে চলি হাড়ের সমস্যাকে। ভুলে যাই হাড়েরও যত্ন নেওয়া উচিত। ওটাই আমাদের শরীরের কাঠামো। সেখানে কোনও সমস্যা হলে পুরো শরীরটাই অকেজো হয়ে যেতে পারে।

অনেকে ভাবেন, হাড়ের সমস্যা বয়স্কদেরই হয়। একেবারেই ভুল ধারণা। এই সমস্যা সদ্যোজাতেরও থাকতে পারে। শিশু বয়সে কিছু হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। সাধারণত ২৫ বছর বয়সে আমাদের স্কেলিটন পুরোপুরি ম্যাচিয়োর করে। তার পর থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত হাড়ের নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু সময় থাকতে যত্ন নিলে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওম্যালেশিয়া, রিউমাটয়ে়ড আর্থ্রাইটিস, স্পনডিলোসিস— এগুলো এখন আকছার শুনতে পাওয়া যায়। ২৫ বছর থেকে বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত নারী-পুরুষের হাড় ও জয়েন্টের সমস্যা এবং কী ভাবে চললে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত সুস্থ থাকা যায়, তা এক বার দেখে নেওয়া যাক—

যে সমস্যাগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায়

ইনফেকশন এবং আঘাতজনিত সমস্যা। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগই একমাত্র উপায়। অনেক সময়ে ছোটবেলায় হওয়া হাড়ের ইনফেকশন সেই সময়ে সেরে গেলেও পরিণত বয়সে ফের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার আর একটি সমস্যা। ভিটামিনের অভাব এবং সূর্যরশ্মি পর্যাপ্ত না পাওয়ার কারণে এটা হয়ে থাকে। মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার হলে হাড় ক্রমশ নরম হয়ে যায়। হাড়ের ভিতরে ছোট ছোট ফ্র্যাকচার তৈরি হতে পারে। অর্থোপেডিক সার্জন ড. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এগুলো আমরা এমনিতে বুঝতে পারব না। নেগলেক্ট করলে ভবিষ্যতে জানান দেবে।’’ দীর্ঘ দিন ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডে ভুগলেও হাড়ের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

অস্টিওপোরোসিস এবং অস্টিওম্যালেশিয়া আর একটি সমস্যা। প্রথমটি বয়স্কদের হয়, দ্বিতীয়টি কমবয়সিদের মধ্যে দেখা যায়। এতে হাড় নরম হয়ে যাওয়া, মাঝখান থেকে ক্ষয়ে যাওয়া, সামান্য কারণেই ফ্র্যাকচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কমবয়সিদের হয়তো হা়ড় ক্ষয়ে যায় না। কিন্তু বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানালেন ড. মুখোপাধ্যায়।

স্পনডিলোসিস, ইনফ্ল্যামেটারি আর্থ্রাইটিস থেকেও হাড়, জয়েন্টের সমস্যা হয়। রিউমাটিক ফিভার থ্রোটের সমস্যা থেকেও একই জিনিস হয়।

সুস্থ থাকার উপায়

হাড় ভাল রাখার গো়ড়ার কথা হল, যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন ডি খাওয়া। দুধ, ছানা, দই, বিভিন্ন ধরনের ডাল, আনাজ, ফল রোজকার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। সব বয়সের পুরুষ-মহিলার ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। ‘‘চেহারা ভারী হলে কার্বোহাইড্রেট কম খেতে হবে। যাঁরা ঘোরাঘুরি করে কাজ করেন আর যাঁরা বসে কাজ করেন, তাঁদের ডায়েটের ধরন কিন্তু আলাদা,’’ মত ড. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ের।

সূর্যরশ্মি থেকে আমরা ভিটামিন ডি পাই, যেটা আমাদের শরীরের পক্ষে ভীষণ জরুরি। ড. মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আগে বাচ্চাদের তেল মাখিয়ে রোদে রেখে দেওয়া হত। এটা খুব জরুরি। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন অন্তত পঁয়তাল্লিশ মিনিট করে সূর্যের আলোয় থাকতে পারলে ভাল। খেয়াল রাখবেন, দেহের ৩০ শতাংশ যেন খোলা থাকে।’’

শরীরে মেদ জমতে দেওয়া যাবে না। মোটা চেহারা মানেই কোমর, শিরদাঁড়া, হাঁটুতে চাপ বাড়বে। ‘‘প্রাণায়াম, হাঁটা, যোগাসন করে রোগা থাকার চেষ্টা করুন। পার্কে হাঁটতে যেতে পারেন। শরীরে আর কোনও সমস্যা না থাকলে বয়স্ক মানুষেরাও জগিং করতে বা দৌড়তে পারেন,’’ পরামর্শ ড. মুখোপাধ্যায়ের।

অফিসে যাঁরা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন, তাঁরা সতর্ক হন। এতে স্পনডিলোসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চেহারা ভারী হলে সমস্যা আরও কঠিন হবে। যাতে পিঠ-ঘাড় রেস্টে থাকে, সেই রকম চেয়ারে বসুন। কিছুক্ষণ অন্তর উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। পিঠের মাসলের স্ট্রেংথ বাড়ানোর এক্সারসাইজ়ের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

মহিলারা খেয়াল রাখুন

দেখা যায়, হাড়ের সমস্যায় পুরুষদের চেয়ে মহিলারাই বেশি ভোগেন। সাধারণত চল্লিশের পর থেকেই মহিলাদের কোমর, হাঁটুতে নানা রকম বিপত্তি দেখা যায়। বাড়ি, সন্তান, চাকরি সব কিছু সামলাতে গিয়ে খাওয়াদাওয়ার প্রতি যত্ন নেওয়া হয় না। খাদ্য তালিকায় ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার রাখুন। দরকার হলে সাপ্লিমেন্ট নিন। যাঁদের চেহারা ভারী, তাঁরা বাড়িতে ছাদ- বাগান থাকলে বা নিদেনপক্ষে বারান্দায় বসে প্রাণায়াম-যোগাসন করতে পারেন। এতে গায়ে রোদও লাগবে, এক্সারসাইজ়ও হবে। যাঁরা রোগা, তাঁরাও এগুলো করুন। সুস্থ থাকবেন। যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন, তাঁদের ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। ব্রেস্ট ফিডের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকেই বাচ্চা প্রয়োজনীয় ক্যালশিয়াম পাবে।

কিছু ধারণা ও তার সত্যতা

রোদে বেরোলেই সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি নয়। ‘‘গায়ে রোদ লাগাটাও জরুরি। সূর্যরশ্মি থেকে যাঁদের অ্যালার্জি হয়, একমাত্র তাঁরাই সানস্ক্রিন লাগাবেন। মর্নিং ওয়াকের সময়ে সানস্ক্রিন লাগানোর কোনও প্রয়োজন নেই,’’ বলছেন ড. মুখোপাধ্যায়।

ব্যথা যন্ত্রণায় ঠান্ডা না কি গরম— কোন সেঁক দেওয়া উচিত, তা নিয়ে আমরা দ্বিধায় ভুগি। আঘাত লেগে যদি মচকে যায় বা ভেঙে যায়, তা হলে সেখানে বরফ বা আইস প্যাক দেওয়া উচিত। জয়েন্ট পেন হলেও ঠান্ডা সেঁক। ধরুন, ঘুম থেকে উঠে দেখলেন ঘাড়ে ব্যথা করছে বা খটকা লেগে গিয়েছে, সেখানে গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। গরম সেঁক দিলে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে ব্যথার জায়গায় আরাম হয়।

এখন বা়ড়িতে বাড়িতে মাসাজের চল। প্রশিক্ষিত ফিজ়িওথেরাপিস্ট দিয়ে মাসাজ করালে ঠিক আছে। ‘‘মাসাজে সকলেরই আরাম লাগে। কিন্তু তাতে হাড় বা জয়েন্টের সমস্যায় লাভ-ক্ষতি কিছু হয় না। মাসাজে মাসলগুলো রিল্যাক্সড হয়ে যায়, এই পর্যন্তই। এতে আপত্তিকর কিছু নেই। তবে ওই ঘাড় ধরে ঘুরিয়ে দেওয়া-টেওয়া যেন না করা হয়,’’ বক্তব্য ড. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ের। এক্সারসাইজ় করলে মাসল এমনিই টোনড থাকবে। হাড়-জয়েন্ট ভাল রাখার জন্য এক্সারসাইজ়ের কোনও বিকল্প নেই।

Lifestyle Diet Osteology
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy